ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে নানা পরিকল্পনা চসিক ও চবির

আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে নানা পরিকল্পনা চসিক ও চবির

ayub-baccu1_hb24

নিউজ ডেক্স : আইয়ুব বাচ্চু, তার রূপালি গিটারের মোহনীয় ধ্বনি জয় করেছিল তারুণ্যের হৃদয়। এর মধ্য দিয়ে জন্মস্থান ছাড়িয়ে হয়ে উঠেছিলেন দেশের। সুরের যাদু দিয়ে কাঁটাতারের সীমানাও পেরিয়েছিলেন। তবে যশ, খ্যাতির সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছেও লালন করতেন শৈশব-কৈশোরের স্মৃতিধন্য চট্টগ্রামকে। তাই মৃত্যুর পর নিজের বেড়ে উঠা আঙ্গিনায় আসার ইচ্ছে পোষণ করেছিলেন। তার সে ইচ্ছে পূরণ হয়েছে।

চট্টগ্রামকে ভালোবাসতেন আইয়ুব বাচ্চু। মৃত্যুর পর মায়ের পাশে শায়িত হওয়ার অদম্য আকাঙ্খায় সেটি প্রমাণ করেছে। রূপালি গিটারের এ বরপুত্রের সে ভালোবাসার প্রতিদান দিতে চায় চট্টগ্রামবাসীও। এ লক্ষ্যে তার স্মৃতি ধরে রাখতে চায় এ অঞ্চলের মানুষ। সে লক্ষ্যে চট্টগ্রাম নগরীর যে কোন একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের নামকরণ করা হবে তার নামে। আর তা বাস্তবায়ন করবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। প্রতিষ্ঠানটির আগামী সাধারণ সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। একইসঙ্গে শুরু হতে যাওয়া ‘চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স’ প্রকল্পের আওতাধীন বিভিন্ন কর্মযজ্ঞের মধ্য দিয়েও তার স্মৃতি ধরে রাখার চেষ্টা থাকবে। প্রকল্পের আওতায় যে সব স্থাপনা গড়ে উঠবে তার অন্তত একটি যেন আইয়ুব বাচ্চুর নামে করা হয়, তার প্রস্তাব দিয়ে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরকে দুই-একদিনের মধ্যে চিঠি দিবেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরে আইয়ুব বাচ্চুর ব্যবহৃত গিটারসহ অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে ‘আইয়ুব বাচ্চু কর্নার’ করার কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।

আইয়ুব বাচ্চুর নামে মুসলিম হল ও সড়কের নামকরণ : চট্টগ্রাম সিটি কপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, ‘আইয়ুব বাচ্চুর স্মৃতি রক্ষায় সাংস্কৃতিক কর্মীদের কাছ থেকে প্রস্তাব এসেছে। আবার রাজনৈতিক দল থেকেও এসেছে। সিটি কর্পোরেশনের আগামী সাধারণ সভায় এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করে একটি সিদ্ধান্ত নিব। এইক্ষেত্রে চট্টগ্রামের যে কোন একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক আইয়ুব বাচ্চুর নামে করার বিয়য়ে সিদ্ধান্ত হবে।’

‘চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেঙ স্থাপন’ প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে। এ কমপ্লেঙের নামও আইয়ুব বাচ্চুর নামে রাখার প্রস্তাব এসেছে বিভিন্ন মহল থেকে।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি মেয়র  বলেন, ‘মুসলিম হলকে নতুনভাবে সংস্কার হবে। দাবি উঠেছে, সেটির নামকরণ নিয়েও। কিন্তু এক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের বিষয় আছে। তবে চট্টগ্রামবাসীর যে দাবি সেটা উল্লেখ করে আমি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিব। এখানে মুসলিম হলের নামকরণ করতে পারে। আবার সেখানে পাবলিক লাইব্রেরি হবে, আইসিটি শাখা হবে, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য বলয় তৈরি হবে, যার যে কোন একটি আইয়ুব বাচ্চুর নামে করা যায় কি না সেটাও আমি চিঠিতে উল্লেখ করবো। আমার যেটা উদ্যোগ নেয়া দরকার সেটা নিব এবং সিটি কর্পোরেশনের যে এখতিয়ার আছে সেটা অবশ্যই করবো।’

আবক্ষ মূর্তি স্থাপনের প্রস্তাব :
নগরীর বৌদ্ধ মন্দিরের সামনের মোড়ে আইয়ুব বাচ্চুর একটি আবক্ষ মূর্তি স্থাপনের প্রস্তাব করেছেন বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড শাহ আলম। একইসঙ্গে তিনি মোড়টি আইয়ুব বাচ্চুর নামে করারও দাবি জানান।

আইয়ুব বাচ্চুর জানাজা নামাজের পূর্বে বক্তব্য দিতে গিয়ে এ প্রস্তাব করেন তিনি। এসময় তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম তার প্রিয় একজন পুত্রকে হারিয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন জনপ্রিয় এ সঙ্গীত শিল্পীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে ডিসি হিল বৌদ্ধ মন্দিরের সামনের মোড়টি আইয়ুব বাচ্চুর নামে করবে বলে আমরা আশা করছি। একইসঙ্গে সেখানে আইয়ুব বাচচুর একটি মূর্তি স্থাপন করব।’

পরে সিটি মেয়র এ প্রস্তাবের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেন, ‘নগরীর যে কোন একটি স্থানে আইয়ুব বাচ্চুর একটি আবক্ষ মূর্তি বসানো হবে। এ বিষয়ে আমরা সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত নিব।’

চবি জাদুঘরে হবে আইয়ুব বাচচু কর্নার :
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আইয়ুব বাচ্চুর চলে যাওয়া অসম্ভব বেদনার এবং কষ্টের। বাচ্চু চট্টগ্রামের সন্তান এবং তাকে আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ধারণ করতে চাই। তরুণদের জন্য। কারণ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে তো তরুণদের সমাবেশ ঘটে। তরুণদের নিয়েই আমাদের চিন্তা-চেতনা, কর্মতৎপরতা, ভাবনা সবকিছুই। তাই আমি মনে করেছি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরে আইযুব বাচ্চু কর্নার করা হবে উপযুক্ত। বিষয়টা আমার মনে মনে ছিল। কাউকে বলিও নি। এটা আমার নিজস্ব পরিকল্পনা। আর গতকালই (শুক্রবার) সংবাদ মাধ্যম থেকে আমাকে বলা হল, ‘আইয়ুব বাচ্চু তার মামাকে বলেছে, তার ৬০টি মত গিটার আছে এবং সেগুলো যেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দিয়ে দেয়।’ এটা শুনার পর বললাম, তার সাথে আমার যে আত্মার মিল এবং হৃদয়ের বন্ধন আছে সেটা মিলে গেল।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যাদুঘরে আইয়ুব বাচ্চু কর্নার করার পরিকল্পনা সম্পর্কে ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, ‘৬০টি গিটার দরকার নেই। দুই-চারটি গিটার হলেও তার অন্যান্য ব্যবহৃত জিনিস দিয়েও একটা কর্নার করা যাবে। তার ছবি, পোট্রেট, তার চশমা, তার মাথার টুপি দিয়ে হলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদঘরে আইয়ুব বাচ্চু স্মৃতি কর্নার করতে চাই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যাদুঘর বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের জাদুঘরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উন্নত এবং সমৃদ্ধ। এই যাদুঘরে যদি আইয়ুব বাচ্চু স্মৃতি কর্নার করতে পারি এবং তার ব্যবহৃত জিনিসপত্র থাকে তাহলে তরুণ প্রজন্ম তার সম্পর্কে জানতে পারবে। চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ, ভারতবর্ষ আইয়ুব বাচ্চুকে, তার অবদানকে মর্যাদার সাথে ধারণ করতে পারে যুগ-যুগান্ত। তরুণদের মাঝে চিরজীবী হউক আইয়ুব বাচ্চু, এটাই আমার চিন্তা ও ভাবনায়।’

প্রসঙ্গত, গতকাল দুপুরে আইয়ুব বাচ্চুর মামা আবদুল হালিম সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘৬০টা গিটার ছিল আইয়ুব বাচ্চুর। এগুলো নিলামেও দিয়েছিল একবার। পরে সে কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। আমাকে বলেছিল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে গিটারগুলো দিয়ে দিতে চায় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সঙ্গে আমাকে কথা বলতে বলেছিল। পরে সেটা আর হয়ে ওঠেনি।’

সূত্র : দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!