আন্তর্জাতিক ডেক্স : বাংলাদেশের বাজারের মতো প্রতিবেশী দেশ ভারতেও পেঁয়াজের দাম আকাশ ছুঁয়েছে। কোনোভাবেই লাগাম টানা যাচ্ছে না পেঁয়াজের দামে। পশ্চিমবঙ্গের বেশকিছু জেলায় বুধবার পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা কেজি দরে। এদিকে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে গঠিত রাজ্য সরকারের টাস্কফোর্স জানিয়েছে, চলতি মাসে পেঁয়াজের এই সঙ্কটের অবসান হওয়ার সম্ভাবনা কম।
পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার বলছে, মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া বাজারে বুধবার পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ১৫০ টাকায়। নওদার আমতলা বাজারেও পেঁয়াজের দাম ১৪০-১৫০ টাকা কেজি। কলকাতায় রাজডাঙা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া গড়িয়াহাট, মানিকতলা, লেক মার্কেট, ল্যান্সডাউনের বাজারে পেঁয়াজের দর উঠেছিল কেজিতে ১৪০ টাকায়।
পেঁয়াজের ঝাঁঝ মানুষকে কাঁদিয়ে ছাড়লেও রাজ্য সরকারের গঠিত টাস্কফোর্সের সদস্যরা আশার কথা শোনাতে পারেননি। টাস্কফোর্সের সদস্য রবীন্দ্রনাথ কোলে বলেন, ‘শীতে অন্যান্য সবজির দাম কমতে শুরু করেছে। কিন্তু এ মাসে পেঁয়াজের সঙ্কট চলবে বলেই আশঙ্কা হচ্ছে।’
নয়াদিল্লিতেও পেঁয়াজের দাম সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে। পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ায় দেশটির সংসদে বিরোধীদলীয় সাংসদরা সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তাদের প্রশ্নের মুখে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে বন্যার কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন কমেছে।
তার দাবি, দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার কম দামে পেঁয়াজ সরবরাহ করছে; রফতানি বন্ধ হয়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ী ও আড়তদারের জন্য মজুতের সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। তবে দাম কবে নাগাদ মানুষের নাগালের মধ্যে আসবে, তা নিয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে পারেননি নির্মলা।
বিরোধী বেঞ্চ থেকে প্রশ্ন উড়ে আসে, ‘আপনি কত দামে পেঁয়াজ কিনছেন?’ জবাবে নির্মলা বলেন, ‘আমি এমন পরিবার থেকে আসি, যেখানে পেঁয়াজ-রসুন ঢোকে না।’
কলকাতায় টাস্ক ফোর্সের সদস্যদের বক্তব্য, চাহিদার তুলনায় বাইরের রাজ্যগুলো থেকে পর্যাপ্ত জোগান না-আসাতেই সমস্যা। কলকাতায় অন্যান্য দিন যেখানে পেঁয়াজের ২৫-৩০টি গাড়ি আসে, বৃহস্পতিবার সেখানে এসেছে মাত্র চারটি। পাইকারি বাজারেই পেঁয়াজের কেজি ১২০ টাকা। টাস্ক ফোর্সের সদস্য কমল দে বলেন, ‘রাজ্যে প্রতিদিন ৭০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ লাগে। কিন্তু অর্ধেকও আসছে না।’
তবে পেঁয়াজের আগুন দর দেখে হতবাক রাজ্যের চাষিরা। কয়েক মাস আগেও তারা পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন সাড়ে তিন থেকে সর্বাধিক ছয় টাকা কেজি দরে। নওদার চাষিরা বলছেন, সংরক্ষণের ব্যবস্থা না-থাকায় ক্ষেত থেকে তুলেই কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হন তারা। সেই পেঁয়াজ কলকাতা, শিলিগুড়ি ছাড়াও ভিন্ন রাজ্যে পাঠিয়ে মুনাফা লোটে ফড়ে ও মহাজনরা।
তবে অন্য একটি সমস্যার কথাও শুনিয়েছেন হরিহরপাড়ার বিক্রেতা সোনারুদ্দিন খান। তিনি বলেন, ‘বহরমপুরের মহাজনেরা আমাদের পেঁয়াজ পৌঁছে দেন। মঙ্গলবার থেকে কেনা দাম পড়ছে কেজি ১২০ টাকা। বস্তায় গড়ে পাঁচ-ছয় কেজি পেঁয়াজ নষ্ট। তাই দেড়শ’ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি।’
রাজ্য সরকারের সুলভ মূল্যের বাজার বা ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে ৫৯ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। আপাতত এই পদ্ধতি চালু থাকবে বলেই জানিয়েছে টাস্ক ফোর্স।