নিউজ ডেক্স : সাংবাদিক হেনস্তা, ছাত্রী হলে মারধরসহ পৃথক ছয় ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ১৮ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। এদের মধ্যে চবি শাখা ছাত্রলীগের ১৭ নেতাকর্মী রয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে এক লিখিত আদেশ এ তথ্য জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর আগে গত সোমবার রাতে এক সভায় শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের এ সিদ্ধান্ত হয়।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসের এক সাংবাদিককে শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। তারা হলেন-লোকপ্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আরশিল আজিম ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র শোয়েব মোহাম্মদ (আতিক)।
গত ৮ অক্টোবর আলাওল হলের কক্ষ ভাঙচুর, প্রভোস্টকে টেলিফোনে হুমকি ও কর্মচারীদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। তারা হলেন-সমাজতত্ত্ব বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী হাছান মাহমুদ এবং শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র শহিদুল ইসলাম।
গত ২ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও দেশীয় অস্ত্র হাতে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ানো, হলের দরজা-জানালা ভাঙচুর, বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি, কর্তব্যরত প্রক্টরিয়াল বডি ও সাংবাদিকদের হেনস্তা করার ঘটনায় ছয় ছাত্রলীগকর্মীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। এরা হলেন-সংস্কৃত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের অনিক দাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তনয় কান্তি শিকদার, অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের লাবিব সাঈদ, ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের সিফাতুল ইসলাম, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের নাহিদুল ইসলাম ও একই বর্ষের ইতিহাস বিভাগের মো. মোবারক হোসেন।
এ ছাড়া গত ২৪ আগস্ট শাটল ট্রেনে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে কর্তৃপক্ষের দায়ের করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় আটক হওয়া ছাত্র অধিকারের কর্মী জোবায়ের হোসেনকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগর তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
এদিকে চলতি বছরের ৫ ও ৬ জানুয়ারি পরপর দুদিন রাতে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে শাহজালাল ও সোহরাওয়ার্দী হলের আশপাশের বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি, আশপাশের দোকানপাট ভাঙচুরের ঘটনায় ছাত্রলীগের ছয় নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়। এরা হলেন- ফিন্যান্স বিভাগের স্নাতকোত্তরের আমিরুল হক চৌধুরী, ইতিহাস বিভাগের স্নাতকোত্তরের ইকরামুল হক, দর্শন বিভাগের একই বর্ষের নয়ন দেবনাথ, বাংলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের সাখাওয়াত হোসেন, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মাহমুদুল হাসান ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মোহাম্মদ ফাহিম।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও বোর্ড অব রেসিডেন্স হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির সদস্যসচিব রবিউল হাসান ভূঁইয়া সংবাদমাধ্যমকে বলেন, প্রতিটি ঘটনা কয়েকটি স্তরে যাচাই-বাছাই করে দোষীদের শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। তবে সংঘর্ষের ঘটনায় কয়েকজন ক্ষমা চেয়েছেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যকলাপে জড়াবেন না বলে অঙ্গীকার দিয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ক্ষমা করা হয়েছে।
এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে বোর্ড অব রেসিডেন্স হেলথ অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটি তিনটি সুপারিশ করেছে।
সুপারিশগুলো হলো-
১. ক্যাম্পাসে অবস্থানকারী মাদকাসক্ত ব্যক্তি শনাক্ত, মাদক বিক্রি ও মাদক সেবনের এলাকায় নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা।
২. ক্যাম্পাস ও এর আশপাশে অছাত্র, বহিষ্কৃত ও প্রাক্তন ছাত্রদের ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নেওয়া।
৩. সম্প্রতি শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সঙ্গে অসদাচরণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কয়েক শিক্ষার্থী জড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। এ জন্য শিক্ষার্থীদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করা। -আজাদী অনলাইন