Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | আওয়ামী লীগের অর্ধডজন শক্তিশালী প্রার্থী মাঠে

আওয়ামী লীগের অর্ধডজন শক্তিশালী প্রার্থী মাঠে

Unt111itled-1-562x525

নিউজ ডেক্স : চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) নির্বাচনী এলাকায় যারা জামায়াত করতেন, তাদের অনেকেই এখন আওয়ামী লীগে। বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচন-পরবর্তী জামায়াতের অনেক নেতাই এখন আওয়ামী লীগে সক্রিয়। দল পরিবর্তন করে সরকারি দলে আশ্রয় নিয়েছেন অনেক জামায়াত নেতাকর্মী। জামায়াত থেকে আসা এসব নেতাকর্মীর কারণে আওয়ামী লীগে কোন্দল বেড়েছে। ’৭৫ পরবর্তী প্রথমবারের মত এই আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে গত নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী অধ্যাপক ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন না। তিনি জামায়াত পরিচালিত আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতেন।

এ আসনে আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন ড. আবু রেজা। তাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় বেশ আগেভাগেই আটঘাট বেঁধে নেমেছেন আওয়ামী লীগের অর্ধডজন সম্ভাব্য প্রার্থী। এঁদের মধ্যে আছেন দলের কেন্দ্রীয় উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ মোতালেব, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, রূপালি ব্যাংকের পরিচালক সাংবাদিক আবু সুফিয়ান, এডভোকেট আ ক ম সিরাজুল ইসলাম ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান। তবে সাতকানিয়ার সন্তান কেন্দ্রীয় উপদপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া এবার মনোনয়ন চাইবেন না বলে নিশ্চিত করেছেন।

দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালের সংসদ নির্বাচনে এই আসনে বিজয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম ছিদ্দিক। পরবর্তীতে এ আসনটিতে জামায়াত-বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা জয়লাভ করেন। গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ড. আবু রেজা নদভী সাংসদ নির্বাচিত হন। এখানে আওয়ামী লীগ ত্রিধারায় বিভক্ত। এমপির সাথে আওয়ামী লীগ ঘরানার একটি অংশ মাঠে আছেন। সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনসমূহের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ সিংহভাগ নেতা-কর্মী তাঁর বিপরীতে দুই শিবিরে অবস্থান নিয়েছেন। এক শিবিরে রয়েছেন এবারের মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন ও সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব সিআইপি এবং অপর শিবিরে রয়েছেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান। বিভক্তির কারণে তৃনমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা পড়েছেন বিপাকে।

মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, গত সংসদ নির্বাচনে জামায়াত অংশ না নিলেও তাদের জ্বালাও-পোড়াও নীতির কারণে সাধারণ ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে ভয় পেয়েছিল। কিছু কিছু কেন্দ্রে উল্লেখ করার মত ভোট পায়নি আওয়ামী লীগ। এ বিষয়গুলো নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে হতাশা আছে। আগামী নির্বাচনে ইতিমধ্যে জামায়াত তাদের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তাই জামায়াতকে মোকাবেলা করতে আওয়ামী লীগের সর্বোত্তম ও যোগ্য প্রার্থী মনোনীত করা এখন সময়ের পরীক্ষা বলে মনে করছেন তৃণমূলের কর্মীরা।

৭৫ পরবর্তী তিনিই প্রথম নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন উল্লেখ করে বর্তমান সাংসদ আবু রেজা নদভী বলেন, তিনি শতভাগ আশাবাদী তিনিই মনোনয়ন পাবেন। ব্রিটিশ আমল থেকে যত উন্নয়ন হয়নি, তার আমলেই তার চেয়ে অনেক বেশি উন্নয়ন হয়েছে। সরকারি ফা- এবং আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউ-েশনের ফা- মিলে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। নদী ভাঙন এখানকার সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল। ব্রিটিশ আমলে ঢলু নদীতে দুইটি ব্রিজ ছিল। এখন ৮টি ব্রিজ নির্মাণ করা হচ্ছে। নদী ভাঙনরোধে ৫৭৭ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। ৩৩৩ কোটি টাকা ছাড় হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউ-েশন থেকে মসজিদ, মাদ্রাসা, কাতার পল্লী, দুবাই পল্লী, কুয়েত পল্লী, ওআইসি পল্লী, টিউবওয়েল স্থাপনসহ বিভিন্ন কাজ করেছেন তিনি। সপ্তাহে দুই-চার বার এলাকায় যান উল্লেখ করে বলেন, প্রতি জুমায় একেক মসজিদে খুৎবা দেন তিনি। মুসল্লিরা আগ্রহ সহকারে তা শোনেন। এলাকার মানুষ তাকে ভালবাসে। তিনি এবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমীরের সাথে। নিজের ওপর আস্থা আছে, সামশুল ইসলাম বা যেই নির্বাচন করুন না কেন তিনিই বিজয়ী হবেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ তার সাথে আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমিটিগুলি তিনি এমপি হওয়ার আগেই গঠিত হয়েছে। তবুও সাতকানিয়ার দুই-তৃতীয়াংশ নেতা তার সাথে আছে বলে তিনি দাবি করেন। লোহাগাড়ায় যারা প্রকৃত আওয়ামী লীগ তারাও তার সাথে আছে বলে তিনি দাবি করেন। এছাড়া আলেম-ওলামারা তার সাথে আছেন। মুক্তিযোদ্ধারা তার সাথে আছেন বলে তিনি দাবি করে বলেন, সবচেয়ে বড় শক্তি হল জনতা। জনতা তার সাথে আছে। আওয়ামী লীগের বাইরেও তিনি তার সামাজিক কর্মকা-ের মাধ্যমে কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করেছেন বলে উল্লেখ করেন।

কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, ‘আমি ৩৮ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে সাধারণ মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।’ তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি যখনই সময় পান এলাকায় ছুটে যান। এলাকার মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় কাজে লাগার চেষ্টা করেন। একসময় জামাত শিবির যখন সাতকানিয়াকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছিল তখন তিনি ছাড়া আর কোন নেতা সাতকানিয়ায় যাননি বলে তিনি দাবি করেন। বর্তমান সংসদ সদস্য সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে বললে তিনি বলেন, সেটা জনগণ করবে। তবে নেত্রীর সিদ্ধান্তকে সম্মান করে গত নির্বাচনে তাকে বিজয়ী করতে কাজ করেছেন বলে জানান। মনোনয়ন পেলে তিনি আসন উপহার দিতে পারবেন বলে তার বিশ্বাস।

১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘যারা এখন দল চালায় তাদের ৮০ শতাংশ আমার রিক্রুট করা। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি থাকাকালে সাতকানিয়া-লোহাগাড়ায় আওয়ামী লীগ মাঠের রাজনীতি শুরু হয়েছে। এর আগে জাতীয় কর্মসূচি এবং নির্বাচন এলে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কিছু সভা করার মধ্যেই আওয়ামী লীগের কর্মকা- সীমাবদ্ধ ছিল।’ এখনো স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে বলেন, ১৯৯৬ সালে এ আসনে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতার মধ্য দিয়েই স্থানীয় সংগঠনে নতুন করে গতি আসে। ১৯৮৬ সাল থেকে প্রতিটি নির্বাচনেই দলীয় প্রার্থীর পক্ষে তিনি সার্বক্ষণিক কাজ করেছেন। গত নির্বাচনে একমাত্র তিনিই সার্বক্ষণিক দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচার কার্যক্রম চালিয়েছিলেন দাবি করে বলেন, এতে একেবারেই নিরাপদ অবস্থানে থেকে দলীয় প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন। দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগে কিছু মতবিরোধ থাকলেও তিনি প্রার্থী হলে সবাই তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। স্থানীয় ভোটাররাও তার সঙ্গে আছেন। তাই নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।

রূপালি ব্যাংকের পরিচালক ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ঝা-া হাতে পথ চলছি। নানা প্রতিকূলতায়ও কখনো পিছপা হইনি। নিজের অবস্থান থেকে বার বারে প্রমাণ করেছি আওয়ামী লীগের প্রতি বিশ্বস্ততা। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্যের দায়িত্ব পালন করেছি। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও সংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক হয়েছি। বর্তমানে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।’ রূপালি ব্যাংকেও সততার সাথে পরিচালকের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন উল্লেখ করে বলেন, এই আসনের মাটি ও মানুষের সাথে যে বন্ধন আছে তা একান্ত ভালবাসার। নেত্রী মনোনয়ন দিলে সাতকানিয়া লোহাগাড়ার মানুষের প্রত্যাশা তিনি পূরণ করতে পারবেন এবং আসনটি উপহার দিতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।

এডভোকেট আ ক ম সিরাজুল ইসলাম জানান, দলীয় মনোনয়নের যুদ্ধে তিনিও আছেন। তার বিশ্বাস, দলের প্রতি ত্যাগ ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্কের দিক বিবেচনায় নিলে তিনিই মনোনয়ন পারেন।

সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ মোতালেব লেন, তিনি তৃণমূল নিয়েই কাজ করেন। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও শিক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এর ফলে তিনি গণমানুষের কাছে যেতে সক্ষম হয়েছেন। এছাড়া সাতকানিয়ায় তার তিন হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। তাকে যদি মনোনয়ন দেয়া হয় তিনি নেত্রীকে আসনটি উপহার দিতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।

ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, বর্তমান সাংসদের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ছিলাম। কারণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে প্রার্থী দিয়েছিলেন। নেত্রীর সম্মান বলে কথা। নির্বাচন পরিচালনা করে তাকে বিজয়ী করেছি। তিনি আওয়ামী লীগের এমপি হলেও দল থেকে বিচ্ছিন্ন। পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির একজনকে এনে প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন বর্তমান এমপি। তাই এর বিরোধিতা করেছি। যাকে সমর্থন দিয়েছি তিনি বিজয়ী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন স্বাচিপের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন উল্লেখ করে বলেন, দলীয় পদ না থাকলেও তিনি সাধারণ মানুষের সাথে মিশেছেন। অতীতের এমপি নির্বাচন এবং পৌর নির্বাচনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কিভাবে নির্বাচনে ওভারকাম করতে হয় তা তিনি জেনে গেছেন। এছাড়া সামাজিক ও শিক্ষা কার্যক্রমে তিনি যে ভূমিকা রেখেছেন তাতে মানুষ তার ওপর আস্থা রাখবে। কিন্তু বর্তমান সংসদ সদস্য উপজেলা আওয়ামী লীগের ভিতকে দুর্বল করে ফেলেছেন বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, তারা নেতাকর্মীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন।

সূত্র : দৈনিক পূর্বকোণ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!