এলনিউজ২৪ডটকম : লোহাগাড়ার পুটিবিলায় দায়ের কোপে নিজ মেয়ের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন পিতা আবদুর রহমান (৫০)। তিনি ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ সরইয়া বলিরজুম এলাকার মৃত আলতাফ মিয়ার পুত্র ও ৫ সন্তানের জনক। শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে নিজ বসতঘরে এই ঘটনা ঘটে।
ঘটনার পর অভিযুক্ত মেয়ে মোছাম্মৎ হুমায়রাকে (২৩) আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন স্থানীয়রা। সে এক সন্তানের জননী ও বর্তমানে গর্ভবতী বলে জানা গেছে। এছাড়া তার স্বামী আবদুস ছালাম একজন দিনমজুর।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৩ বছর পূর্বে একই ইউনিয়নের গৌড়স্থান চৌধুরী পাড়ার জনৈক আবদুস ছালাম নামে এক যুবককে সাথে হুমায়রার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে সে স্বামীকে নিয়ে বাপের বাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন। মাঝে মধ্যে শ্বশুর বাড়িতে গেলেও সেখানে থাকতেন না। তাদের পরিবারের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পারিবারিক কলহ দেখা দিত। তারই জের ধরে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া হুমায়রা উগ্র মেজাজের মেয়ে বলেও জানা যায়।
স্থানীয় গ্রাম পুলিশ কবির আহমদ জানান, মেয়ে হুমায়রাকে বিয়ে দেয়ার সময় ছেলের পারিবারিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় আলাদা জায়গা কিনে তাদেরকে বসতঘর করে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিয়ের দীঘদিন পার হবার পরও বসতঘর করে না দেয়াসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের পরিবারে প্রায় সময় মনোমালিন্য দেখা দিত। ঘটনারদিন অভিযুক্ত হুমায়রা গরুকে কুরা (গরুর খাবার) খাওয়াচ্ছিল। এ সময় আবদুর রহমান মেয়ের কাছ থেকে গরুকে ঘাস না খাওয়াইয়ে কুরা খাওয়াচ্ছে কেন জানতে চান এবং এনিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এতে মেয়ে হুমায়রা ক্ষিপ্ত হয়ে দা নিয়ে পিতার উপর আক্রমণ করেন। প্রাণ রক্ষার্থে আবদুর রহমান দ্রুত পার্শ্ববর্তী তার ভাই বজলুর রহমানের বসতঘরে চলে যান। মেয়ে হুমায়রাও দা নিয়ে দৌঁড়ে সেখানে গিয়ে পিতাকে কোপ মারে। এতে পিতার ডান হাতের কব্জি ও ঘাড়ে গুরতর জখমপ্রাপ্ত হন। তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসেন। স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পথে ইউনিয়নের এমচর হাট এলাকায় পৌঁছলে তার মৃত্যু হয়।
নিহতের ভাতিজা মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, ঘটনার সময় তারা কেউ বসতঘরে ছিলেন না। পার্শ্ববর্তী বিলে ধান কাটতে গিয়েছিলেন। খবর পেয়ে দ্রুত এসে তার চাচাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পান। এছাড়া ওই বসতঘরেও তার চাচা, অভিযুক্ত হুমায়রা ও তার দুই বছরের সন্তান ছাড়া কেউ ছিলেন না। অন্যরা সকলে বসতঘরের বাইরে অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলেন।
নিহত ভাই বজলুর রহমান জানান, তার ভাই একজন গরু ব্যবসায়ী ছিলেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু সংগ্রহ করে বাজারে এনে বিক্রি করতেন। হুমায়রা তার ভাইয়ের দ্বিতীয় মেয়ে। বিয়ের পর থেকেই স্বামীকে নিয়ে বাপের বাড়িতে থাকেন। এই নিয়ে বিভিন্ন সময় পারিবারিক কলহ দেখা দিত।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন মানিক জানান, মেয়ের দায়ের কোপে পিতার মৃত্যুর খবর শুনে ঘটনাস্থলে গ্রাম পুলিশ পাঠানো হয়। পরে বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে।
লোহাগাড়া থানার এসআই সত্যজিত ভৌমিক জানান, খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সুরতহাল লিপিবদ্ধ শেষে মরদেহ থানায় নিয়ে আসা হয়। ঘটনাস্থল থেকে অভিযুক্ত মেয়ে হুমায়রাকে গ্রেপ্তার ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দা উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হবে। এই ঘটনায় নিহতের ভাই বজলুর রহমান বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।