ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | সোনাদিয়া দ্বীপে ক্ষতিকর মাছি তাড়াতে ছাড়া হলো ২ লাখ বন্ধ্যা মাছি

সোনাদিয়া দ্বীপে ক্ষতিকর মাছি তাড়াতে ছাড়া হলো ২ লাখ বন্ধ্যা মাছি

নিউজ ডেক্স : ক্ষতিকর মাছির উপদ্রব কমিয়ে কীটনাশকমুক্ত ও স্বাস্থ্যকর শুটকি উৎপাদনের জন্য কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপে ছাড়া হয়েছে ২ লাখ বন্ধ্যা মাছি। গবেষণাগারে উৎপাদিত এই বন্ধ্যা মাছি দিয়েই দমন করা হবে শুটকির জন্য ক্ষতিকারক বন্য মাছি।

পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান খাদ্য ও বিকিরণ জীববিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের বিকিরণ কীটতত্ত্ব ও মাকড়তত্ত্ব বিভাগের প্রধান ড. এটিএম ফয়েজুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী গতকাল বুধবার দুপুরে সোনাদিয়া দ্বীপে এই বন্ধ্যা মাছি অবমুক্ত করেন। এসময় বিএফআরআইর সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রের প্রধান ড. শফিকুর রহমান, বিকিরণ কীটতত্ত্ব ও মাকড়তত্ত্ব বিভাগের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুহসিনা ইয়াসমিন ও মো. শাহিনুর ইসলাম, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন এবং বৈজ্ঞানিক সহকারী মো. আবুল কালাম আজাদসহ স্থানীয় শুটকি উৎপাদকরা উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় শুটকি উৎপাদক আমানউল্লাহ জানান, ২০০৭ সালেও সোনাদিয়া দ্বীপে ক্ষতিকর মাছির উপদ্রব কমাতে বন্ধ্যা মাছি ছাড়া হয়েছিল। এরপর ক্ষতিকর মাছির উপদ্রব একদম কমে যায় এবং শুটকির উৎপাদন ও গুণগত মানও বৃদ্ধি পায়। আরেক শুটকি উৎপাদক নুর মোহাম্মদ বন্ধ্যা বলেন, ওই বছর (২০০৭ সালে) বন্ধ্যামাছি ছাড়ার কারণে সোনাদিয়া দ্বীপে কীটনাশকমুক্ত ও স্বাস্থ্যকর শুটকি উৎপাদন করা সম্ভব হয়। এতে শুটকির মূল্যও পাওয়া যায় আগের তুলনায় দ্বিগুণ।

পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান খাদ্য ও বিকিরণ জীববিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের বিকিরণ কীটতত্ত্ব ও মাকড়তত্ত্ব বিভাগের প্রধান ড. এটিএম ফয়েজুল ইসলাম জানান, কীটনাশকমুক্ত, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর শুটকি উৎপাদনের জন্য আগামী সপ্তাহে দেশের বৃহত্তম শুটকিপল্লী শহরের নাজিরারটেকে আরো বড় পরিসরে এ বন্ধ্যামাছি অবমুক্ত করা হবে। আর এ বন্ধ্যাকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করেই মাছি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কঙবাজারে শুটকির উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তারই লক্ষ্যে ইতোমধ্যে শহরের কলাতলীস্থ সৈকত খনিজ বালি আহরণ কেন্দ্রে প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা হয়েছে একটি গবেষণাগার ও প্রযুক্তি কেন্দ্র। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের উদ্ভাবিত এই পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতিবছর শুটকির উৎপাদন প্রায় এক তৃতীয়াংশ বাড়ানো সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন (১.২মিলিয়ন টন) সামুদ্রিক ও স্বাদু পানির মাছ উৎপাদিত হয়। যার মধ্যে প্রায় ১৫% মাছকে সূর্যের তাপে শুকিয়ে শুটকিতে রূপান্তর করা হয়। তবে মাছ রোদে শুকানোর সময় লিওসিনিয়া কাপ্রিয়া নামের এক প্রজাতির ক্ষতিকারক মাছির আক্রমণে প্রায় ৩০% শুটকিই নষ্ট হয়ে যায়। এরমধ্যে দেশের বৃহত্তম শুটকি মহাল নাজিরারটেকেই নষ্ট হয়ে যায় বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকার শুটকি। আর এই মাছির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য শুটকি উৎপাদকরা মাছে বিষ প্রয়োগ করছে অথবা অতিরিক্ত লবণ প্রয়োগ করছে। যার ফলে ভোক্তা ও উৎপাদক উভয়েরই স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। আবার এ কারণে শুটকির গুণগত মানও কমে যাচ্ছে এবং উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। যার দরুন বাজার মূল্য কমে যাচ্ছে এবং শুটকি মাছ বিদেশে রপ্তানি করা যাচ্ছে না। এসব বিবেচনা করে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন মাছি বন্ধ্যাকরণ পদ্ধতির মাধ্যমে শুটকি মাছের ক্ষতিকর পোকা দমনের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে বলে জানান পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান খাদ্য ও বিকিরণ জীববিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের বিকিরণ কীটতত্ত্ব ও মাকড়তত্ত্ব বিভাগের প্রধান ড. এটিএম ফয়েজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তি হলো একধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে কোনো এলাকায় বন্য মাছির কয়েকগুণ বন্ধ্যামাছি ছাড়া হয়। এরপর বন্ধ্যা মাছির সাথে ক্ষতিকর মাছির মেলামেশায় যে ডিম জন্ম হয়, তা থেকে আর বাচ্চা ফোটে না। এভাবে ধীরে ধীরে সেই মাছির বংশ কমে যায়। তবে ক্ষতিকর মাছির নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রতি দুই মাস অন্তর একবার করে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে বলে জানান তিনি।

আন্তর্জাতিক উদ্ভিদ সংরক্ষণ কনভেনশনও এই বিকিরণ প্রয়োগ পদ্ধতিতে বন্ধ্যাকৃত পোকামাকড়কে একটি লাভজনক প্রাণি এবং বন্ধ্যাকরণ পদ্ধতিকে একটি ধ্রুপদি প্রযুক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যে পদ্ধতিতে অস্থানীয় বা বিজাতীয় পোকামাকড় ব্যবহার করা হয় না। আজাদী প্রতিবেদন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!