ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | মজুতদারদের ‘মগজধোলাই’ দিতে হবে, শিক্ষার্থীদের প্রতি রাষ্ট্রপতির আহ্বান

মজুতদারদের ‘মগজধোলাই’ দিতে হবে, শিক্ষার্থীদের প্রতি রাষ্ট্রপতির আহ্বান

president-20191205193931

নিউজ ডেক্স : পকেটমারদের যেমন গণধোলাই দেওয়া হয় তেমনি মজুতদার-মুনাফালোভীদের মগজধোলাই দিতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ হলো একটা আজব দেশ। ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি নতুন ধান উঠলে চালের দাম কমে যায়। এখন বিভিন্ন দিকে ধান উঠছে। কৃষকরা হাহাকার করছে। ধানের দাম নেই। অথচ ব্যবসায়ী আর মজুতদাররা চালের দাম প্রতি কেজিতে দু-তিন টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে!’

‘এটা আসলে খুব দুঃখজনক। এখানে আমি কী বলবো? পকেটমারদের যেমন গণধোলাই দেওয়া হয় তেমনি এদেরও; আসলে এদের মগজধোলাই দিতে হবে।’

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তনে সভাপতি হিসেবে বক্তৃতাকালে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আবদুল হামিদ বলেন, ‘যারা দাম বাড়িয়ে মানুষকে ঠকাচ্ছে সেসব মজুতদার-মুনাফালোভীদের বোঝাতে হবে। রাতারাতি ধনী হওয়ার জন্য এসব কাজ ঠিক নয়।’

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতাদের শুধু উন্নয়নমূলক কাজ নয়, মানুষকে মোটিভেট করা, এরকম মজুতদারদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে সঠিক পথে আনা একটা পবিত্র দায়িত্ব। এগুলো আপনার পালন করবেন।’

চুয়েটের সমাবর্তনে মেয়েদের গোল্ড মেডেল না পাওয়া নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এখানে মাত্র ৪টা গোল্ড মেডেল, তিনটা ছেলেরা নিয়ে গেল আর একটা অ্যাবসেন্ট (অনুপস্থিত) সেটাও নাকি ছেলে। এখানে মেয়েরা আমাকে একটু হতাশ করেছে। শুনলাম এখানে মেয়েদের সংখ্যা ৩৪-৩৫ পারসেন্ট (শতাংশ) হবে। অবশ্য আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বলেছিলাম, মেয়েরা গোল্ড মেডেল পাইলে অলঙ্কার বানিয়ে ফেলে, এই কথার কোনো প্রভাব পড়ছে কি-না জানি না।’

তিনি বলেন, ‘প্রকোশলীরা হলেন উন্নয়নের কারিগর। তাদের মেধা-মননে প্রণীত হবে উন্নয়নের রূপরেখা। প্রকৌশল শিক্ষা যদিও হাতে-কলমে, তবু এখানেও সৃজনশীলতার প্রচুর সুযোগ রয়েছে। প্রকৌশলীদের জ্ঞানের ভিত্তি সুদৃঢ় করতে যুগোপযোগী পাঠ্যক্রম ও উন্নত পাঠদানের ব্যবস্থা থাকতে হবে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। যেখানে শিক্ষার্থীদের অন্তর্নিহিত মেধার সৃজনশীল বিকাশের সব আয়োজন নিশ্চিত করা হয়। কেবল পুঁথিগত বিদ্যা নয়, বরং দেশ-বিদেশের সর্বশেষ তথ্যসমৃদ্ধ শিক্ষা, গবেষণা এবং সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে যেন শিক্ষার্থীরা সম্পৃক্ত হতে পারে, তার দ্বার উন্মোচন করবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে বন্ধুত্বমূলক সম্পর্ক বজায় থাকা আবশ্যক। শিক্ষকদের হতে হবে স্নেহশীল ও অভিভাবকতুল্য। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার মহান উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে এবং একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখবে।’

’৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়ন ব্যাহত করা হয় উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ইতোমধ্যে স্বাধীনতার ৪৮ বছর পার করেছি। মহান মুক্তিযুদ্ধে রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তির যে লক্ষ্য ছিল তা আমরা এখনও পুরোপুরি অর্জন করতে পারিনি। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে সে পথ রুদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বাকস্বাধীনতা, চিন্তা ও মতামতের স্বাধীনতা।’

মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে যথাযথভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। বিশ্বায়নের এ যুগে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে আমাদের জ্ঞান ও দক্ষতাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে। আত্মমর্যাদা সমুন্নত রেখে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে।’

‘আমি আশা করি, আজকের নবীন প্রকৌশলীরা বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে উপলব্ধি করবেন। তাদের সৃজনশীল চিন্তা ও লব্ধ জ্ঞান এ লক্ষ্যে কাজে লাগাবেন।’

তিনি বলেন, ‘নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত। প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে সামনে রেখে একটি তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক জ্ঞাননির্ভর দেশ গঠনে ‘রূপকল্প ২০২১’ ও ‘রূপকল্প ২০৪১’ ঘোষণা করেছেন।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ’বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ। এদেশে রয়েছে বিপুল মানবসম্পদ, উর্বর কৃষি খাত ও সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক সম্পদ। জনবহুল এ দেশটিকে সমৃদ্ধ করতে হলে প্রয়োজন পরিকল্পিত উপায়ে সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার।’

চুয়েটের এবারের সমাবর্তনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করা ২ হাজার ২৩১ শিক্ষার্থীকে ডিগ্রি প্রদান করা হচ্ছে। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী।

সমাবর্তনে আরও বক্তৃতা করেন বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান, সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন, জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা।

এর আগে রাউজান উপজেলার ১৮২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০ হাজার শিক্ষার্থীর মাঝে তিন বছর ধরে প্রতিদিন চলমান স্কুল ফিডিং মিড ডে মিল কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২২ হাজার ২৬০টি টিফিন বক্স বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!