Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | আগামী সপ্তাহে শুরু হচ্ছে কর্ণফুলীর ড্রেজিং

আগামী সপ্তাহে শুরু হচ্ছে কর্ণফুলীর ড্রেজিং

kornofully-river-chaktai-kh1

নিউজ ডেক্স : দেড় বছরের বেশি সময় ধরে কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং শিগগিরই শুরু হচ্ছে বলে আসছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। অবশেষে অবসান হতে যাচ্ছে ‘হচ্ছে হবে বলে’ ঘটনার। কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং কার্যক্রম শুরুর জন্য গত শনিবার চুক্তি হয়েছে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর সাথে। চুক্তি স্বাক্ষরের ১৪ দিনের মধ্যে কাজ শুরুর কথাও বলা হয়েছে শর্তে। সেই হিসেবে আগামী ১৯ মে এর মধ্যে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হওয়ার কথা কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিংয়ের কাজ।

২৪২ কোটি টাকায় আগামী এক বছরের মধ্যে সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার দীর্ঘ ও ২৫০ মিটার চওড়া এলাকাটি সমুদ্র সমতল (মিনস সি লেভেল) থেকে চার মিটার গভীর করা হবে। এতে এই এলাকা থেকে প্রায় ৪৩ লাখ ঘনমিটার মাটি উত্তোলন করার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সমীক্ষা অনুযায়ী এই পরিমাণ মাটি উত্তোলনের বিষয়টি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এক বছরের মধ্যে এই ড্রেজিং শেষ করার পর পরবর্তী তিন বছর তা মেইনটেনেন্সও করবে নৌ বাহিনী।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার) শাহীন রহমান বলেন, ‘গত শনিবার নৌ বাহিনীর সাথে আমাদের চুক্তি হয়েছে। নৌ বাহিনী কাজ শুরুর জন্য ইতিমধ্যে পাইপসহ আনুসঙ্গিক উপকরণ নিয়ে এসেছে।’

জানা যায়, বন্দর ভবনে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর পক্ষে পরিচালক (ওয়েলফেয়ার) ক্যাপ্টেন আবদুস সামাদ ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষে বন্দরের চেয়ারম্যান কমডোর জুলফিকার আজিজ স্বাক্ষর করেন। নৌ বাহিনী কাজটি সম্পন্ন করার জন্য দুটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করেছে। এরমধ্যে একটি হলো ই ইঞ্জিনিয়ারিং ও অপরটি চায়না হারবার।

এদিকে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে উত্তোলিত মাটি কোথায় যাবে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দরের চিফ হাইড্রোগ্রাফার আরিফুর রহমান বলেন, ‘ড্রেজিংয়ের মাটি হালদার চর ও বাকলিয়ার চর এলাকায় জমা করা হবে। বাকলিয়ার চর এলাকায় বঙ্গবন্ধু মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি করা হবে। সেই স’ানটি কর্ণফুলী ড্রেজিংয়ের মাটি দিয়ে ভরাট করার কথা রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, লালদিয়া মাল্টিপারপাস টার্মিনাল নির্মাণের সময় সেখানকার অধিবাসীদের হালদার চরে পুনর্বাসনের কথা রয়েছে। তাই সেই চরটিও এই মাটি দিয়ে ভরাট করা হবে।

তবে অপর এক সূত্রে জানা যায়, হালদার চর ও বাকলিয়ার চর ছাড়াও নদীর অপর পাড়ে ডায়মন্ড সিমেন্টের খালি জায়গায় রয়েছে। ড্রেজিংয়ের মাটি সেখানেও জমা করা হতে পারে।

এদিকে কর্ণফুলী ড্রেজিংয়ের পর ৪০০ মিটার দীর্ঘ লাইটারেজ জেটি ব্যবহার করা যাবে। এতে ৪টি জাহাজ ভিড়তে পারবে। একইসাথে কর্ণফুলীর নাব্যতা যেমন বাড়বে, তেমনিভাবে দূষণও রোধ হবে।

ড্রেজিং এর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, কর্ণফুলী নদীর ড্রেজিং একটি চলমান প্রক্রিয়া। দীর্ঘদিন এর ড্রেজিং বন্ধ থাকায় নদীটি প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। এতে নেভিগেশন চ্যানেল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, কাপ্তাই বাঁধের কারণে এই নদীর নেভিগেশন চ্যানেল অব্যাহত রাখতে ড্রেজিংয়ের বিকল্প নেই।

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ড্রেজিং বন্ধ থাকায় পলি জমে প্রায় ভরাট হয়ে গেছে কর্ণফুলী। পলির অবস’া জানতে যাওয়া কর্ণফুলীর উপর জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে বুয়েট। ক্যাপিটেল ড্রেজিং নামে একটি প্রকল্প মামলাধীন থাকায় সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর ড্রেজিং নামে প্রকল্প তৈরি করে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) তৈরি করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ‘সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর নাব্যতা রক্ষা প্রকল্প’ নামে তৈরিকৃত ডিপিপি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পায়। আর সেই অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় প্রকল্পটিকে বাস্তবায়ন করতে বন্দর কর্তৃপক্ষ সরাসরি সংগ্রহ পদ্ধতিতে (ডিপিএম) বাংলাদেশ নৌ বাহিনীকে দিয়ে করানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এর ধারাবাহিকতায় গত ২০ ডিসেম্বর প্রকল্পটি একনেক থেকেও অনুমোদন পায়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সদরঘাট এলাকায় চারটি লাইটারেজ জেটি সচল ছাড়াও হাতির ঝিলের আদলে তৈরি করা এলাকাটি পর্যটনের স্পট হিসেবে বিবেচিত হবে। নদীর তীরে মাছ ধরার ট্রলারগুলোকে রাখার জন্য গড়ে তোলা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রও সচল হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে মালয়েশিয়ান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী নদীর ক্যাপিটেল ড্রেজিং কার্যক্রম অসমাপ্ত রেখে চলে যাওয়ায় পলি জমে ভরাট হতে থাকে কর্ণফুলী। আন্তর্জাতিক দরপত্রের কারণে ও মালয়েশিয়ান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাইকোর্টে রিটের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের উপর স’গিতাদেশ দেওয়ায় বন্দর কর্তৃপক্ষও ড্রেজিংয়ের অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে পারছিল না, এমনকি নতুন করে দরপত্রও আহবান করা যাচ্ছিল না। আইনি প্রক্রিয়ায় আদালত গত জুলাইতে বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষে রায় দিলেও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবিষয়ে আইনি মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পায় গত অক্টোবরে । তবে সম্প্রতি সালিশি আদালতের রায়ে মালয়েশিয়ান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে রায় দিলেও তারা কাজ করতে আগ্রহ দেখায়নি। মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠানটি শুধু তাদের জামানতের টাকা ফেরত চেয়েছে। তবে এতে কর্ণফুলীর বর্তমান ড্রেজিংয়ের কাজে কোনো হেরফের হবে না বলে বন্দর কর্মকর্তারা জানান।

সূত্র : দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!