ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | গ্যাস ও সারের দাম বাড়বে

গ্যাস ও সারের দাম বাড়বে

নিউজ ডেক্স : বাজেট ঘাটতি ও ভর্তুকি কমাতে এবার গ্যাস ও সারের দাম সমন্বয় করতে যাচ্ছে সরকার। করোনা মহামারির কারণে সামাজিক নিরাপত্তা-বেষ্টনীর আওতা ও খরচ বেড়েছে।প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় সাধারণ মানুষকে নগদ সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এতে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হয়েছে। এ ছাড়া কৃষি খাতে ভর্তুকির জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বছর শেষে এটা ২৫ হাজার কোটি টাকায় চলে যেতে পারে বলে ধারণা করছে অর্থ বিভাগ। অবশ্য ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেটে ভর্তুকি ও প্রণোদনা বাবদ ৩৫ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা রাখা হয়েছে।  

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করে ফিরে গেছে। আইএমএফের প্রতিনিধি দল অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে ভর্তুকি কমানোর তাগিদ দিয়ে গেছে। একই সঙ্গে বাজেটের ভারসাম্য রক্ষায় পরোক্ষভাবে তারা সার ও গ্যাসের দাম সমন্বয়ের কথাও বলে গেছে বলে জানিয়েছে অর্থ বিভাগ, যা গতকালের সভায়ও আলোচনা করা হয়েছে।  

এদিকে অল্প কিছুদিন আগে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম বাড়ানো হয়েছে বৈশ্বিক বাজারে বেশি দাম ও বাজেটে ভর্তুকি কমানোর যুক্তিতে। যদিও এখন জ্বালানি তেলের দাম বিশ্ববাজারে ক্রমাগতভাবে কমছে। ভর্তুকি বাড়লে বাজেট ঘাটতিও বাড়বে। এতে বাজেটের ভারসাম্য ঝুঁকির মুখে পড়বে। তাই বাজেটের ভারসাম্য ঠিক রাখতে ও ভর্তুকি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সার ও গ্যাসের দাম সমন্বয় (বাড়ানোর সুপারিশ) করার কথা বলা হয়েছে।  

বর্তমান বাজেটে সামগ্রিক ঘাটতি ধরা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। গতকাল সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল’ এবং ‘বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটি’র বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়েছে। অর্থ বিভাগ ও বৈঠকের একাধিক সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

আগামী অর্থবছর জিডিপির টার্গেট ৭ দশমিক ৫ শতাংশ:
সূত্র জানায়, গতকালের বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামীতেও উচ্চতর জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে চায় সরকার। কেননা করোনা মহামারী সত্ত্বেও গত বছর ভালো প্রবৃদ্ধি পেয়েছে বাংলাদেশ। চলতি বছর শেষেও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এ জন্য আসছে ২০২২-২৩ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির টার্গেট ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমানে (২০২১-২২ অর্থবছর) বাজেটে এর টার্গেট ৭ দশমিক ২ শতাংশ।  

বৈঠকে দেশের বাজেট বাস্তবায়ন, রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি, বৈদেশিক ঋণ ও সহায়তাসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। এতে মিশ্র মতামত ব্যক্ত করা হয়। কেননা এ মুহূর্তে রাজস্ব আদায়ে কিছুটা ধীরগতি রয়েছে। বর্তমানে এর প্রবৃদ্ধি অক্টোবর পর্যন্ত ১৬ শতাংশ। যদিও আশা করা হচ্ছে ডিসেম্বরের পর এ গতি আরও বাড়বে। রেমিট্যান্স প্রবাহেও ধীরগতি রয়েছে। সামনে ঈদের সময় এটা বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করা হয় বৈঠকে।  

একইভাবে বৈদেশিক ও ঋণ সহায়তা ইতিবাচক অবস্থায় রয়েছে। যদিও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের কিছুটা চাপ রয়েছে। অর্থ বিভাগ মনে করে এ চাপ দ্রুতই কেটে উঠবে। সূত্র আরও জানায়, সরকার মনে করে করোনা মহামারীর কারণে দেশের অর্থনীতির ক্ষতি খুব একটা হয়নি। তবে কিছু কিছু জায়গায় ধীরগতি রয়েছে। রপ্তানি আয় ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পাট, চামড়া, পোশাক, হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি ধীরে ধীরে আবার বাড়ছে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য খাতভিত্তিক ট্যাক্স হলিডে প্রথা বন্ধ করা হবে। কৃষিজ উৎপাদন বাড়াতে এ খাতে যান্ত্রিকীকরণ বাড়াতে হবে।

অর্থ পাচার ঠেকাতে অটোমেশনের আওতায় আসবে বন্ডেড ওয়্যারহাউস: 
এদিকে দেশ থেকে প্রতিবছর বহু পরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যায় ব্যবসা-বাণিজ্যের আড়ালে। এর অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বন্ডেড ওয়্যারহাউস। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ছয় বছরে অন্তত সোয়া ৪ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। এ নিয়েও গতকালের বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। এ জন্য ব্যবসা-বাণিজ্যের আড়ালে অর্থ পাচার রোধ করতে বন্ডেড ওয়্যারহাউসগুলোকে অটোমেশনের আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে। জিএফআই বলছে, ২০১৫ সালেই ১ লাখ কোটি টাকার বেশি পাচার হয়েছে বাংলাদেশ থেকে, যার বেশির ভাগই হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যের আড়ালে।

সঞ্চয়পত্রের সুদ কমায় সরকারি ব্যয় কমেছে: 
সরকার সম্প্রতি সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমিয়েছে। এতে সরকারের সুদ বাবদ খরচ কমেছে, যা সামগ্রিকভাবে বাজেট ব্যয় কমানোয় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তেরও প্রশংসা করেছে আইএমএফ। গতকালের বৈঠকে এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা। এটাকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হিসেবেই বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

ওমিক্রন নিয়ে পৃথক কোনো পরিকল্পনা নেই: 
আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকাসহ বিশ্বের ৯০টির বেশি দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়েছে। এতে অনেক দেশই দিশাহারা হয়ে পড়েছে। তবে বাংলাদেশে দুই নারী ক্রিকেটার ছাড়া এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসের উপস্থিতি কারও মধ্যে চিহ্নিত করা যায়নি। ফলে ওমিক্রন নিয়ে আপাতত সরকারের পৃথক কোনো পরিকল্পনাও নেই বলে গতকালের বৈঠকে অবহিত করা হয়েছে। তবে প্রতিমুহূর্তেই সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যেন নতুন করে ছড়িয়ে না পড়ে সে জন্য সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্‌বান জানানো হয়েছে। কেননা সংক্রমণ কমে আসায় মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার বেলায় ঢিলেঢালা ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এতে আবার নতুন করে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। -বাংলাদেশ প্রতিদিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!