## সঞ্চয়ের জন্য ৪০ দশমিক ২২ শতাংশ মানুষ এনজিওতে টাকা রাখেন
## ব্যাংকে টাকা রাখেন মাত্র ৩৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ মানুষ
## গড়ে ৩৩ শতাংশ পরিবারের কোনো না কোনো সঞ্চয় আছে
নিউজ ডেক্স : ঋণ করার ক্ষেত্রে নগরবাসীর পছন্দের শীর্ষে রয়েছে বেসরকারি সংস্থা বা এনজিও। এরপরই অবস্থান বন্ধুদের। এছাড়া সিটি করপোরেশনের অর্ধেক বাসিন্দা এনজিওগুলোতে সঞ্চয় করেন। টাকা সঞ্চয় ও ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকের চেয়ে বেশি আস্থা এনজিওতে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘নগর আর্থ-সামাজিক অবস্থা নিরূপণ’ শীর্ষক এক জরিপে এ তথ্য উঠে আসে। এরই মধ্যে এ সংক্রান্ত ফল প্রকাশ করেছে সরকারি সংস্থাটি। জরিপ থেকে জানা যায়, নগরের ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে ৬৪ দশমিক ৩০ শতাংশ ঋণ করেন এনজিও থেকে। যেখানে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় মাত্র ০ দশমিক ৭৯ শতাংশ মানুষ।
অন্যদিকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পছন্দ বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশী। এদের কাছ থেকে ১২ দশমিক ৬৯ শতাংশ মানুষ ঋণ নেন। একইভাবে সঞ্চয়ের জন্য ৪০ দশমিক ২২ শতাংশ মানুষ এনজিওতে টাকা রাখেন। অন্যদিকে ব্যাংকে টাকা রাখেন মাত্র ৩৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ মানুষ।
এছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ৭ দশমিক শূন্য ৮, কর্মদাতা থেকে ১ দশমিক ২৫, মহাজনের কাছ থেকে ৩ দশমিক শূন্য ৪, সমবায় সমিতি থেকে ১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ নগরবাসী ঋণ নেন।
জরিপে দেখা যায়, সিটি করপোরেশনের মধ্যে ঋণগ্রহীতাদের ঋণের পরিমাণ গড়ে ৪৬ হাজার ৪৯ টাকা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরীর ঋণগ্রহীতারা ৪৫ হাজার ৭৪৫ টাকা ঋণ নেন। আর অন্য মহানগরের ঋণগ্রহীতাদের ঋণের পরিমাণ ৪৭ হাজার ১৮১ টাকা। ঢাকা-চট্টগ্রামের ঋণগ্রহীতাদের ঋণের পরিমাণ বেশি।
বিবিএস জানায়, বাংলাদেশে শহরে বসবাসকারী ঝুঁকির মুখে থাকা জনগোষ্ঠীকে সঞ্চয় ও ঋণে আগ্রহী করে তোলার ক্ষেত্রে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও ব্যাংকের মতো গতানুগতিক উৎসকে ছাপিয়ে প্রধান প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভূমিকা রাখছে এনজিওগুলো।
সংস্থাটি আরও বলছে, অর্থনৈতিক দুরবস্থার সময় সঞ্চয়ের টাকা দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে যে কোনো খারাপ পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিয়ামক হিসেবে সহায়তা করে। পাশাপাশি ভূমিকা পালন করে তাদের ভোগের প্রবণতাকে স্থিতিশীল রাখতে।
এদিকে গড়ে ৩৩ শতাংশ খানা (পরিবার) উল্লেখ করেছে যে, তাদের কোনো না কোনো সঞ্চয় রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় এ হার অন্য নগর এলাকার থেকে অর্ধেক। খানার গড় সঞ্চয় ৪৭ হাজার ৫৪২ টাকা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরীর সঞ্চয়কারী খানার হার মাত্র ২৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ছাড়া সঞ্চয়কারীর হার ৫১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গড়ে ৪২ দশমিক ২২ শতাংশ সঞ্চয়কারী এনজিও ব্যবহার করেন। অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরীর ৪৭ দশমিক ২৭ শতাংশ সঞ্চয়কারী ব্যাংকে টাকা রাখেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগর ছাড়া অন্য সিটি করপোরেশন এলাকার ২৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ সঞ্চয়কারী ব্যাংক ব্যবহার করেন। গড়ে ব্যাংকে সঞ্চয় করেন মাত্র ৩৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ মানুষ।
সব নগরীর ৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ মানুষ নিজ ঘরে সঞ্চয় রাখেন। সমবায় সমিতির কাছে ৩ দশমিক ৫৫, কর্মসংস্থানের প্রভিডেন্ট ফান্ডে ১ দশমিক ৯৩, বিমা কোম্পানির কাছে ৫ দশমিক ৮৫ ও পোস্ট অফিসে ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ মানুষ সঞ্চয় করেন।
ব্যাংকের চেয়ে এনজিওতে মানুষের আস্থা বেশি কেন- এমন প্রশ্নে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, অনেকের ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার মতো যোগ্যতা থাকে না। এটা আস্থার বিষয় নয়, অ্যাকসেসের বিষয়। নগরীতে বস্তিবাসীর সংখ্যা বেশি। এনজিওগুলো আবার এদের নিয়ে কাজ করে। সে কারণে এনজিও থেকে বেশি ঋণ নেন নগরবাসী।
বিবিএস জানায়, ‘নগর আর্থসামাজিক অবস্থা নিরূপণ’ জরিপে তথ্য সংগ্রহ করেছে ৪৪ জন। তথ্য সংগ্রহকারীদের ৬০ শতাংশই ছিলেন নারী। বিবিএসের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের মোট ১০ জন সুপারভাইজিং কর্মকর্তা মাঠ তদারকিতে ছিলেন।
এছাড়া সব খানার তালিকার জন্য ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর থেকে তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়। খানা তালিকা প্রস্তুত কার্যক্রমটি ক্যাপি অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর শেষ হয়। এরপর দিন ১৪ ডিসেম্বর শুরু হয় মূল জরিপের তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম, যা শেষ হয় ২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর। ট্যাবলেট ও স্মার্টফোনের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
দৈবচয়নের ভিত্তিতে মোট দুই হাজার ১৫০টি খানার ওপর জরিপ করে বিবিএস। জরিপ এলাকা ছিল ঢাকা দক্ষিণ, ঢাকা উত্তর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন।
বিবিএস রিপোর্ট ও এনজিওতে মানুষের আস্থা প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এনজিওগুলোতে ঋণ পাওয়া সহজ। কিন্তু অন্য মাধ্যমে কঠিন। এনজিওতে সহজেই অ্যাকসেস পাওয়া যায়।
বন্ধুর কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, নগরীতে এমন অনেক মানুষ রয়েছেন, যারা অপরের বিপদে পাশে থাকেন। বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার সুবিধা আছে। মূল টাকা ফেরত দিলেই হয়, এতে সুদ দেওয়া লাগে না। মূলত এসব সুবিধার জন্য বন্ধুদের কাছ থেকে ঋণ নেন অনেকে। -জাগো নিউজ