Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | রাতে দিনে নানা কৌশলে চলছে পাহাড় কাটা

রাতে দিনে নানা কৌশলে চলছে পাহাড় কাটা

1437542997

নিউজ ডেক্স : চট্টগ্রামে থামছে না পাহাড়ের কান্না। রাতে দিনে নানা কৌশলে চলছে পাহাড় কাটা। দুদকের অভিযানের পর কক্সবাজারে পাহাড় কাটা বন্ধ হলেও চট্টগ্রামে থামেনি পাহাড়খেকোদের অপতৎপরতা। নগরীর প্রাণকেন্দ্র জিইসি মোড়ের কাছেই সুদৃশ্য পাহাড়টি কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। দিনের পর দিন নানা কৌশলে পাহাড়টি কাটা হলেও ঠেকানোর দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। অন্যদিকে দক্ষিণ খুলশী ও জালালাবাদেও চলছে পাহাড় কাটা। পাহাড়ের কান্না চলছে সলিমপুরেও। খবর দৈনিক আজাদীর।

পাহাড়, নদী আর সাগরের অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর চট্টগ্রাম। কিন্তু এই সৌন্দর্য দিন দিন যেন হারিয়ে যাচ্ছে। পাহাড় কাটা নিষিদ্ধ হলেও দুর্বৃত্তরা নানা কৌশলে কাটছে এসব। নগরী ও জেলার প্রায় সব পাহাড়ই যেন কাটার মহোৎসব চলছে। এর মধ্যে সীতাকুণ্ড সলিমপুর ও জালালাবাদে পাহাড় কেটে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। নগরীর পাহাড় সমৃদ্ধ দক্ষিণ খুলশী এলাকাতেও বেশ কয়েকটি পাহাড় নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে। দিনের বেলা বন্ধ থাকলেও রাতের বেলায় নিমিষেই চলছে পাহাড় কাটা। দক্ষিণ খুলশীতে গড়ে উঠা সংঘবদ্ধ একটি পাহাড়খেকো চক্র দিনের বেলা পাহাড়ের গোড়ায় খুঁড়ে রাতের বেলায় পাম্প মেশিনে পানি দিয়ে পাহাড় ধসের ব্যবস্থা করছে।

নগরীর জিইসি মোড়ের কাছে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বিপরীত পাশের সুদৃশ্য পাহাড়টি উজাড়ের কাছাকাছিতে নিয়ে আসা হয়েছে। ‘ইস্পাহানি পাহাড়’ নামে পরিচিত ঘেরা দিয়ে রাখা জায়গাটিতে রাতে দিনে নানা কৌশলে পাহাড় কেটে ফেলা হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের ইকুইপমেন্টের ডিপো বানিয়ে জায়গাটিতে পাহাড় কাটার অপকৌশল চলছে বহুদিন ধরে। স্কেভেটরসহ বিভিন্ন ধরনের ইক্যুইপমেন্ট থাকলেও রাতের বেলায় স্কেভেটর দিয়ে পাহাড়ের গোড়া কেটে দেয়া হয়। পরে পাহাড় ধসে পড়ার ব্যবস্থা করা হয়। দিনে দিনে বিশাল পাহাড়টির বিস্তৃত এলাকা সাবাড় করে দেয়া হয়েছে। পুরো বর্ষা জুড়ে পাহাড়টি কাটা হয়েছে। এই পাহাড়ের মাটি দিয়ে এলাকার নালানর্দমা সবই ভরাট হয়ে গেছে। স্থানীয়রা বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও পাহাড় কাটা বন্ধ করা যায়নি। বার্মা হাজী নামের এক ব্যক্তি পাহাড়টিকে কটে সাবাড় করে দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বার্মা হাজীর সন্তানেরা বিভিন্ন সংস্থাকে ম্যানেজ করে স্কেভেটর লাগিয়ে সুন্দর পাহাড়টির বেশিরভাগই কেটে ফেলেছে বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ সাজ্জাদুল আলম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এত সুন্দর পাহাড়টি চোখের সামনে কেটে ফেললো। অথচ এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে রয়েছে থানা, পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু পাহাড় কাটা সমানতালে চলছে। শুধু জিইসি মোড়েই নয়, নগরীর আরো নানা স্থানে পাহাড় কাটা চলছে। চলছে পাহাড়ের কান্না।

‘ইস্পাহানি পাহাড়’ প্রসঙ্গে ইস্পাহানি গ্রুপের একজন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পাহাড়টি আমাদের নামে পরিচিত হলেও এটি বার্মা হাজী নামের একজনের দখলে। তারাই পাহাড়টি ঘিরে রেখেছে। তারাই কাটছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পদস্থ একজন কর্মকর্তার সাথে গতকাল যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, চট্টগ্রামে বহু পাহাড়ই ছিল। বহু পাহাড় কাটা হয়েছে। প্রভাবশালীদের অনেকেই অতীতে পাহাড় কেটেছে। তবে বর্তমানে পাহাড় কাটা নেই। আমাদের টিম বিভিন্ন এলাকায় নজরদারি করে। পাহাড়কাটা ঠেকাতে পরিবেশ অধিদপ্তর অত্যন্ত সতর্ক বলেও তিনি দাবি করেন। বার্মা হাজীর পাহাড়টির ব্যাপারে বিস্তারিত জানা নেই উল্লেখ করে পরিবেশ অধিদপ্তরের ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা খোঁজখবর নেবো। যদি সত্যিই তারা পাহাড় কাটে তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

চট্টগ্রামের পাহাড়কাটা নিয়ে দুদকের মহা-পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি খুবই বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রামে অনেক পাহাড় কাটা আমরা ঠেকিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আবার শুরু হওয়াটা ভীষণ উদ্বেগের। তিনি বলেন, দুদক অবশ্যই বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। তিনি বলেন, আমরা পাহাড়কে আবার আগের অবস্থায় নিয়ে আসার নির্দেশ দেবো। কঙবাজার এবং সিলেটে কাটা পাহাড় পুনরায় আগের অবস্থায় আনা হয়েছে বলেও মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী উল্লেখ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!