নিউজ ডেক্স : ‘ধিক্কার, ধিক্কার’ রব ওঠে। শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। তবু শিশুদের ওপর নিপীড়ন বন্ধ হচ্ছে না। উল্টো ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে শিশুকে শারীরিক শাস্তি, সহিংস আক্রমণ, ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা, হত্যার পর শিশুর লাশ টুকরো করে ফেলে দেওয়া, অপহরণ, ধর্ষণের মতো একের পর এক ঘটনা। ২০২২ সালে চট্টগ্রাম নগরী ও জেলায় ২৭টি শিশুকে হত্যা করা হয়। এর মধ্যে নগরীতে ৯টি শিশু খুনের ঘটনা ঘটে। জেলায় এমন ঘটনা ঘটেছে ১৮টি।
সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন বিষয়টি অমানবিক ও দুঃখজনক আখ্যা দিয়ে বলেন, বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ, পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতার অভাব ও বিকৃত মানসিকতার কারণে শিশুর প্রতি এমন নির্মমতা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। পাশাপাশি মানসিক অস্থিরতা, স্বামী-স্ত্রীর পরকীয়ার কুপ্রভাব ও মাদকাসক্তির কারণেও সর্বস্তরে শিশুরা প্রতিহিংসার বলি হচ্ছে। শিশু আইন ২০১৩-এর ৭০ ধারা অনুযায়ী শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক নিষ্ঠুর আচরণ শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ। আইনে বলা আছে, কোনো শিশুকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করার ঘটনা বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত ২৭, ৩১, ৩২ ও ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদে বর্ণিত সাংবিধানিক অধিকারসমূহের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কিন্তু আইন থাকলেও তার প্রয়োগ নেই। অপরাধের প্রেক্ষাপটে ইতিবাচক পরিবর্তন দৃশ্যমান হচ্ছে না। ফলে নির্মমতার বলি হচ্ছে শিশুরা।
২০২২ সালে চট্টগ্রামে আয়াত, সুরমা, বর্ষা আর ইলমাদের মতো অনেক শিশু নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছে। খুন, ধর্ষণ, অপহরণ ও নির্যাতনের নির্মম শিকার হয়েছে অনেক শিশু-কিশোর। শিশুর প্রতি ভয়ানক সহিংসতার ঘটনা বছর জুড়েই ছিল আলোচনায়।
গত বছরের ১৫ নভেম্বর ৫ বছরের শিশু আয়াতকে অপহরণের পর খুন করে লাশ ছয় টুকরো করা হয়। বস্তা ভরে সে লাশ ভাসিয়ে দেওয়া হয় সাগরে ও খালে। দশ দিন পর বিষয়টি জানাজানি হয়। পিবিআই মূল আসামি আবির আলীকে পাকড়াও করে। আবির স্বীকার করে আয়াতের দাদার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করতে শিশুটিকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়।
২৫ অক্টোবর সীতাকুণ্ডের কদমরসুল এলাকায় তিন মাসের এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনারও কোনো কূল-কিনারা হয়নি। ২৪ অক্টোবর নগরীর জামালখান এলাকায় গলির দোকানে চিপস কিনতে গিয়ে নিখোঁজ হয় শিশু মারজান হক বর্ষা। তিন দিন পর তার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করা হয় গলির মুখে একটি নালা থেকে। তাকে ধর্ষণের পর খুন করে লাশ বস্তায় ভরে নালায় ফেলে দেওয়া হয়।
১৫ অক্টোবর নগরীর বন্দর থানার কলসিদিঘির পাড় জালাল কলোনির একটি বাসায় শিশু ইলমাকে হত্যা করা হয়। সন্তানকে হত্যা করে লাশ বাসায় রেখে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা মা বিউটি আক্তারকে আটক করে পুলিশে দেয়। পরে পিবিআই বিউটির পরকীয়া প্রেমিক মো. মনিরুল মোল্লা ওরফে মনির হোসেনকে পাকড়াও করে।
১৮ সেপ্টেম্বর পোর্ট কলোনির ৮ নম্বর সড়কের মুখে পরিত্যক্ত একতলা বাড়ির ভেতর থেকে সুরমা আক্তার নামে সাত বছরের এক শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বড়পোল এলাকার একটি বস্তির বাসিন্দা রিকশাচালক মো. কাউছারের মেয়ে সে। এক মাসের প্রচেষ্টায় পুলিশ ওই ঘটনায় জড়িত এক রিকশা চালককে পাকড়াও করে।
১৯ আগস্ট রাউজান সদরে পাঁচ মাস বয়সী শিশু জাহান চৌধুরীর লাশ পাওয়া যায়। ১৫ জুন হাটহাজারীর বুড়িশ্চরে ঘরে হানা দিয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় সাড়ে তিন বছরের শিশু মুহাম্মদ ওয়ালিদকে। ২৮ এপ্রিল লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর এলাকায় ১১ বছরের এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়। মো. সোহান নামে ওই শিশু মানসিক প্রতিবন্ধী ছিল। এই ঘটনার রহস্যও জানা যায়নি।
৫ মার্চ বোয়ালখালী উপজেলার চরণদ্বীপে মাদরাসার ছাত্র মালেকুল মাশফিকে (৭) গলা কেটে হত্যা করা হয়। তদন্তে পিবিআই নিশ্চিত হয় এই খুনের সাথে তার তিন সহপাঠী জড়িত। সম্প্রতি নগরীতে কয়েকটি শিশু অপহরণ ও চুরির ঘটনাও ঘটে। অপহৃত শিশুকে বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। -আজাদী প্রতিবেদন