ব্রেকিং নিউজ
Home | ব্রেকিং নিউজ | জয়িতা যমুনায় যাবেনা

জয়িতা যমুনায় যাবেনা

সানজিদা রহমান:এক পশলা বৃষ্টির পর আকাশটা বেশ পরিস্কার।রমজানের নতুন চাঁদটা একদম হৃদয় ছোঁয়া! যেন অপার ভালোবাসার আমন্ত্রণ। সুকন্যা আর জয়িতা মা’মেয়েতে এই মাসটাতে অন্যরকম এক বন্ধুত্ব চলে। বিশেষ করে নামাজের সময়গুলোতে সুকন্যা তড়িঘড়ি মায়ের কাছ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পড়ে।
জয়িতার এমন অনেক সন্ধ্যা রাতে গড়ায়। রমজানের কিছু বাড়তি বাজার ঘাট করতেই হয়। অফিস ফিরতি পথে বাজারের দিকে এগোলো জয়িতা। আনুসাঙ্গিক তেল নুন আর চালের ভারী ব্যাগগুলো আলগাতে গিয়ে হাত প্রায় কেটে যায়। না হারতে চাওয়া জয়িতা জীবনের সাথে সন্ধি করেছে বারবার। একবার হরতাল চলাকালীন অফিস শেষে বাসায় ফিরছিলো জয়িতা। রাত প্রায় আটটা। কোন ট্যাক্সি নেই, হিউম্যান হলারে উঠলো অগত্যা! খানিকটা এগোতেই বিকট শব্দে বোমা বিস্ফোরণ! হুড়মুড় করে সবাইকে নামিয়ে দিলো। মুহূর্তগুলো বিভীষিকাময়। প্রায় দু’ ঘন্টা ফুটপাতে বসেছিলো একা। ভীষণ কান্না পাচ্ছিলো। কাঁদেনি একটুও। দূরপাল্লার একটা বাসকে অনেক অনুনয় করে ঐ পথটুকু পৌঁছে দিতে রাজি করিয়েছিলো ওরা ক’জন অসহায় মানুষ। সেদিন আরো কত কি হতে পারতো! কম সে কম এমন আরো ডজন খানেক ঘটনার বর্ণনা দেয়া যাবে এই বিপৎসঙ্কুল জীবনে। ভীষণ অসুস্থ বাবা যখন মুমুর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি, রাতের বাসে একা যাওয়া ছাড়া উপায় ছিলো না জয়িতার। কুমিল্লা পার হতেই সিকিউরিটি চেকিং এর জন্য সাদা পোশাকের পুলিশের তল্লাশি শুরু। জয়িতার হাতে একটা ব্যাকপ্যাক, ফতুয়া প্যান্ট পরেছিলো সেবার যাতায়াতের সুবিধার জন্য। তিন পুলিশ সদস্যের একজন হঠাৎ জয়িতার গায়ের একদম কাছে এসে বললো “চেক করবো” এবং মুহূর্তে কোলের উপর রাখা ব্যাগটার নীচে হাত দিতে চাইলো। দৃষ্টিটাই কী জঘন্য ছিলো ভাষায় বোঝানো অসম্ভব! জয়িতা ঝট করে উঠে দাঁড়িয়ে বললো, “ব্যাগে কি দেখতে চান আমি নিজেই দেখাচ্ছি, আপনি গায়ে হাত দেবেন না!” জয়িতার দৃঢ় উচ্চারণে তার শ্লাঘায় আঘাত লেগেছিলো বৈকি, আর সমস্ত ব্যাগের জামাকাপড় খুঁটিনাটি তছনছ করে শোধ নেবার বিশ্রী একটা প্রচেষ্টা চালালো। এসব দিন মনে পড়লেও অসুস্থ মনে হয় নিজেকে। পাশের সীটে বসা অল্প বয়সী যুবকটার চোখে অসহায় এক চাহনি ছিলো অথচ দুরাচারী পুলিশ সদস্যদের ভয়ে একদম নিশ্চুপ! ভেতরে ভেতরে অপরাধবোধ হচ্ছিলো এমন অন্যায় দেখে, কিন্তু নিজের জন্য বিপদ ডেকে আনবার মতো দুঃসাহসী সে হয়তো নয়!
চলতে চলতেই চলে গেছে জীবন নিজ গতিতেই। একটা সময় মনে হতো কেউ কেন পাশে নেই? এখন জয়িতা আর একটুখানি পা মচকে গেলেই কাঁদে না, মাঝরাতে প্রবল বজ্রপাতেও ভীষণ নির্লিপ্ত, ঘুম ভেঙে আবার ঘুমিয়ে পড়ে! এই জয়িতা তৈরি হয়েছে অনেক ত্যাগের বিনিময়ে! সব সত্যের আড়ালে একটা বড় সত্য, এখনো কারো হাত ধরে জোছনা দেখতে ইচ্ছে করে জয়িতার। সব স্বপ্ন সত্যি হয়ে গেলে কি জন্যে বাঁচবে জীবন? থাক, একটু বাকি থাক!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!