Home | সাহিত্য পাতা | মেঘের আড়াল থেকে (পর্ব- ৪)

মেঘের আড়াল থেকে (পর্ব- ৪)

429

শীলা ঘটক : সারাদিন আকাশ ফেসবুক খুলল না সেদিন। মনটা ভালো নেই, আকাশ কে আনমনা দেখে আকাশের মা তপতীদেবী জিজ্ঞেস করেন, ‘কি হয়েছে সোনা তোর? বাড়িতে এলেই দেখি মোবাইল খুলে বসে থাকিস। অফিসের খবর ভালো তো? মায়ের কথা শুনে আকাশ চোখ তুলে তাকায়। ‘না মা সব ঠিক আছে তুমি চিন্তা করোনা। বাবা কি করছে?

‘সে তো একটু বের হোল দেখলাম, কোথায় গেল কে জানে?’
‘তুমি আমাকে কিছু খেতে দাও, খিদে পেয়েছে। খেয়ে নিয়ে বের হবো, কাজ আছে’। আকাশ কিছুটা ইচ্ছে করেই মাকে এড়িয়ে গেল।
‘এই তো ফিরলি কিছুক্ষণ আগে, আবার কোথায় যাবি এখন?’ মা প্রশ্ন করে।
‘বললাম যে কাজ আছে’।

সারাদিন আকাশকে ফেসবুক খুলতে না দেখে তিতির খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে! মনে মনে ভাবে, আকাশ কি আবার সরে গেল! নাকি অসুস্থ? একটা ফোন করে যে খবর নেবে তারও উপায় নেই। এতো কথা হোল নম্বরটা চাইতে তিতির ভুলে গেছিল। মনটা খুব উতলা হয়ে উঠলো কি করবে কিছুই ভেবে পায়না! মোবাইল পাশে রেখে তিতির বিছানায় শুয়ে পড়লো। কি হোল ওর!! আকাশ কি রাগ করলো? এইসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে তিতির ঘুমিয়ে পড়লো।

ঘুম ভাঙতে মোবাইল খুলতেই দ্যাখে আকাশ লিখে রেখেছে, ‘কি করছিস? সারাদিন একদম ভালো লাগছিল না তাই ফেসবুকে আসিনি’।
ম্যাসেজটা পড়েই তিতির ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। তিতির বুঝতে পারে আকাশের মন খারাপের কারণ কি। মনে মনে ঠিক করে আর কোনদিন ওর কাছে অতীতকে তুলে আনবে না, ধড়ফড় করে উঠে তিতির লিখতে থাকে, ‘সারাদিন আমার কি প্রচণ্ড খারাপ লেগেছে তুই ফিল করতে পারছিস?
‘পারছি’

‘তাহলে আমায় কষ্ট দিলি কেন?’ (অভিমানের স্টিকার)
‘আর দেবো না বল কি করছিস?’
‘কিছুনা, সারাদিন শুয়ে আছি, কিছু ভালো লাগছে না’।
‘খাওয়া দাওয়া করেছিস?’
‘না, করিনি’।

‘ আগে উঠে কিছু খা নাহলে কোন কথা বলবো না, আমি একটু পরে আসছি, তুই আগে খেয়ে নে’। আকাশ লিখতে থাকে।
‘ না না তুই যাবি না, আমি কথা বলতে বলতে ঠিক খেয়ে নেবো’।
আকাশ মনে মনে হাসে, পাগলামিটা একরকমই আছে। ‘আচ্ছা আমি যাচ্ছি না, খেয়ে নে’।

তিতির কতকগুলো চকলেট নিয়ে এসে বসে। খেতে খেতে লিখতে থাকে, ‘সারাদিন অন হলি না কেন?’
‘তুই খেয়েছিস?’ আকাশ প্রশ্ন করে।
‘খাচ্ছি তো’
‘কি খাচ্ছিস?’
‘চকলেট’
‘চকলেট? পেট ভরবে তাতে?’ ইস্‌ বাচ্চাদের মতো এখনো চকলেট খায়।(হাসির স্টিকার)
‘জেনেভার চকলেট খুব বিখ্যাত জানিস। দারুণ খেতে, এবার যখন কোলকাতায় যাবো, তোর জন্য চকলেট নিয়ে যাবো’।
‘না না আমার জন্য নিয়ে আসতে হবেনা, আমি তোর মতো বাচ্চা নই যে চকলেট খাবো, হা হা হা’।
‘আগে খাবি তারপর বলবি। কি দারুণ খেতে!’
‘আচ্ছা তুই জেনেভা গেলি কেন? আকাশ জানতে চায়।
‘আমার বাবার মদের বিসনেস তুই তো জানিস, তুই চলে যাবার পর আমি ঘর থেকে বের হওয়া একদম বন্ধ করে দিয়েছিলাম। সারাদিন নিজের ঘরে দরজা বন্ধ করে দিয়ে থাকতাম। মা বুঝেছিল এইভাবে যদি বেশীদিন চলতে থাকে তাহলে আমি অসুস্থ হয়ে পড়বো। বাবার এক বন্ধু তখন এই বিয়ের সম্বন্ধটা নিয়ে আসে। পারেখ আঙ্কেল, অবাঙালি ভদ্রলোক, ওনারও মদের ব্যবসা। উনি একদিন বাবার কাছে রকির খবরটা দিলেন’।
‘রকি কে?’ আকাশ জানতে চায়।
‘বলবো বলবো সব বলবো, ধীরে বৎস ধীরে’।
তিতির আবার লিখতে থাকে……
‘পারেখ আঙ্কেল বাপিকে জানালো ছেলে জেনেভাতে একটা ঘড়ি কোম্পানিতে চাকরি করে। মোটা টাকা মাইনে। বিশাল অবস্থা ছেলেদের। প্রচুর পয়সা। আর তুই তো জানিস আমার বাবা,মা স্ট্যাটাস বলতে বোঝে পয়সা। যাদের পয়সা আছে তাদের স্ট্যাটাস আছে আর যাদের পয়সা নেই তাদের কিছুই নেই’।
‘তারপর?’

তারপর আর কি মহা ধুমধাম করে, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে রকির সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দিল। বিয়ের একমাস পর রকির সাথে এলাম জেনেভাতে খুব সুন্দর শহর। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। মনখারাপ নিমেষে উধাও হয়ে গেলো। দারুণ কাটতে লাগলো আমাদের দিনগুলো। হাসি, ঠাট্টা, আনন্দে ভরপুর! মাঝে মাঝেই আমরা গ্র্যান্ড থিয়েটার দে জেনেভাতে নাচ, গান, থিয়েটার দেখতে যেতাম। ভিক্টোরিয়া হলে ক্লাসিক্যাল মিউজিক কনসার্ট শুনতে যেতাম। রকি বুঝেছিল আমি এগুলো খুব ভালবাসি। তাই মাঝে মাঝেই নিয়ে যেত। অনেকসময় একই অনুষ্ঠান দুবার, তিনবার দেখতাম’।
‘বাহ্‌ ভালো তো,তাহলে খুব ভালো আছিস ওখানে বল’।
তিতির কিছু লিখতে পারেনা। শুধু কান্নার স্টিকারে ইনবক্স ভ’রে যায়!
আকাশ বুঝতে পারে তিতির ভালো নেই, খুব কষ্টে আছে ওখানে, কি লিখবে ভেবে পায়না!

‘তুই যদি কান্না বন্ধ না করিস আমি তাহলে কাল থেকে আর আসবো না আর কথাও বলবো না’। আকাশের লেখাটা দেখে তিতির লিখল, ‘সব বলবো তোকে কেমন আছি আমি এখানে’।

ক্রমশঃ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!