নিউজ ডেক্স : সামাজিক যোগাযোগ-মাধ্যম ফেসবুকে গ্রুপ খুলে ঢাকা- চট্টগ্রাম মহাসড়কে অপহরণ, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ৬ যুবককে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১১) সিপিসি-২ কুমিল্লার সদস্যরা।
শুক্রবার (৩ জুন) রাতে ঢাকার ডেমরা এলাকা থেকে অপহরণ-ছিনতাই ও ডাকাত চক্রের এ সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়। শনিবার (০৪ জুন) র্যাব-১১ কুমিল্লা উপ পরিচালক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
গ্রেফতারের সময় চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে চারটি সুইচ গিয়ার চাকু, দুটি ধারালো চাকু, স্কচ-টেপ ও অসংখ্য দাতব্য যন্ত্রপাতিসহ একটি কাঠের-বাক্স জব্দ করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার উল্টর নছরুদ্দি গ্রামের মৃত শাহ আলমের ছেলে মো. জিসান আহমেদ(৩২), খুলনার চালনা থানার কামার খোলা দাকোপ গ্রামের মো. মনিরুল ইসলাম গাজীর ছেলে মো. ইসমাইল গাজী (২৫) ও পাইকগাছা থানার গদাইপুর গ্রামের মো. ছবুর গাজীর ছেলে মো. এখলাছুর রহমান ফাহিম (১৯), পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া থানার পশ্চিম পশারী বুনিয়া গ্রামের মো. জাকির হোসেনের ছেলে মো. জায়েদ আল শাহান (২১), সুনামগঞ্জের তাহেরপুর থানার দীঘির-পাড় গ্রামের মো. মারাফত আলীর ছেলে মো. আবির হোসেন (২১) ও ঢাকার ডেমরা থানার ডেমরা এলাকার হাজী আ. সালামের ছেলে মো. হাবিবুর রহমান (৩৪)।
এ সময় মো. ইমাম হোসেন (২৭) নামে জিম্মি অবস্থায় থাকা অপর যুবককেও উদ্ধার করা হয়। র্যাব জানায়, বৃহস্পতিবার (২ জুন) রাত ৯টার দিকে চাকরিতে যোগ দিতে ইমাম হোসেন কুমিল্লা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। হোটেল নূরজাহানের সামনে তিনি গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এ সময় তার দূর সম্পর্কের আত্মীয় মো. জাফর আহমেদের (২১) সঙ্গে তার দেখা হয়।
জাফরও ঢাকা যাবেন, তাই দুই ভাই একই স্থানে অপেক্ষারত ছিলেন। এমন সময় একটি কালো হায়েস গাড়ি তাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। গাড়ির ভেতর থেকে এক ব্যক্তি বলেন, তারা ঢাকা যাবেন। অল্প টাকায় ঢাকা যেতে চাইলে তাদের গাড়িতে উঠতে পারেন। এরপর ইমাম ও জাফর ওই গাড়িতে ওঠেন।
হায়েসটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে গিয়ে কোটবাড়ি বিশ্বরোড পর্যন্ত পৌঁছলে গাড়ির ভেতরে থাকা অপর সদস্যরা চাকু দিয়ে আঘাত করার ভয় দেখিয়ে হাত-পাঁ বেধে ইমাম ও জাফরের কাছে থাকা মোবাইল ও টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নেয়।
এরপর তারা ইমাম ও জাফরের মোবাইল থেকে তাদের পরিবারকে কল করে। দুই লাখ টাকা না দেওয়া হলে বন্দীদের হত্যার হুমকি দেন দুর্বৃত্তরা। আরও কিছুদূর যাওয়ার পর গভীর রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে নামে অপহরণকারীরা। এ সময় জাফর কৌশলে পালিয়ে যান। তারপর অপহরণকারীরা ইমামকে নিয়ে ঢাকা চলে যান। জানা গেছে, ইমামকে তারা অমানবিক নির্যাতন করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মুক্তিপণের টাকা দিতে তার পরিবারকে চাপ দিতে থাকে।
শুক্রবার (৩ মে) দুপুরে ইমামের স্ত্রী মোসা. রিনা আক্তার (২৫) র্যাব-১১ কুমিল্লা অফিসে গিয়ে তার স্বামীকে অপহরণ ও দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবির বিষয়টি জানিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে চক্রের এ ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাব।
র্যাব আরও জানায়, চক্রটি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফেসবুকে বি অনেস্ট বাংলাদেশ (বিএইচবি) নামে একটি গ্রুপ তৈরি করে। অল্প সময়ে টাকা আয়ের উপায় চিন্তা করতে থাকেন গ্রুপের সদস্যরা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চাকরির পাশাপাশি খুব সহজেই অপহরণ, ছিনতাই ও ডাকাতি করে অল্প সময়ে অনেক টাকা আয় করা যায় এমন চিন্তা করে তারা। সে অনুযায়ী পরিকল্পনা ও পরবর্তীতে প্রতি সপ্তাহে গ্রুপের দুজন সদস্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে রেকি (পর্যবেক্ষণ) করার কাজে নিয়োজিত থাকেন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কোন কোন জায়গা থেকে সাধারণ যাত্রীরা যানবাহনের খোঁজ করে সে জায়গাগুলো টার্গেট পয়েন্ট হিসেবে চিহ্নিত করে গ্রুপটির সদস্যরা। পরবর্তীতে রেকিতে নিয়োজিত সদস্যরা টার্গেট পয়েন্ট সম্পর্কে গ্রুপে তথ্য জানায়। এরপর মূল হোতা জিসানের সম্মতিতে মিশনের তারিখ নির্ধারন করেন তারা। এভাবে গত এক বছর ধরে তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অসংখ্য চুরি, অপহরণ, ছিনতাই ও ডাকাতির মিশন চালায়।
অপহরণকারীদের স্বীকারোক্তি ও মোবাইল ফোন বিশ্লেষণ করে তাদের পরবর্তী টার্গেট পাওয়া গেছে। আগামী ৬ জুন ঢাকায় একটি ব্যাংকের খিলগাঁও থানার বাসাবো শাখা থেকে টাকা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে তারা। ফেসবুকের গ্রুপটি ঘেঁটে দেখা গেছে- সদস্যরা ওই ব্যাংকের শাখা রেকি করেছে। পরিকল্পনা ছিল, দুই সদস্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার নাম করে গ্রাহকরা কে কত টাকা তুলছেন তা পর্যবেক্ষণ করবে।
বাকি সদস্যরা কে কোথায় অবস্থান নেবে, গ্রাহক টাকা নিয়ে ব্যাংক থেকে বের হয়ে গেলে কোন রাস্তার কোথায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে তার কাছ থেকে ছিনতাই করবে, কোন লোকেশনে গিয়ে গা ঢাকা দেবে- তা নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে। এমনকি গুগল ম্যাপে স্পটগুলো স্ক্রিনশটও নিয়ে রাখা হয়েছে। চক্রের সদস্যরা আরও বড় মিশন পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন বলেও জানিয়েছে।
র্যাব-১১ কুমিল্লা উপ পরিচালক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন সংবাদ সম্মেলনে আরও জানান, এসব ঘটনায় এ অপহরণ-ছিনতাই ও ডাকাত চক্রের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে জেলার সদর দক্ষিণ মডেল থানায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এজাহারে তাদের নাম উল্লেখসহ মোকতাদির (২৫), মাকসুদ(২২), মো. ইলিয়াস (২৪) নামে আরও তিনজনকে পলাতক দেখানো হয়েছে। -বাংলানিউজ