এলনিউজ২৪ডটকম : লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুব আলম দক্ষিণ সাতকানিয়া গোলামবারী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী মেধাবী ছাত্র আসিবুল হাসান সাজিদকে দেয়া কথা রেখেছেন। সাজিদ এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ৩.৫৬ পেয়েছে। আজ ৬ মে ইউএনও কার্যালয়ে সাজিদকে তুলে দেন তার পছন্দের ল্যাপটপ ও টার্কি মুরগি।

সাজিদের বাবা পল্লী চিকিৎসক মোঃ ইব্রাহিম জানিয়েছেন, তার ছেলে কঠিন দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত। প্রতিদিন সাজিদ ৩ বার অসুস্থ হন। তারপরও লেখাপড়ার প্রতি তার প্রবল ইচ্ছা। সে আরো লেখাপড়া করতে আগ্রহী। সাজিদ ভবিষ্যতে প্রাণী সম্পদ নিয়ে গবেষণা করতে চান বলে জানিয়েছেন তার পিতা।

গত ৬ ফেব্রুয়ারী এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করতে গিয়ে মেধাবী ছাত্র আসিবুল হাসান সাজিদের সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে দেখা হয়। সাজিদকে নিয়ে ইউএনও তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে মন্তব্য দিয়েছেন। তা হুবহু তুলে ধরা হল-
।।। সাজিদকে প্রথম হলে দেখে মিলাতে পারছিলাম না।আসলেই সে এবার এসএস সি পরীক্ষা দিচ্ছে। আমি নিশ্চিত সাজিদকে যে দেখবে সে আমার মত অবাক হবে! উচ্চতা, অবয়বে বড়জোর ক্লাস ফাইভে পড়ে মনে হবে।
।।। মেধাবী সাজিদের গল্প বড়ই নিষ্ঠুর। বাবার মা’র পরম আদরের কনিষ্ঠ তনয়। বড় তিন সন্তানের মতই মেধার স্বাক্ষর রেখেই সেও বড় হয়ে উঠছিল। কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতন ঘটে। অজানা এক ব্যাধি তাকে শক্তভাবে আলিংগন করে। প্রতিদিন নিয়ম করে তিন বেলা মাথার পেছনের নিম্নাংশে অর্থাৎ ঘাড়ে নিদারুণ অসহনীয় এক ব্যথা তাকে ভোগ করতে হয়। দৈনিক সকাল ৭টা, বেলা১১ঃ৩০টা, সন্ধ্যে ৭টা এ কষ্ট শুরু হয়। ১৫ মিনিট স্থায়ী হয়। নিষ্পাপ বালকটি প্রথম ৫ মিনিট ঘাড় চেপে কোনরকম এ যন্ত্রণা সহ্য করে, মাঝের ৫ মিনিট প্রচণ্ড ব্যথায় সারা শরীর কুঁকড়ে যায়, চোখের পানি ছেড়ে খুব কাঁদে, পরের ৫ মিনিটে ব্যথা শিথিল হয়ে আসে। ব্যধিটি তার শারীরিক বৃদ্ধির চাকাও থামিয়ে দিয়েছে। ৪ বছর ধরে এভাবেই কাটছে।
।।। পরীক্ষা চলাকালীন একবার এ যন্ত্রণা উঠে। হলে নিয়োজিত মেডিকেল য়্যাসিসট্যান্ট জানালেন-ব্যথা আরম্ভ হলে নিভৃতে কক্ষ থেকে সে বের হয়ে যায়। অতঃপর সিঁড়িপথে কঠিন সময়টুকু পার করে আবার নিরবে রুমে ঢুকে। এ সময়টাতে তার বাবা সাথে থাকেন। হলে তাঁকে স্পেশালি পারমিশন দেয়া হয়েছে। দিতে চাইলেও সাজিদ তার নষ্ট হওয়া সময়টুকু (১৫মিনিট) নিতে চায়না।
।।। সন্তানের কষ্টে বাবা-মাও ভিষণ কাঁদে। সামর্থের মধ্যে চিকিৎসার চেষ্টা করে আসছে। আদতে তার সমস্যাই নিশ্চিত করা যায়নি। আমার বন্ধু তালিকায় যারা আছেন কিম্বা যার নজরে এ পোস্টটি আসবে – এ সমস্যা সম্পর্কে যদি জানা থাকে কিম্বা যদি ভাল পরামর্শ থাকে অনুগ্রহ করে কমেন্ট বক্সে লিখে জানাবেন। খুব কৃতজ্ঞ হব।
।।। সাজিদ অনেক বড় হতে চায়। তার ইচ্ছা এস এস সি দিয়েই সে শহরে গিয়ে তার ভাইয়ের মত নামকরা প্রতিষ্ঠানে পড়বে। বড় শিক্ষিত হবে সে। আর শিশুদের সাথে খেলতে চায়না। আনমনা হয়ে বড়দের দিকে তাকিয়ে থাকতে চায়না।
।।। সাজিদের পাশে থাকতে চাই। তার কষ্ট আমাদেরও কাঁদায়।