ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | কাবুলে আছেন ৯ বাংলাদেশি, ৭ জনের খবর মিলেছে

কাবুলে আছেন ৯ বাংলাদেশি, ৭ জনের খবর মিলেছে

কাবুলে পাহারায় এক নিরাপত্তা রক্ষী, যদিও রাজধানী ঘিরে ফেলার পর ঢুকেও পড়েছে তালেবান। ছবি: রয়টার্স

নিউজ ডেক্স : তালেবানের কব্জায় যাওয়া আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে এখন পর্যন্ত ৯ বাংলাদেশি থাকার তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস। এদের মধ্যে ছয়জন ব্র্যাকের কর্মী। আর তিনজন রয়েছেন কাবুলের কারাগারে।

আফগানিস্তানে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে থাকা জাহাঙ্গীর আলম রোববার সন্ধ্যা ৭টায় জানান, ব্র্যাকের ছয় কর্মী সংস্থার আবাসিক পরিচালকের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। -বিডিনিউজ

যে কারাগারে তিনজন বাংলাদেশি ছিলেন, তালেবান যোদ্ধারা তা ভেঙে সেখানে ঢুকে পড়েছে। বন্দি এক বাংলাদেশি ছাড়া পেয়ে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলে জানান জাহাঙ্গীর।

আফগানিস্তানে বাংলাদেশের দূতাবাস নেই। উজবেকিস্তানে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত জাহাঙ্গীর আলম একসঙ্গে আফগানিস্তান, কিরগিজস্তান ও তাজিকিস্তানে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে আছেন।

ব্র্যাকের কর্মীদের বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “যারা আছেন তাদের সিনিয়র ঢাকা জেলার করিম শিকদার, তার সঙ্গে কথা হয়েছে। উনারা চেষ্টা করছেন ১৮ তারিখের ফ্লাইটে বাংলাদেশে ফিরে আসতে।”

বাকি পাঁচজন হলেন- রংপুরের আসাদুজ্জামান, ঢাকার মোহাম্মদ সরফরাজ, যশোরের কামাল হোসেন, ফরিদপুর রফিকুল হক মৃধা ও নোয়াখালীর ইউসুফ হোসেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, কাবুলে পুল এ চরকি নামে একটি বড় জেলখানা আছে, সেখানে তিনজন বাংলাদেশি ছিল।একজন মঈন আল মেসবাহ, খুলনা জেলার।

“তালেবান ভেঙে প্রবেশ করার ফলে কয়েদিরা সব পালিয়ে গেছেন। তার মধ্যে আমাদের মঈন আল মেসবাহও আছেন।” অন্য দুজন বন্দি হলেন- ঢাকার ভাসানটেকের কাউছার সুলতানা ও নোয়াখালীর ওবায়দুল্লাহ। “এরা ভেতর থেকে বের হতে পেরেছে কি না, আমরা শিওর হতে পারিনি। এটা জানার চেষ্টা চালাচ্ছি,” বলেন রাষ্ট্রদূত জাহাঙ্গীর।

তিনি বলেন, “যে একজন বের হতে সক্ষম হয়েছে, তাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যাতে তালেবানের সাথে দেখা সাক্ষাৎ না হয় এবং পরবর্তী এভেইলেভল ফ্লাইটে ফিরে আসে।”

যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য প্রত্যাহারের পর দুই দশক বাদে আবারও আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ প্রায় নিয়ে ফেলেছে কট্টর ইসলামী দল তালেবান। কাবুল ঘিরে ফেলেছে তারা। দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি পালিয়েছেন বলে খবর এসেছে।

আফগানিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত জাহাঙ্গীর বলেন, “বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, সম্ভবত শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের চেষ্টা চলছে। প্রেসিডেন্ট হয়ত রিজাইন করতে পারেন।

“তালেবানের যে লিডার আব্দুল গণি বারাদার, তার সম্ভাবনা আছে আছে নেতা হিসাবে আসতে পারে। অসমর্থিত খবরে জানা যাচ্ছে আর কি।”

জালালবাদ শহর দখলের পর টহলে তালেবান যোদ্ধারা। ছবি: রয়টার্স
জালালবাদ শহর দখলের পর টহলে তালেবান যোদ্ধারা। ছবি: রয়টার্স

আফগান সরকারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার সুযোগ এখন না থাকায় বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করে তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত।

“নিউজ কালেক্ট করা দুরূহ হচ্ছে। সরকারের কর্তৃত্ব নাই তো। আমি একজন মানবাধিকার নেত্রীর মাধ্যমে তথ্য নেওয়ার চেষ্টা করছি। আবার তার ওখানে বিদ্যুৎ না থাকায় উনি আমার সাথে লাইনে আসতে পারছেন না, যোগাযোগও সম্ভব হয়ে উঠছে না।”

কাবুলের বাইরে অন্য এলাকায় বাংলাদেশি আছে কি না, তা নিশ্চিত নন রাষ্ট্রদূত। “ইতোমধ্যে হটলাইনও চালু করে দিয়েছি। দুটা মোবাইল নাম্বার। সরকারের কাছেও পাঠিয়ে দিয়েছি, যদি কোনো তথ্য পাওয়া যায়, তাদের মোবাইল নম্বর দুটি যেন দেওয়া হয়।”

হটলাইন নম্বর দুটি হল- +৯৯৮-৯৯৯১১৯১০২ এবং +৯৯৮-৯৭৪৪০২২০১।

জাহাঙ্গীর বলেন, “ব্র্যাকের মাধ্যমেও জানার চেষ্টা করছি। তাদের জানামতে কাবুল শহরের তাদের আর কেউ নাই। অন্য শহরগুলোতে আছে কি না, ক্লিয়ারলি বলতে পারে নাই।”

শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, আফগানিস্তানের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিয়েছে তারা।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই এনজিওটির শামেরান আবেদ বলেন, “আফগানিস্তানে কর্মরত কর্মীদের ঝুঁকি নিরসন করে তাদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল।”

গত ১৯ বছরের বেশি সময় ধরে আফগানিস্তানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কমিউনিটি উন্নয়ন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সংক্রান্ত সহায়তা, মানবিক সহায়তা এবং খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাজ করে আসছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ এনজিও ব্র্যাক। ছবি: ব্র্যাক
গত ১৯ বছরের বেশি সময় ধরে আফগানিস্তানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কমিউনিটি উন্নয়ন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সংক্রান্ত সহায়তা, মানবিক সহায়তা এবং খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাজ করে আসছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ এনজিও ব্র্যাক। ছবি: ব্র্যাক

গত ১৯ বছরের বেশি সময় ধরে দেশটিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কমিউনিটি উন্নয়ন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সংক্রান্ত সহায়তা, মানবিক সহায়তা এবং খাদ্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত সেবা দিয়ে আসছে ব্র্যাক ইন্টারন্যাশনাল।

দেশটির ১০টি প্রদেশে প্রায় তিন হাজার ব্র্যাক কর্মী কাজ করছেন। এদের মধ্যে ১২ জন বাংলাদেশিসহ প্রবাসী ১৪ জনকে নিজ নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। প্রবাসী কর্মীদের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশিসহ ৫ জন ছুটিতে দেশটির বাইরে ছিলেন, যাদের আফগানিস্তান ফিরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।

বাকি নয়জন বাংলাদেশির মধ্যে তিনজন দেশটি থেকে শুক্রবার বিমানযোগে রওনা দিয়েছেন এবং বাকি ৬ জনের আগামী ২২ তারিখের মধ্যে রওনা দেওয়ার কথা বলে জানায় ব্র্যাক।

সর্বশেষ পরিস্থিতি জানার জন্য রোববার যোগাযোগ করলে ব্র্যাক থেকে বলা হয়েছে, আগের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিই আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে তাদের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!