সৈয়দ মোহাম্মদ আলমগীর : সরকার ২০১৯-২০১২০ অর্থ বছরে ১ লাখ ৪১ হাজার ২১২ কোটি টাকা ঘাটতি বাজেট ঘোষণা করেছে।দেশী, বিদেশি ঋণ নিয়ে এ ঘাটতি পূরণ করতে হবে।
সঞ্চয় পত্র ক্রয় ও ব্যাংক ঋণ নিয়ে সরকার দেশের অভ্যন্তর থেকে অর্থ সংগ্রহ করে।বিগত বছরগুলিতে সঞ্চয় পত্র বিক্রয় করে সরকার বাজেট ঘাটতির একটি বড় অংশ পূরণ করেছে। গত অর্থ বছরে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে ২৬ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছিল। কিন্তু এপ্রিল,১৯ পর্যন্ত অর্থবছরের ১০ মাসেই বিক্রি ৪৩ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়ে যায়।অন্য দিকে লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশি সঞ্চয় পত্র বিক্রি হওয়ায় ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ৪২ হাজার থেকে কমিয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা করে।
ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে সঞ্চয় পত্র থেকে ঋণ নিলে অনেক বেশী সুদ দিতে হয়। তাই এ বছর সরকার ব্যাংক থেকে বেশী ঋণ নিচ্ছে।গত অর্থ বছরে শেষ মাসে(জুন,১৯) সরকার ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়েছে।এ বছর প্রথম দুই দিনে ব্যাংক ঋণ নিয়েছে দুই হাজার কোটি টাকা।আর সঞ্চয় পত্র বিক্রিতে করা হচ্ছে কড়াকড়ি।
বর্তমানে অনলাইনভিত্তিক ‘জাতীয় সঞ্চয় স্কিম অনলাইন ম্যানেজমেন্ট’ সফটওয়্যার আওতায় সঞ্চয় পত্র ক্রয় বাধ্যতামুলক করা হয়েছে।এখন সঞ্চয় পত্র কিনতে হলে ক্রেতার ব্যাংক একাউন্ট, এক লক্ষ টাকার বেশি হলে টি,আই,এন থাকতে হবে। এ সিদ্ধান্তের ফলে অবৈধ বা কর ফাঁকির অর্থ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বন্ধ হবে। একই ব্যক্তি পাঁচ জায়গা থেকে সঞ্চয়পত্র কিনতে পারবে না। ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন হলে সব ক্ষেত্রে একটা রেকর্ড থাকবে। বিধায় কেউ ফাঁকি দিলে ধরা পড়বে।
এ ব্যবস্থায় ধনী আমানতকারীদের অসুবিধা না হলেও,গ্রামের গরীব মহিলা, দিন মজুর, ক্ষুদ্র আমানতকারীরা অসুবিধায় পড়বে।আমার জানামতে, অনেক গরীব লোক দীর্ঘদিন ধরে একটু একটু করে সঞ্চয় করে এক লাখ টাকা বা তার বেশী সঞ্চয় পত্র ক্রয় করেছেন।এখন যদি সে সঞ্চয় পত্র কিনতে যায় তবে তাকে টি, আই, এন এবং ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হবে।একজন গরীব মহিলা বা ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারী যার আয় কোন দিন করযোগ্য হওয়ার সম্ভবনা নাই সে কেন এই ঝামেলায় জড়াতে যাবে?
অন্যদিকে ব্যাংক ঋণের উপর সরকারের অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার কারণে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভবনা আছে।সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ায় ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য এই তারল্য সংকট মোকাবেলায় রেপো-এর মাধ্যমে অর্থের যোগান দিবে।একই সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্ট থেকেও সরকারকে অর্থের যোগান দিবে।এতে বাজারে অর্থের প্রবাহ বেড়ে যেতে পারে। উল্লেখ্য,বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১টাকা বের হলে বাজারে ৭.৫০ টাকার প্রভাব পড়ে। ফলে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যেতে পারে।এ ছাড়া ব্যাংক ঋণের উপর সরকারের অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার কারণে ব্যাংকগুলির বেসরকারী খাতে ঋণ প্রদানে সক্ষমতা কমে যাবে। ফলে শিল্পায়ন ব্যহত হতে পারে। ব্যাংকগুলির তহবিল ব্যবস্থাপনা ও পরিচালন ব্যয়ও বেড়ে যাবে।ধনী ও গরীবের সম্পদের বৈষম্য বৃদ্ধি পাবে।
এ সমস্যা নিরসনকল্পে সঞ্চয় পত্রে সুদের হার ও উৎস কর নির্ধারণে কয়েকটি ধাপ সৃষ্টি করা যেতে পারে। যেমন ১ লক্ষ টাকা থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত উৎস কর ৫% ও টি, আই, এন রহিতকরণ,১১ লক্ষ টাকা থেকে ২০ লক্ষ পর্যন্ত ১০% এবং ২১ লক্ষ বা উপরে ১৫% ও সুদের হার কমিয়ে দিয়ে সঞ্চয় পত্র বিক্রির গতি অব্যাহত রাখা যেতে পারে।
লেখক : সাবেক ব্যাংকার।