Home | উন্মুক্ত পাতা | এদেশের বুকে আঠারো এসেছে নেমে…

এদেশের বুকে আঠারো এসেছে নেমে…

162546styu6d6

সত্যজিৎ কাঞ্জিলাল : ‘আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ, স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি, আঠারো বছর বয়সেই অহরহ, বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি’- বিদ্রোহের কবি, বিপ্লবের কবি, প্রতিবাদের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তার এই বিখ্যাত কবিতার শেষে লিখেছিলেন ‘এদেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে…’। হ্যাঁ, আঠারো নেমে এসেছে বাংলাদেশে। গত চার দিন ধরে দেশের রাজপথগুলো দখল করে নিয়েছে আঠারো বয়সীরা।

তারা নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তা আটকে আন্দোলন করছে, আবার অ্যাম্বুল্যান্সকে পথ করে দিচ্ছে, পঙ্গু নারীকে রাস্তা পার করছে, অসুস্থ শিশু কোলে মাকে পাঠিয়ে দিচ্ছে হাসপাতালে! শুধু কি তাই? এই স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলে-মেয়েরা লাইসেন্স না পেলে বাস আটকে দিচ্ছে। লাইসেন্স ছাড়া পুলিশের গাড়ি আটকাচ্ছে। এমনকী সরকারের একজন মন্ত্রীর গাড়ি উল্টোপথে যাওয়ায় আটকা পড়তে হয়েছে।

এই কিশোররা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছে। সারি বেঁধে সুশৃঙ্খলভাবে রাস্তায় চলছে রিকশা। কোনো গাড়ি লাইসেন্স ছাড়া চলতে পারছে না। লাইসেন্স না পেলে অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে বাস ভাঙছে। আবার এই ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা নিজেরাই ভাঙা কাঁচ ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করছে। এই ছেলে-মেয়েরাই বুকে সাঁটানো প্ল্যাকার্ডে লিখেছে, ‘৫জি স্পিডের ইন্টারনেট চাই না, ৫জি স্পিডের বিচার ব্যবস্থা চাই!’

বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রতিটি বাঁকে বাঁকে রাজপথে নেমেছে তরুণরা। সর্বশেষ উদাহারণ হিসেবে শাহবাগ আন্দোলন থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলন। দুটি আন্দোলনই প্রাথমিক সফলতা পেলেও এক পর্যায়ে গিয়ে দিকভ্রান্ত হয়েছে। এবার নামল সুকান্তের আঠারো বয়সী কিশোররা। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কিশোর আন্দোলন এটি! ওরা রাজপথে নেমে যা যা করে দেখাচ্ছে, তাতে বিস্ময়ে হতবাক হওয়া ছাড়া কিছু করার নেই!

এত সৃজনশীল ওরা! এত নির্ভীক! এতটা মানবিক! এই আন্দোলনের কোনো নেতা নেই; কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতা নেই। আছে সাধারণ মানুষের সমর্থন আর ভালোবাসা। এদেশের ১৬ কোটি মানুষ চায় নিরাপদ সড়ক। সেই সড়ক নিরাপদ কীভাবে করা যায়, একেবারে হাতে কলমে সরকারকে দেখিয়ে দিয়েছে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা।

বাস চাপায় ওদের দুই বন্ধুর মৃত্যুর পর একজন মন্ত্রী হেসেছেন। এরপর আবার ক্ষমাও চেয়েছেন। শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগ দাবি করছে। ওদের আন্দোলনে প্রতিদিন হেঁটে হেঁটে অফিসে আসা-যাওয়া করছেন কর্মজীবিরা। কিন্তু তাদের মাঝে কোনো ক্ষোভ নেই। এই ছেলে-মেয়েদের দাবি মেনে নিয়ে তাদের ঘরে ফেরত পাঠানো সরকারের দায়িত্ব। ওরা কোনো অন্যায় দাবি করেনি। ওদের দাবিতে শুধু সাধারণ মানুষ নয়; সরকারের ও উপকার হবে।

এখন ওদের দাবি না মেনে হয়তো দমন করা হতে পারে। ইতিমধ্যেই পুলিশি আক্রমণ চালিয়ে এমন চেষ্টা হয়েছে। এতে সাময়িকভাবে তারা হয়তো রাস্তা ছাড়তে বাধ্য হবে। ছোট ছোট ছেলে-মেয়েগুলো আর কতটাই বা পারবে পুলিশের মার খেতে? কিন্তু, অদূর ভবিষ্যতে এই রাজপথে আবারও আঠারো আসবে নেমে….।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!