ব্রেকিং নিউজ
Home | ব্রেকিং নিউজ | অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ পদ শূন্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেমে এসেছে স্থবিরতা

অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ পদ শূন্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেমে এসেছে স্থবিরতা

এলনিউজ২৪ডটকম: লোহাগাড়া উপজেলা সদরে অবস্থিত আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান কলেজ বর্তমানে চরম নেতৃত্ব সংকটে ভুগছে। দীর্ঘদিন ধরে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদ শূন্য থাকায় একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমে নেমে এসেছে স্থবিরতা। গতো এক বছরে তিন বার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হলেও, স্থায়ী নিয়োগের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি কর্তৃপক্ষ। এতে করে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীসহ শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।

জানা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ পদ শূন্য হলে ৬ মাসের মধ্যে, বিশেষ পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ এক বছরের মধ্যে নিয়মিত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু মোস্তাফিজুর রহমান কলেজে সেই নিয়ম উপেক্ষা করে দীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের মাধ্যমে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। সম্প্রতি কলেজ গভর্নিং বডি নিয়ম লঙ্ঘন করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের মাধ্যমেই উপাধ্যক্ষ নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। যদিও গভর্নিং বডির বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে বিষয়টি ছিল না, তবুও রেজুলেশনে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কলেজের অভ্যন্তরীণ পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলেও জানা গেছে। শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, নিয়ম বহির্ভূত এসব সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক শৃঙ্খলা এবং শিক্ষার মানে বড় ধাক্কা দিচ্ছে। অভিভাবক ও সচেতন মহল নিয়ম মেনে দ্রুত নিয়মিত অধ্যক্ষ নিয়োগ এবং গভর্নিং বডির স্বচ্ছ ভূমিকা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ আগস্ট কলেজে নিয়মিত অধ্যক্ষ নিয়োগের লক্ষ্যে একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। কিন্তু কলেজ গভর্নিং বডি ওই নির্দেশনা উপেক্ষা করে গত ২০ আগস্ট উচ্চ মাধ্যমিক গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ ইলিয়াছকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেন, যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। শুধু তাই নয়, গত ১৪ আগস্ট কলেজে বিএসসি (পাস) কোর্সে টানা ১২ বছর শিক্ষার্থী ভর্তি না হওয়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোর্স বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গভর্নিং বডির একাধিক সদস্য অভিযোগ করে বলেন, বিধিবহির্ভূত পদায়নের বিষয়ে আপত্তি তুললে তাদের হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। এতে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। তারা মনে করেন, নিয়মবহির্ভূত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করলেই ব্যবস্থা নেওয়ার ভয় দেখানো হয়, যা স্বাভাবিক মত প্রকাশের পরিবেশকে রুদ্ধ করে দিচ্ছে।

এদিকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানান, নিয়মিত অধ্যক্ষ না থাকায় একাডেমিক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে, প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে ধীরগতি তৈরি হয়েছে এবং শিক্ষার মানও ক্ষতির মুখে পড়েছে। তারা বলেন, নিয়ম লঙ্ঘন করে যেভাবে ভারপ্রাপ্ত পদায়ন করা হয়েছে, তাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বড় অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ অবস্থায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা নিয়ম মেনে দ্রুত স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগ এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন, যাতে কলেজের একাডেমিক পরিবেশ ও ভাবমূর্তি রক্ষা পায়।

কলেজের অধ্যাপক আহমদ কবির জানান, একটি কলেজে নিয়মিত অধ্যক্ষ থাকা শুধু প্রয়োজনীয় নয়, বরং অপরিহার্য। কারণ নিয়মিত অধ্যক্ষ থাকলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুশৃঙ্খল পরিবেশ গড়ে ওঠে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি হয় এবং একাডেমিক কার্যক্রমে গতি আসে। বর্তমানে পরপর তিনজন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দায়িত্ব পালন করলেও, তা দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নয়। গভর্নিং বডি যদি দ্রুত নিয়মিত অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম অনেক বেশি কার্যকর এবং গতিশীল হবে।

কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি মো. শফিক উদ্দিন জানান, আমরা শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। কলেজের প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা আনতে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই এই দুটি পদে যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হবে, যাতে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম আরও উন্নতির পথে এগিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে জানতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শকের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তাই এই ব্যাপার তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!