ব্রেকিং নিউজ
Home | সাহিত্য পাতা | শুভ্রতার সুখ-দুঃখ (৭ম পর্ব)

শুভ্রতার সুখ-দুঃখ (৭ম পর্ব)

258

ফিরোজা সামাদ : অামার শুভ্রতা, অামি জানি এই চিঠি পেয়ে প্রথমেই তুমি চমকে যাবে, থমকে যাবে অথবা হবে চঞ্চলা ভীরু হরিণী। আমি আজ তোমাকে যে চিঠিটি লিখছি, জানিনা সে চিঠি আজো কোন প্রেমিক তার প্রেমিকাকে লিখেছে কি না।আমি তোমাকে লিখছি আমার সমস্ত স্বত্বা আর বিবেকের অনুপ্রেরণায়, একটি দীর্ঘ ভালবাসার চিঠি, একটি স্বপ্নের সবিস্তার,মৌনতার বিষাদময়তায় গুটিগুটি  অক্ষরগুলো তোমার চেতনাকে আলোড়িত করবে।তুমি কোনদিন ভাবতেও পারোনি কোন একনিঃস্বঙ্গ প্রেমিক তার বিশ্বাসের পুঁজি দিয়ে তোমার জন্য রচনা করবে এরকম একটি চিঠি।

হয়তো এই লেখার জন্য অামাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে তোমার জন্য বছরের পর বছর । তুমি কি জানো ভালবাসার মানে কি ? জানোনা, ভালোবাসা হচ্ছে অমর একটি সুর,যে সুরের স্বরলিপি রচনা করবো তুমি অামি দু’জন। শুভ্র জানো ?  আমি দাড়িয়ে আছি একটি নদীর কিনারায় – যেখানে স্রোতের তাণ্ডব আমাকে অমরত্বের সুর শোনায়। তোমাকে আমি বিস্ময়কর সে সুরের ভেতর দিয়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি অবিরত। কোনদিন আমিও ভাবিনি তোমায় সত্যি সত্যি পেয়ে যাবো অামার দৃষ্টির সীমানায়। এই চিঠি লিখতে বসে শতোকোটি হাজার কোটি অফুরন্ত প্রশ্ন করেছি এ হৃদয়কে, উত্তরে শুধু ভালোবাসি তোমায়। অার জীবনে মরনে শুধু তোমাকেই চাই। তোমার ডাগর নয়নে চোখ রেখে অামি তলিয়ে যাই প্রশান্ত মহা সাগরের অতলে, অথৈ জলে ডুবেও দেখি তোমার মোহনীয় রূপ।

অামার হৃদয় রাজ্যের বর্ষণ মূখর ভোর তুমি। তোমাতে নিমগ্ন অামি তোমাতে প্রীত। তুমি অামার সুনয়না, সুনাসা, সুনিপুনা ও মনোহরা, তোমার মধ্যে অামি প্রতিনিয়ত হই দিশেহারা। জানো এই বসন্ত রাতে বৃষ্টি হয়েছে , গাছের শাখায় শাখায় তার চিহ্ন টুপটাপ ঝরছে।  অাবারও হয়তো হবে, ঝরবে অঝোরে বরিষণ । প্রেমের পেয়ালা হাতে আমি সংগ্রহ করবো বসন্তের উদরে বর্ষিত দু:খের নীলাভ বৃষ্টি-জল। যে জলে কালি বানিয়ে শেষ করবো আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রেমের চিঠি। এ চিঠি তোমার কাছে হয়তো তুচ্ছ হতে পারে,  নিতান্তই উন্মাদ প্রেমিকের প্রলাপের মত হতে পারে,কিন্তু তুমি নিশ্চিত থাকো, এই চিঠি কোনদিনও তোমার জীবনে কোনো সংশয়ের কারন হবে না। শোন, আজ এই বসন্তের প্রথম দিনে আমি ঘোষণা করছি আমার প্রেমের শ্রেষ্ঠ পরিচ্ছেদ। তোমাকে লিখছি যে কথা, তা আজো লিখিনি আমি।  আজ আমার প্রতিটি অক্ষরে, আমার প্রতিটি শব্দে তোমার সংশয় পরিত্রাণের কথা বলছি। তোমাকে সৎ এবং সাহসী রমণী হবার প্রেরণা যোগাচ্ছি । তুমি অনায়াসে হয়ে যেতে পারো আমার কামনার বিশ্বস্ত রমণী। তুমিই পারবে বিশ্বাসে ভর দিয়ে ডানা মেলে তুলে আনতে আকাশের রঙ, মেঘের কালিমা মুছে একটি প্রজ্বলিত শিখাময় সূর্যের মুখ । আমিও অপেক্ষা করবো। তুমি একদিন সব জড়তা আর নৈরাশ্যবাদের সংশয় মাড়িয়ে এখানে সাজাবে সহনশীলতা, সাম্য আর ভালবাসার মিলন-মেলা। আমি তোমার বিবেকের বক্ষ-ভেদ করে পাঠিয়ে দিচ্ছি আজ আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ ভালবাসার চিঠি । যে চিঠি আজো কোন প্রেমিক তার প্রেমিকার জন্য লিখেনি ।

তোমার হাত ধরে জীবনের চরাই উৎরাই সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না ও অানন্দ- বেদনার বৈতরণী পার হতে চাই ।  তুমি, হ্যাঁ তুমিই  বইয়ে দিবে অামার জীবনে প্রেমের প্লাবন। তোমায় নিয়ে গড়বো অামি অামার হৃদয় রাজ্যে প্রেমের তাজমহল । তুমি চিরন্তন, তাই তো শুধু তোমাকে একমাত্র তোমাকেই চাই অনুক্ষণ । অামার এ চিঠি হবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রেমের চিঠি আর তুমি হবে শ্রেষ্ঠ রমণী, আমি লিখে দিচ্ছি  তার আগাম দলিল !!

তোমার–এম–

চিঠিটি পড়তে পড়তে নিজের অগোচরে দু’চোখে অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়ে। দীর্ঘ নিঃশ্বাসের সাথে অজান্তেই মুখ থেকে বেড়িয়ে অাসে ” মিথ্যে স-ব মিথ্যে, তুমি যা লিখেছো সব খেলা,সব ভুল, অামার জীবন সেই সংশয়ে জড়িয়ে কোথায় বাঁক নিবে জানিনা “। খুউব  মনোযোগ দিয়ে চিঠিটি পড়ে নেয় শুভ্রতা। তারপর গোলাপটি একবার নাকের সামনে ধরে জোরে শ্বাস নিয়ে চিঠি ও শুকনো গোলাপটিকে খামে ভরে ভালো করে বন্ধ করে মায়ের কাছে দিয়ে বলে….

—- মা, খামটি সযতনে তোমার কাছ রেখে দিও ।

মা শাহানা বেগম মমতা মাখা চোখ নিয়ে ঘার কাত করে শুভ্রতাকে অাস্বস্হ করে…. (চলবে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!