নিউজ ডেক্স : চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণের জন্য দেশি–বিদেশি চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী প্রথম পর্যায়ে দুই লটে ১শ’ কিলোমিটার (দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত) রেলপথ নির্মাণ করা হবে। প্রথম লটে দোহাজারী থেকে চকরিয়া পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার ট্র্যাক নির্মাণ হবে। একই সঙ্গে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশন কাজ সম্পন্ন করা হবে। এর জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৬৪১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। আর দ্বিতীয় লটে চকরিয়া থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার ট্র্যাক নির্মাণ এবং কক্সবাজার আইকনিক ইন্টারমডেল টার্মিনাল বিল্ডিংয়ের নির্মাণ কাজ করা হবে। এই ধাপের জন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ৫৯১ কোটি ২০ লাখ টাকা।
গত সপ্তাহে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে এই প্রকল্পের কাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। আর গতকাল বিকালে রেলভবনের সম্মেলন কক্ষে রেলপথ মন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হকের উপস্থিতিতে নির্মাণ কাজ শুরু করার জন্য ঠিকাদারের সাথে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান তমা কন্সট্রাকশন, ম্যাক্স কন্সট্রাকশন, সিটি জয়েন্ট ভেঞ্চার সিআরইসি ও সিসিইসিসি এবং বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তারা নিজ নিজ পক্ষে সই করেন।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মফিজুর রহমান আজাদীকে জানান, আগামী নভেম্বরের দিকে কাজ শুরু হবে। প্রথম ধাপে দোহাজারী থেকে চকরিয়া এবং দ্বিতীয় ধাপে চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ হবে। দুটি ধাপে এ রেল লাইনের নির্মাণ কাজ ২০১৮ সালে শেষ হবে। আর ২০২১ সালের আগেই এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হবে। প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান জানান, চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেল লাইন নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ১৮ হাজার ২০ কোটি টাকা। মোট ৪ কিস্তিতে ১৫শ’ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দিবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)।
তিনি জানান, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এরপর চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত কাজ শুরু হবে। সেটি আলাদা একটি প্রকল্প। বহুল প্রত্যাশিত চট্টগ্রাম থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজার পর্যন্ত রেল লাইনের এই প্রকল্পটি অর্থ সংস্থান না হওয়ায় বছরের পর বছর আটকে ছিল। গত জুলাই মাসে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ১৫শ’ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তার চুক্তির পর অবশেষে বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্প। প্রথম কিস্তির ৩০০ মিলিয়ন ডলার প্রদানের জন্য গত জুলাই মাসের ২১ তারিখ এডিবি ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে চুক্তি স্বা র হয়েছে। প্রথম কিস্তি বাস্তবায়িত হলে দ্বিতীয় কিস্তির ৪০০ মিলিয়ন ডলার এরপর তৃতীয় কিস্তির ৫০০ মিলিয়ন ডলার এবং চতুর্থ কিস্তির ৩০০ মিলিয়ন ডলার ছাড় দিবে এডিবি।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, মোট ১২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রাম–কক্সবাজার–ঘুমধুম রেলপথ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী থেকে শুরু হয়ে সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলা, কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, রামু, হয়ে কক্সবাজার সদর ও উখিয়া উপজেলা হয়ে বান্দবান পার্বত্য জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম পর্যন্ত (মিয়ানমার সীমান্ত) যাবে। কিন্তু প্রথম পর্যায়ে চন্দনাইশের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেল লাইন নির্মাণ করা হবে। পরবর্তীতে কক্সবাজার থেকে মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন ঘুমধুম পর্যন্ত রেল লাইন নির্মাণ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।
এই প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসককে সাড়ে ২২শ’ কোটি টাকা জমা দিয়েছে সরকার। গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের টাকা দিয়েছে সরকার এবং মূল প্রকল্পের টাকা দিচ্ছে এডিবি। -আজাদী প্রতিবেদন