Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | ভুলের পরিমাণ বেশি হলে রাজাকারের তালিকা প্রত্যাহার : মন্ত্রী

ভুলের পরিমাণ বেশি হলে রাজাকারের তালিকা প্রত্যাহার : মন্ত্রী

Muktijoddha Montri

নিউজ ডেক্স : রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম চলে আসায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি এ-ও বলেছেন, ভুলের পরিমাণ বেশি হলে রাজাকারের তালিকা প্রত্যাহার করা হবে। আর ভুলের পরিমাণ কম হলে ভুলবশত যাদের নাম এ তালিকায় এসেছে, সেগুলো প্রত্যাহার করা হবে।

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) শিল্পকলা একাডেমির সংগীত ও নৃত্যকলা অডিটোরিয়ামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে উৎসর্গকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার নুরুল ইসলাম খান রচিত ‘মুক্তিযুদ্ধ এবং আমি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।

মহান বিজয় দিবসের আগের দিন রোববার (১৫ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী ১০ হাজার ৭৮৯ রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। ওই তালিকায় বেশকিছু গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধারও নাম চলে আসে। সচিবালয় সংলগ্ন সরকারি পরিবহন পুল ভবনের ৬ তলায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ তালিকা ঘোষণা করেন তিনি।

একাত্তরে খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুণ্ঠনে যারা পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করেছিলেন, সেসব রাজাকারের তালিকার প্রথম পর্ব প্রকাশ করা হয় ওইদিন।

ঘোষিত তালিকায় অনেক মুক্তিযোদ্ধারও নাম রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর ও ভাষা সৈনিক গোলাম আরিফ টিপু সহ রাজশাহীর আরও দুই ব্যক্তির নাম ওঠে এসেছে, যারা মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের ছিলেন বলে প্রমাণ রয়েছে।

এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমি যখন তালিকা প্রকাশ করি, তখন বারবার বলেছি, এ তালিকা আমরা প্রণয়ন করিনি, প্রকাশ করেছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমরা যা পেয়েছি তাই হুবহু প্রকাশ করেছি। গতরাতে এসব বিষয়ে খবর পেয়েছি। আজকে অফিসে গিয়ে এ বিষয়টা দেখব।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ তালিকায় কোনো হাত দেয়নি। ১৯৭১ সালে যেভাবে ছিল সেভাবেই তারা আমাদেরকে দিয়েছে। আমার ধারণা, প্রথম যারা এ তালিকা প্রস্তুত করেছে, তারা হয়তো চেয়ারম্যান মেম্বারের কাছ থেকে নিয়েছে। তখন অনেকের নাম চাপের মুখে দিয়ে দেয়া হয়েছে। তারাও হয়তো এ বিষয়ে জানে না।’

তিনি বলেন, ‘আমি নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার নাম যদি রাজাকারের তালিকায় আসত, আমি যে কষ্ট পেতাম, তারাও সে কষ্ট পেয়েছে যারা প্রকৃত পক্ষে রাজাকার ছিলেন না। আমি সেজন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। এখানে আমার কোনো হাত ছিল না। যা পেয়েছি, তাই প্রকাশ করেছি। এখন আমাদের দৃষ্টিতে যদি আসে বা কেউ লিখিতভাবে আবেদন করেন যে উনারা উনারা ছিলেন না, তাহলে আমরা যাচাই-বাছাই করে তাদের নাম তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেব।’

মন্ত্রী বলেন, ‘যেগুলোতে আমরা সমস্যা পাব সেগুলো যাচাই করে প্রত্যাহার করে নেব। যাদের নাম অন্যায়ভাবে এসেছে সেজন্য দুঃখ প্রকাশ করে তাদের নাম প্রত্যাহার করে নেব। আর যদি এ ভুলের পরিমাণটা অনেক বেশি হয়, তাহলে পুরো তালিকা প্রত্যাহার করে পুনরায় তালিকা প্রকাশ করব। এ বিষয়ে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’

পরবর্তীতে আরও এ-সংক্রান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে আপনি জানিয়েছেন। সেক্ষেত্রে কী পদ্ধতি অবলম্বন করবেন-জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘অবশ্যই তখন আমরা বেশি বেশি করে যাচাই-বাছাই করব। এবারতো আমাদের শিক্ষা হলো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় ভুল থাকতে পারে-এ ধারণা আমরা আগে করিনি। কারণ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ তালিকা নতুন করে তৈরি করেনি। ৭১ সালের তালিকাই তারা দিয়েছে। এখন যেহেতু দেখলাম ভুল আছে আগামীতে আমরা আরও সতর্ক হব।’

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর বেশ সময় রাজাকারদের দোসররা ক্ষমতায় ছিল। তারাও এ তালিকা পরিবর্তন করতে পারে। কিন্তু এটা ধারণা।’

মন্ত্রী বলেন, ‘যারা মুক্তিযোদ্ধা হয়েও এ তালিকায় এসেছেন, তারা আহত হয়েছেন কিন্তু একদিক দিয়ে ভালো হয়েছে। এখন এ তালিকা প্রকাশ হওয়ায় এটি সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু যদি ২০, ৩০ বছর পর এটা প্রকাশ হতো তখন কিন্তু সংশোধনের সুযোগ থাকত না। কারণ, সমসাময়িক মানুষ বেঁচে থাকত না। তাই এখন তারা আহত হলেও সংশোধন হওয়ার সুযোগ রয়েছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!