নুরুল ইসলাম ডালিম : অনেক দিন ধরে লিখব ভাবছি, কিন্তু লেখা হয়ে ওঠেনা। আজ শুক্রবার। ভাবলাম বিষয়টি লিখে ফেলি। গত কিছু দিন আগে মামনি হাসপাতাল নিয়ে একটি লেখায় প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছিলাম যে, লোহাগাড়ার স্বাস্থ্য সেবার মানন্নোয়নে মামনি হাসপাতালের পরিচালক জনাব আবুল কাশেমের কাছে আমার প্রত্যশা। আজ সেই প্রসঙ্গে কিছু অভিমত প্রকাশ করলাম। আশা করি বিবেচনা করবেন।
ব্যস্ত শহর লোহাগাড়া। লোহাগাড়ার অধিকাংশ মানুষ প্রবাসী, পয়সাওয়ালা। আমিরাবাদ কেন্দ্রিক এই শহরের আশে পাশে গড়ে উঠেছে কয়েক শত আবাসিক ভবন। যেখানে হাজার হাজার পরিবার ভাড়ায় থাকছে। পাশাপাশি বৃহ্ত্তর লোহাগাড়ার তিন লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার মতো কেউ নেই। সরকারি হাসপাতালটি একটু দূরে হওয়ায় মানুষ সেখানে তেমন একটু যায় না। যাদের আর্থিক অবস্থা ভাল তারা প্রাইভেটে সেবা পেতে আমিরাবাদে ছুটে আসে। আর শুক্রবার আসলে বুঝা যায়, প্রাইভেট হাসপাতাল গুলোতে কি পরিমান রোগীর ভীড়। কিন্তু চিকিৎসাসেবা নিয়ে আছে বিস্তর অভিযোগ। আমার জানামতে বর্তমানে এ শহরে ১০টির বেশী প্রাইভেট হাসপাতাল আছে যেখানে প্রশিক্ষিত নার্সিং ডিপ্লোমাধারী নার্সের সংখ্যা তেমন নেই। একটি প্রাইভেট হাসপাতাল সরকারি লাইসেন্স পেতে এটা প্রধান শর্ত থাকে। কিন্তু কিছু গরীব স্কুল কলেজের ড্রপ আউট ছাত্রীদের সাদা এপ্রোন পরিয়ে দিলে নার্স হয়না। তারা ডাক্তারদের নির্দেশনা বুঝেনা বলেই রোগীদের জীবন নিয়ে খেলে, ভুল ইনজেকশন দিয়ে রোগীর বারটা বাজায় । এমন অভিযোগ প্রচুর।
লোহাগাড়ার পয়সাওয়ালার অভাব নেই। কিন্তু আপনার মতো মহৎ হৃদয়ের মানুষের বড় অভাব। ১০ তলা বাড়ি নির্মান করে ভাড়া খাওয়ার জন্য কিন্তু ভাবেনা আপনার মতো জনসেবা আর ব্যবসা দুটো করার। এদিক দিয়ে আপনি এগিয়ে আছেন। লোহাগাড়ার মানুষের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার বিশাল একটি দায়িত্ব আপনি কাধে নিয়েছেন। মামনি হাসপাতালকে নতুন রুপে সম্প্রসারণ করেছেন । এমন সিদ্ধান্তের জন্য আপনাকে অভিনন্দন! লোহাগাড়ার একজন সাধারণ মানুষ হিসাবে আপনার কাছে আগামীতে মামনি হাসপাতালকে যেভাবে দেখতে চাই –
১। প্রশিক্ষিত, সরকারি সনদধারী নার্সিং ডিপ্লোমা পাস নার্স নিয়োগ কর“ন।
২। সাপ্তাহে একটি দিন , ২টি ঘন্টা হাসপাতালের ডাক্তারদের সেবার মান বাড়ানোর বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসুন।
৩। হাসপাতালে কর্মরত স্টাফদের আচরণ, ভাষা ব্যবহারে প্রশিক্ষণ দিন। যাতে আপনার হাসপাতালে মানুষ সেবা পেতে ছুটে যায়। কারণ ব্যবসার সফলতা নির্ভর করে মুখের ব্যবহারের উপর। যা আপনি অবশ্যই জানেন।
৪। এক সাথে ৩/৪ জন রোগী যে ডাক্তার কক্ষে ডুকান, তাকে বয়কট করুন। রোগীকে একা ও পর্যাপ্ত সময় দেয় এমন ডাক্তার নির্বাচন করুন।
৫। সর্বাধিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি রাখুন। যাতে রোগীরা দ্রুত সেবা পায়। শহরে দৌড়তে না হয়।
৬। অহেতুক পরীক্ষা বর্জনের ব্যবস্থা নিন। গাদা গাদা পরীক্ষা দিয়ে রোগীদের পকেট কাটা নয় , সেবার পরিসর বৃদ্ধি করুন।
বিদেশী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আনা গেলে খুবই ভাল হয়। তবে তা বিশেষ ক্ষেত্রের জন্য। ইতোমধ্যে আপনি ভারতের তামিলনাড়ুর একটি বিখ্যাত হাসপাতালের সাথে আলোচনা করেছেন এমন জেনেছি।
সর্বোাপরি , আপনি কাবুলীওয়ালার মতো বিদেশী কোন ব্যবসায়ী নন যে , আপনার বিনিয়োগের টাকা সুদে আসলে দ্রুত তুলে নেওয়ার জন্য রোগীদের হয়রানী করবেন। আপনি লোহাগাড়ার সন্তান, লোহাগাড়ার মাটি ও মানুষ যেন আপনার মহৎ কর্মকে আজীবন স্মরণ করে, আপনার একটি সেবামূলক কাজ যেন পরকালীন নাযাতের ওসীলা হয় সেভাবে আপনার প্রতিষ্ঠানকে পরিচালিত করুন। গরীব রোগীদের সাহায্যের জন্য হাসপাতালের লভ্যাংশ হতে একটি অংশ সদকা হিসাবে রাখুন। যাতে এ দান আপনার ব্যবসাকে আরো প্রসার হতে সাহায্য করবে। তাহলে আপনি এগিয়ে যাবেন। আপনার প্রতিদ্বন্ধী আপনি নিজেই। আপনার সু স্বাস্থ্য কামনা করছি।