এলনিউজ২৪ডটকম : লোহাগাড়া উপজেলার সীমান্তবর্তী এমচরহাট-কেয়াজুপাড়া সড়কের সরই খালের উপর নির্মিত ধসে পড়েছে প্রায় দু’সপ্তাহ পূর্বে। এ পর্যন্ত ব্রীজটি সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। এতে লোহাগাড়ার সাথে পার্শ্ববর্তী লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নের সাথে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ায় শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় জনসাধারণ চরম ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। কৃষকেরা উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে হিমসিম খাচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট দীর্ঘ দিন ধরে সরই খালের ব্রীজ সংলগ্ন এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে। ফলে ব্রীজের উভয় পাশের মাটি সরে গিয়ে অতিবর্ষণে সরই খালে স্রোত বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্রীজটি ধসে পড়ে।
সূত্র জানায়, লোহাগাড়া হতে পার্বত্য এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এ সড়ক। এ সড়কের দু’উপজেলার সীমান্ত এলাকায় সরই খালের উপর প্রায় ১৫ বছর পূর্বে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ৩০ মিটার দীর্ঘ গার্ডার ব্রীজটি নির্মাণ করে। সম্প্রতি লোহাগাড়া উপজেলার একটি সিন্ডিকেট সরই খাল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় ৩০ মিটার দীর্ঘ গার্ডার ব্রীজের আ্যাপার্টমেন্ট তলিয়ে গেলে ৯ মিটারের প্রথম স্পেনটি ধসে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রবল বর্ষণের ফলে সরই খালে পানি এবং স্রোত অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ঈদের দু’দিন পূর্বে ব্রীজের এপার্টমেন্ট বসে গিয়ে একটি স্পেন ধসে পড়ে।
এদিকে, ব্রীজটি ধসে পড়ায় লোহাগাড়া উপজেলার সাথে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে করে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীসহ স্থানীয়দের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে সরই বাজারের ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় কৃষকদের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় কেয়াজুপাড়া বাজারের ব্যবসায়ীরা তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল আনা-নেওয়া করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এতে করে পণ্যের উপর খরচ বাড়ছে। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে স্থানীয় ক্রেতা সাধারণের উপর।
অপরদিকে, স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত বিভিন্ন তরি-তরকারি এবং ফল-ফলাদি বাজারজাত করা সম্ভব হচ্ছেনা। যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় একদিকে যেমন লোহাগাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছেনা। অপরদিকে বহিরাগত ব্যবসায়ীরা মালামাল ক্রয় করতে আসছেনা। এতে করে কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত আম, কাঁঠাল, আনারসসহ বিভিন্ন ফল-ফলাদি এবং তরিতরকারি বাজারজাত করতে ভোগান্তিতে পড়েছে।
সরই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফরিদ-উল-আলম বলেন, লোহাগাড়া-সরই সড়কের হাসনাভিটাস্থ ব্রিজটি ধসে পড়ায় জনসাধারণের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। তিনি বলেন, ব্রিজটি ধসে পড়ার খবরে বান্দরবান ও লোহাগাড়া উপজেলার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেও কবে নাগাদ ব্রিজটি সংস্কার করা হবে সে বিষয়ে নিশ্চিত কোন আশ্বাস দেন নাই। তিনি ব্রিজটি দ্রুত মেরামত করা অন্যথায় মেরামতে বিলম্ব হলে আপাতত সীমিত আকারে ছোট যানবাহন চলাচল করার মতো বেইলি ব্রীজ স্থাপনের দাবি জানান।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর লামা উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের সার্ভেয়ার মোঃ জাকির হোসেন জানান, গত শনিবার বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ব্রীজটি ধসে পড়ে দু’উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে জনভোগান্তির বিষয়টি আমরা রিপোর্ট আকারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তাৎক্ষনিক অবহিত করেছি। স্থানীয় ভূক্তভোগী জনসাধারণ ধ্বসে পড়া ব্রীজটি দ্রুত মেরামতের দাবী জানিয়েছেন।
লোহাগাড়া উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা প্রকৌশলী প্রতিপদ দেওয়ান স্থানীয় পুটিবিলা ইউপি চেয়ারম্যানকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ব্যাপারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।