Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | ‘টুং–টাং’ শব্দে ব্যস্ত কামারপাড়া

‘টুং–টাং’ শব্দে ব্যস্ত কামারপাড়া

Dinajpur-Black-Smith-home

নিউজ ডেক্স : কোরবানি ঈদের আর সপ্তাহখানেক বাকি। কোরবানিকে কেন্দ্র করে কামারপাড়া এখন সরব। সারাক্ষণ শোনা যাচ্ছে লোহা পেটানোর ‘টুং–টাং’ শব্দ। ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লোহা পিটিয়ে কামাররা তৈরি করছেন দা, বটি, ছুরি ও চাপাতি। এসব জিনিস দুই ধরনের লোহার উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয়। একটি স্প্রিং লোহা (পাকা লোহা) আরেকটি কাঁচা লোহা। স্প্রিং লোহার তৈরি সরঞ্জাম খুব ভালো। তাই দামও একটু বেশি নেন কামাররা। কামাররা জানান, লোহা ও কয়লার দাম গত বছরের চেয়ে এবার বেড়েছে। তাই গত বছরের চেয়ে এসব জিনিসের দামও বেশি। অন্যদিকে অনেক ক্রেতা পুরনোগুলোতে শান দিতেও নিয়ে আসছেন। তবে শান দেয়ার ব্যস্ততা এখন খুব বেশি নেই বলে জানান কয়েকজন কামার। এদিকে মাংস কাটার কাজে ব্যবহৃত কাঠের খাইট্টা (তেঁতুল গাছের টুকরো) ভ্যান গাড়িতে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। তবে এখন পর্যন্ত ক্রেতাদের খুব বেশি সাড়া মিলছে না। কোরবানির দু’তিন দিন আগে এসব বস্তু কিনতে ক্রেতারা ভিড় করেন বলে জানা গেছে।

গতকাল নগরীর ফিরিঙ্গীবাজার ও মোগলটুলি কামার পাড়া ঘুরে দেখা গেছে, দূর থেকেই পাওয়া যাচ্ছে হাপরের হাঁসফাঁস আর লোহা পেটানোর টুংটাং শব্দ। এর সাথে ছড়াচ্ছে আগুনের স্ফুলিঙ্গ। অনেক ক্রেতা কামারদের কাছে এনে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে। এর মজুরিও লোহাভেদে নির্ধারণ করা হয় হয় বলে জানা গেছে। অন্যদিকে ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী দা, বটি, ছুরি ও চাপাতি তৈরিতে দম ফেলার ফুরসত নেই কামারদের। তবে বেশিরভাগ লোক কামারদের কাছ থেকেই লোহা কিনে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে। এছাড়া অনেকে রেডিমেট বানানো সরঞ্জাম নিয়ে ঘরে ফিরে। এছাড়া অনেকে আসছে পুরনো দা, ছুরি, বটি ও চাপাতি শান দিতে। শান দেয়ার ব্যস্ততা এখনো ওইভাবে শুরু হয়নি। কোরবানি ঈদের দু’তিনদিন আগে পুরোপুরি ব্যস্ততা শুরু হবে বলে জানান অজিত দাশ নামের এক কামার।

কয়েকজন কামার জানান, স্প্রিংয়ের দা, ছুরি, বটি ও চাপাতি ওজনের ভিত্তিতে বিক্রি করা হয়। তবে পিস হিসেবে কিনতে গেলে একটি ভালো মানের চাপাতির দাম পড়বে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এছাড়া চাপাতির দামেই পাওয়া যাবে জবাই করার ছুরি। মানের ভিত্তিতে ৩০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে চামড়া ছাড়ানোর ছুরি। একই ভিত্তিতে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে মাংস কাটার ছুরি। ছোট–বড় আকারের ভিত্তিতে একটি বটির দাম পড়বে ৮০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে। তাৎক্ষণিক শানের জন্য ৫০ টাকায় পাওয়া যাবে ভালো মানের রেত। এছাড়া কেজি দামে কিনতে চাইলে প্রতি কেজি পাকা স্প্রিংয়ের দাম পড়বে ৬০০ টাকা। অন্যদিকে রেতের কেজি পাওয়া যাবে ২৫০ টাকায়।

ফিরিঙ্গী বাজারে কামারপাড়ার অজিত দাশ বলেন, কয়লার দাম বাড়ার কারণে অর্থ সংকট দেখা দিয়েছে। তাই চাহিদা অনুযায়ী জিনিস তৈরি করতে পারছি না। গত বছর প্রতি বস্তা কয়লার দাম ছিল ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। সেখানে এ বছর প্রতি বস্তা কয়লার দাম পড়ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত। তাই এসব সরঞ্জাম বানাতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।

দা–বটি কিনতে আসা ক্রেতা ইমরান আহমেদ বলেন, ঈদের দু’তিন দিন আগে কামাররা খুব ব্যস্ত থাকে। তাই তারা কোরবানির এসব সরঞ্জাম ভালোভাবে না বানিয়ে ক্রেতাদের ডেলিভারি দেয়। তাই একটু আগেই এসেছি যাতে ভালোভাবে বানিয়ে নেয়া যায়।

মোগলটুলি এলাকার কামার আশুতোষ কর্মকার বলেন, সারাবছর আমাদের প্রায় বসেই দিন কাটাতে হয়। বছরে একবার কোরবানি এলেই কাজের চাপ বেশি হয়। ঈদ চলে গেলে আমাদের সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়। তাই বাধ্য হয়ে অন্য কাজ করতে হয়। বাপ–দাদার আমল থেকে এই কাজ করছি। তাই ছাড়তেও পারছি না।

সেলিম উদ্দিন নামের এক ক্রেতা বলেন, স্প্রিং লোহার তৈরি দা ও চাপাতি কিনতে এসেছি। দাম একটু বেশি বলেই মনে হচ্ছে। দাম বেশি হলেও কিনতে তো হবেই। এছাড়া পুরনো বটি ও ছুরি শান দেয়ার জন্য নিয়ে এলাম।

অপরদিকে কোরবানির মৌসুম আসলেই পশুর মাংস কাটার কাজে ব্যবহৃত খাইট্টার প্রচুর চাহিদা থাকে। তাই মৌসুমী ব্যবসায়ীদের নগরীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে ভ্যান গাড়িতে এইসব খাইট্টার পসরা সাজিয়ে বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন মাপের এসব খাইট্টা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা থেকে শুরু ১ হাজার টাকার মধ্যে।

বিক্রেতা রেজাউল ইসলাম বলেন, কাঠের মধ্যে তেঁতুল গাছের কাঠ অত্যন্ত শক্ত। কোরবান উপল ে বিভিন্ন করাত মিল থেকে এইসব গাছের গুঁড়ি সংগ্রহ করে সাইজ মতো কেটে বিক্রি করি। তেঁতুল গাছে দা–চাপাতির কোপ পড়লেও তেমন একটা তি হয় না। অন্যদিকে সাধারণ গাছের গুঁড়িতে কোপ পড়লে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টুকরা উঠে মাংসে লেগে থাকে। যা পরে মাংস থেকে ছাড়াতে বেশ বেগ পেতে হয়। কিন্তু তেঁতুল গাছের কাঠ শক্ত ও মজবুত হওয়ায় সাধারণত এমন হয় না। তাই কোরবানির পশুর মাংস কাটতে এই তেঁতুল কাঠের খাইট্টা কিনে থাকেন। এখন পর্যন্ত বেচাকানা শুরু হয়নি। তবে কোরবানি ঈদের দু’তিন দিন আগে থেকে বেশ ভালো বিক্রি হয়।

-আজাদী প্রতিবেদন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!