ব্রেকিং নিউজ
Home | উন্মুক্ত পাতা | মাদ্রাসা শিক্ষায় বিজ্ঞানময় কুরআন

মাদ্রাসা শিক্ষায় বিজ্ঞানময় কুরআন

33

মুহাম্মদ আবদুল খালেক : জ্ঞান মানে বুদ্ধি, বোধ, উপলব্ধি। পড়া হতে জ্ঞান আবার অন্যদিকে জ্ঞান হতে পড়া। বোধ-বুদ্ধি সম্পন্নরাই পড়তে পারে। আল্লাহকে জানতে হলে পড়তে হবে। পক্ষান্তরে নিজেকে চিনতে হলেও পড়তে হবে। বান্দা না পড়লে বন্দেগী করতে জানবে না। পড়লেই আল্লাহকে চিনবে। ‘পড়া’ শুদ্ধ না হলে বন্দেগী শুদ্ধ হবে না। বান্দার প্রতি প্রথম ওহী ‘পড়’। র্কা নামে পড়বে ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন’। এই ‘সৃষ্টি’ শব্দটির মাঝে বিশেষ বোধ-বুদ্ধি তথা বিজ্ঞান আছে। বান্দা বিশেষ সৃষ্টি। বিশেষ প্রক্রিয়ায় আল্লাহ বান্দাকে সৃষ্টি করেন এবং বিশেষ গড়নে। সৃষ্টির মাঝে বিশেষ সৌন্দর্য বান্দার। অতি গুরুত্বের মাধ্যমে আল্লাহ ব্যক্ত করেছেন। শুভ্র ধ্র“ব অপবিত্র তরল পদার্থের নির্যাষ; রক্ত এবং রক্তপিন্ড-এ’সব প্রক্রিয়া গবেষণালব্ধ। আশ্চর্য সৃষ্টি কৌশল অথচ বান্দা সবচেয়ে নিরীহ এবং আশরাফুল মাখলুকাত। মায়া-মমতায় বিশ্বাসে বান্দা-বান্দির একান্ত অনুরাগের হৃদয় স্পন্দিত জন্মলাভ বান্দার। আল্লাহর বিশেষ এবং অফুরন্ত রহমতের জন্ম-মৃত্যু ধারা। বান্দার মৃত্যুও রহমত। মৃত্যুর পরেই সান্নিধ্য আল্লাহর। মৃত্যুর পরেই প্রাপ্তি-জান্নাত।

সৃষ্টি, স্রষ্টা এবং জন্ম-মৃত্যুর যথাযথ উপলব্ধি ‘পড়ায়’। মসজিদ কেন্দ্রিক পড়া ক্রমান্বয়ে চাহিদার আলোকে মাদ্রাসা-মক্তব সৃষ্টি। ‘হেরা গুহা’ পড়ার এবং অনুভবের উৎস স্থল। বিজ্ঞানময় আসমানী গ্রন্থ ‘আল্ কুরআন’। মাদ্রাসা শিক্ষায় দু’ধারায় ইলম অধ্যয়ন হয়। দ্বীন’ত দুনিয়াকে অস্বীকার করে নয়। দ্বীনের মাঝে দুনিয়া। দ্বীনের পুস্পিত বিকাশ তথা সৌন্দর্য দুনিয়া। দুনিয়ার প্রত্যেক  সৃষ্টি বিশেষ কৌশলের ফ্রেম। তজ্জন্য সৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করা ইবাদত। বান্দার বন্দেগী হবে কুরআনের ভিত্তিতে। বন্দেগীর কৌশল মাদ্রাসায় শেখানো হয়। অন্যত্র নয়।

বন্দেগী চিন্তায়, গবেষণায়, উপলব্ধিতে এবং আনুষ্ঠানিকতায়। প্রত্যক্ষ বন্দেগী আর পরোক্ষ বন্দেগী। রূহের সমৃদ্ধি কখনো প্রকাশ্যে, কখনো অপ্রকাশ্যে। প্রকাশ আগে তারপর অপ্রকাশ। অন্তর জ্বালা বৃদ্ধির নামই আধ্যাত্মিকতা। বন্দেগীর মাঝে হই ও পরকালীন শান্তি-মুক্তি। দুনিয়া আল্লাহর, দ্বীনও আল্লাহর। মাদ্রাসা শিক্ষা বান্দা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। কোন কোন মাদ্রাসায় দুনিয়াধারী উপেক্ষিত, আবার অন্যত্র দুনিয়া প্রাধান্য। বন্দেগী অর্থের সমাগম ঘটায় না। অলি- বুজর্গরা দ্বীনে মত্ত ছিলেন বিধায় সৃষ্টি এবং জন্তুরা পর্যন্ত তাদের কথা শুনেছে।

মাদ্রাসা শিক্ষা আধুনিক কিংবা যুগোপযোগি, কোন্টা হলো? আকাশ, জল-স্থল, জোয়ার-ভাটা, মহাকাশ ও সৌরজগতে কারা অভিযান চালায়? মানব দেহের শিরা-উপশিরায় রক্তের স্পন্দন কারা পরিমাপ করে? উড়োজাহাজ কারা বানালো? রক্ত লাল কেন? কারা চিন্তা করে? মাদ্রাসা শিক্ষা মান পেলো! কিসের মান? বান্দা দুনিয়া চালাবে-এটাই নিয়ম। যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। ইলমের সব শাখা-প্রশাখায়। বিজ্ঞানীরা বল্ছে, হৃদপিন্ডের স্পন্দনের সাথে ‘আল্লাহ’ শব্দের উচ্চারণের ধ্বনিতে বিশেষ মিল আছে।

উপমহাদেশের বেশ ক’টি মাদ্রাসায় বিজ্ঞান বিভাগ চালু করেছে। সুখের সংবাদ। বান্দাকে আল্লাহ সব শিখিয়েছেন। এমনকি ফেরেশতাকেও শেখায়নি। যোগ্যতার সব স্তরে বান্দা বিচরণ করবে। বর্তমান মাদ্রাসা শিক্ষাকে বিজ্ঞানময় করা প্রয়োজন। দেহ ও আত্মার সম্মিলন তথা সাযুজ্য সৃষ্টির লক্ষ্যে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি চাই। দুনিয়ার হায়াত ক্ষদ্র হলেও এই ক্ষুদ্রের মধ্যে অসীম হায়াতের সফলতা বিদ্যমান। দুনিয়ার নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব বান্দা ছেড়ে দেবে, তা’ কখনো হতে পারে না। এটা বন্দেগীর বিপরীতে চলে যায়। যেমন বৃক্ষরোপন অভিযান এক প্রকার বন্দেগী। বৃক্ষের শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষিত হচ্ছে। কতো শতো কাজে বান্দা বৃক্ষকে ব্যবহার হচ্ছে।

জিকির বা জপমালা এবং বন্দেগী সমার্থক নয়। পাথর্ক্য অনেক। বান্দা জিকির ও বন্দেগী দু’টোই করবে। ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার নাম। মাদ্রাসা শিক্ষায় পূর্ণাঙ্গ জীবন গড়ার শিক্ষা থাকা চাই। ব্যবসা-বাণিজ্য শাখা মাদরাসা শিক্ষায় নেই। ফলে লেন-দেন দ্বীন পরিপন্থী। বাংলাদেশের ‘ইসলামী ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠিত না হলে বান্দা কখনো হয়তো জানতো না-‘ইসলামে অর্থনীতি’ রয়েছে। দৃষ্টি মাটির উপর ও নীচে-দু’টোতে রাখা প্রয়োজন । মেয়েদের জন্যে আলাদা মাদ্রাসা চাই। যেখানে বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শাখা থাকবে। সহশিক্ষা বন্দেগীতে বিঘœ ঘটায়। ক্ষতি বেশি, লাভ কম।

মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বান্দাকে রুহের জগতে অর্থাৎ আধ্যাত্মিকভাবেও সমৃদ্ধ করতে হবে। মাদ্রাসা শিক্ষায় রুহের তরক্কী সৃষ্টির লক্ষ্যে ‘বিশেষ প্রশিক্ষণ’ রাখা অতীব প্রয়োজন। চরিত্র দু’রকোম-দৈহিক ও আত্মিক। আত্মিক চরিত্র সমৃদ্ধ বা দৃঢ় না হলে ‘বান্দা’ যে কোন সময় বিপদে পড়তে পারে।

মাদ্রাসায় পড়ি। পড়লে দ্বীনও পাবো, দুনিয়াও পাবো। যদি বিজ্ঞানময় কুরআন অধ্যয়ন হয়। দৈহিক ও মানসিক (আত্মিক) চরিত্র সৃষ্টি হবে। এবং মাদ্রাসা গড়ি। আসমানের প্রথম বিধান তথা প্রথম ফরজ আদায় ও প্রতিষ্ঠা করি। অন্যথায় মুক্তি, শান্তি মিলবে কি!

লেখক : সম্পাদক, লোহাগাড়ানিউজ২৪ডটকম;  প্রভাষক- বাংলা, আধুনগর ইসলামিয়া ফাযিল মাদ্রাসা, লোহাগাড়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!