অবশেষে

348

কামরুননাহার : আজ অফিসে আসতে দশ মিনিট দেরি হয়েছে রেহনুমার। কেউ কিছু বলবে না তবু লজ্জা করে তার। চুপচাপ নিজের চেয়ারে এসে বসে রেহেনুমা। তার দেরী হবার কথা নয়। তারেকের জন্য দেরী হয়ে যায় ওর অফিস আধ ঘণ্টা পরে তাই ও দেরী করে বেরোয়। তারেক রেহেনুমার স্বামী। প্রতিদিন অফিস যাবার পথে নামিয়ে দিয়ে যায়। আবার ফেরবার সময় নিয়ে যায় সাথে করে।অফিসের সকলে বলে ভাগ্য বটে আপার।

তার পাশেই বসে নাবিলা তার সহকর্মী। আজ উঠে এলো নাবিলা, তোমায় দেখে হিংসে হয়। দুলাভাই কি কেয়ার করেন তোমায়। তুমি সত্যি খুব সুখী। নাবিলার কথার জবাব দেয় না রেহেনুমা গলায় আস্তে আস্তে হাত বুলায়। আর সুখী সুখী চেহারায় হাসতে থাকে।মনে হয় তার মত সুখী আর কেউ নেই।

বিকেলে বাসায় ফেরে দুজন, আসবার সময় নানু বাড়ি থেকে ছেলেকে নিয়ে আসে। বুয়া স্কুল থেকে ও বাড়িতেই রেখে আসে। বাসায় ফিরে আজ আর দাঁড়াবার সময় পেল না রেহনুমা। বুয়া আসেনি এখনো।তাড়াতাড়ি চা, নাস্তা তৈরি করে। ছেলে তারেকের জন্য। ভাবছে সালমা না এলে কষ্ট হয়ে যাবে। রান্না করতে হবে রাতে।সালমা তার কাজের মেয়ে। খালাম্মা বলে ডাকে।বেশ কাজের মেয়েটি।

হঠাৎ সালমা এল। সাথে তার ছোট্ট মেয়ে।কাঁদছে সালমা। বলে,খালা দেহেন আমারে মাইরা কি করছে, কুত্তার বাচ্চাডায়। রেহনুমা দেখে লাল লাল দাগ হয়ে আছে গায়ে।রেহনুমা জানতে চান কেন রে এত মারলো কেন? ” বাজার করার টাকা চাইছি তাইতে মারছে।তয় আইজ আমিও দিছি যে লাঠি দিয়া আমারে পিডাইছে সেই লাঠি দিয়া আইজ আমিও পিডাইছি।কুত্তার ঘর আর করুম না খালা। কাম কইরা খামু তো মাইর খামু ক্যান?

অবাক রেহনুমা চেয়ে রয় সালমার দিকে।আর হাত বুলায় গত কাল তারেকের দেওয়া গলার কালসিটে দাগে।গাড়ী চালানো রুক্ষ হাত দিয়ে গলা চেপে ধরেছিল সে।তাই দাগ পড়ে গেছে। একদিন নারী দিবসে মিছিলের পেছনে পড়েছিল ওরা তাই যেতে হচ্ছিল মিছিলের সাথে।ওখানে সামনে গাড়িতে একটা মেয়ে বক্তৃতা দিচ্ছিল, বলছিলো অর্থনৈতিক শক্তি না থাকলে নারী মুক্তি সম্ভব নয়। রেহনুমা ভাবে তার আর সালমার তো অর্থনৈতিক শক্তি আছে।সালমা আজ সিদ্ধান্ত নিল।সে কেন বন্দি এ পিন্জরে? কাকে এত ভয় পায় সে? স্বামী কে? না সমাজকে???

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!