ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | স্ত্রীর নামে জমি কিনে কোটি টাকার আলিশান বাড়ি সাংবাদিক নির্যাতনকারী নাজিমের

স্ত্রীর নামে জমি কিনে কোটি টাকার আলিশান বাড়ি সাংবাদিক নির্যাতনকারী নাজিমের

নিউজ ডেক্স : সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড দেয়া কুড়িগ্রামের বর্তমান রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) নাজিম উদ্দীনের বাবা ছিলেন ঘরজামাই। যশোরের মনিরামপুর উপজেলার দরিদ্র পরিবারের নাজিম উদ্দীন এখন কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক।

দিনমজুরের সন্তান নাজিম উদ্দিন নামে-বেনামে এসব সম্পদের মালিক বনে গেছেন। স্ত্রী-শ্বশুরের নামে কোটি টাকার জমি কিনে আলিশান বাড়ি নির্মাণ করেছেন। মনিরামপুর পৌরশহরে আট শতাংশ জমির ওপর পাঁচতলা বাড়ি নির্মাণাধীন তার। ইতোমধ্যে চারতলার কাজ শেষ হয়েছে। সরেজমিনে ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়। -জাগো নিউজ

সরেজমিনে মনিরামপুরের কাশিপুর গ্রামে গেলে স্থানীয়রা জানান, উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের মৃত নিছার আলীর ছেলে নাজিম উদ্দীন। বাবা নিছার আলী ঘরজামাই থাকতেন কাশিপুর গ্রামে। দরিদ্র পরিবারের সন্তান নাজিম উদ্দীন মেধাবী হওয়ায় লেখাপড়ায় স্থানীয়রা সহযোগিতা করেছেন। তার দিনমজুর বাবা ছিলেন জামায়াত সমর্থক। প্রথমে নিছার আলী ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করেছেন।

বাবা জামায়াত সমর্থক হলেও নানার পরিবার আওয়ামী লীগ সমর্থক হওয়ায় নাজিম উদ্দীনের উপরে ওঠার সিঁড়ি পেতে অসুবিধা হয়নি। নাজিম উদ্দীন মনিরামপুর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে মনিরামপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজে লেখাপড়া করেন।

একই কলেজের ছাত্রলীগের তৎকালীন আহ্বায়ক সন্দীপ ঘোষ বলেন, নাজিম উদ্দীন ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ছিলেন। পরে অন্য কোনো সংগঠনে গেছেন কি-না আমার জানা নেই।

নাজিম উদ্দীনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার, বাগেরহাট ও মাগুরার মহাম্মদপুরে সহকারী কমিশনার (ভূমি) থাকাকালীন ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের অভিযোগসহ এক বৃদ্ধকে টেনেহিঁচড়ে মারতে মারতে নিয়ে যাওয়ার ভিডিও ইতোমধ্যে ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এসিল্যান্ড থাকাকালীন ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করে নাজিম বিপুল অর্থের মালিক হয়ে যান বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, মনিরামপুর পৌর এলাকার ৯৩ নম্বর গাংড়া মৌজার ৫৯৬ দাগের (আরএস চূড়ান্ত) ২৫ শতক জমির মধ্যে ১৪.৬৯ শতাংশ জমি ৪৬ লাখ টাকায় কিনেছেন নাজিম। গাংড়া গ্রামের আকবর আলীর কাছ থেকে ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই তার শ্বশুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক (অব.) আব্দুর রাজ্জাকের নামে রেজিস্ট্রি করা হয়। কিন্তু জমির সেলামি তোলা হয় ৩০ লাখ টাকা।

জমিদাতা (সাবেক মালিক) আকবর আলী বলেন, স্থানীয় মোসলেম উদ্দীনের মধ্যস্থতায় ৪৬ লাখ টাকায় ওই জমি বিক্রি করেছি, যা আব্দুর রাজ্জাকের জামাই ম্যাজিস্ট্রেট নাজিম উদ্দীন কিনেছেন। কিন্তু দলিল করা হয় নাজিম উদ্দীনের শ্বশুর আব্দুর রাজ্জাকের নামে।

পাশাপাশি মনিরামপুর ৯৪ নম্বর মৌজায় ৮৩ খতিয়ানের ১৩২ দাগে ৩২.২৫ শতকের মধ্যে ৮ শতক জমি ১৩ লাখ কেনা হয়। উপজেলার কাজির গ্রামের মো. মোকলেছুর রহমানের কাছ থেকে ৬ শতক এবং তার স্ত্রী নাজমুন নাহার রুপার কাছ থেকে ২ শতকসহ মোট ৮ শতক জমি নাজিম উদ্দীনের স্ত্রী সাবরিনা সুলতানার নামে ২০১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রি করা হয়।

রেজিস্ট্রিকৃত জমি নাজিম উদ্দীনের স্ত্রী সাবরিনা সুলতানার নামে হলেও সেখানে স্বামীর নাম না দিয়ে বাবা (নাজিম উদ্দীনের শ্বশুর) আব্দুর রাজ্জাকের নাম দেয়া হয়েছে। এই জমির ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে পাঁচতলা বিশাল বাড়ি। ইতোমধ্যে যার চারতলা সম্পন্ন হয়েছে।

ভবন নির্মাণে কর্মরত শ্রমিক লিটন হোসেন জানান, গত এক বছর ধরে বিশাল বাড়িটির নির্মাণকাজ করছেন। শহিদুল ইসলাম শহীদ নামের এক ব্যক্তি কাজের কন্ট্রাক্ট নিয়েছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে লিটন বলেন, ভবনটি মাস্টারের জামাই (আব্দুর রাজ্জাক) নাজিম উদ্দীন নির্মাণ করছেন। আতিয়ার রহমান নামের প্রধান রাজমিস্ত্রি জানান, এ পর্যন্ত আনুমানিক দেড় কোটি টাকা খরচ হয়েছে বাড়ি নির্মাণে।

এ বিষয়ে নাজিম উদ্দীন বলেন, আমার শ্বশুর পেনশনের টাকায় গাংড়া মৌজায় জমি কিনেছেন। শ্বশুরের কিনে দেয়া স্ত্রী সাবরিনা সুলতানার নামের ৮ শতক জমিতে ভবন নির্মাণ করছেন প্রবাসী শ্যালিকা। আসলে আমার কিছুই নেই।

তবে নাজিম উদ্দীনের কথার সত্যতা মেলেনি মনিরামপুর উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের তথ্যে। ওই অফিস সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ১ মার্চ অবসরে যান নাজিম উদ্দীনের শ্বশুর আব্দুর রাজ্জাক। অবসরের চারদিন পর পেনশনের ৮ লাখ ১৭ হাজার ৬০০ টাকা উত্তোলন করেন তিনি।

জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, পেনশনের টাকা দিয়ে আট বছর পর কীভাবে ৪৬ লাখ টাকায় জমি কিনলেন নাজিম উদ্দীনের শ্বশুর আব্দুর রাজ্জাক। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হলে টাকার উৎস্য সম্পর্কে সত্য উদঘাটন হবে বলে অনেকেই মনে করেন।

এরই মধ্যে সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড দেয়ার ঘটনায় নাজিম উদ্দীনসহ কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) কার্যালয়ের তিন ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে আদেশ জারি করা হয়।

একই সঙ্গে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) সুলতানা পারভীনকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। সোমবার (১৬ মার্চ) উপ-সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা সুলতানাকে পরবর্তী পদায়নের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করে আদেশ জারি করা হয়।

গত শুক্রবার (১৩ মার্চ) মধ্যরাতে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামের বাড়িতে হানা দিয়ে তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এক বছরের কারাদণ্ড দেয় জেলা প্রশাসন। তখন ঘরে কোনো তল্লাশি চালানো না হলেও পরে ডিসির কার্যালয়ে নেয়ার পর তারা দাবি করেন, আরিফুলের বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড়শ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে। এই ঘটনা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!