কায়সার হামিদ মানিক, উখিয়া : উখিয়ার আড়াই লক্ষাধিক জনসাধারণের বসবাস যোগ্য এলাকায় আরো প্রায় ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়ায় নিত্যপণ্যের বাজারে প্রভাব পড়েছে। এক কেজি কাঁচা মরিচ দিয়ে মিলছে একটি মুরগি। ৮০ টাকার নিচে কোন তরকারি মিলছে না। চালের বাজার রয়েছে অপরিবর্তিত। মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে কেজি ৫০ টাকা দরে। সামুদ্রিক মাছে হাটবাজার ভরপুর থাকলেও দাম কমেনি। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা দরে। এভাবে প্রতিটি পণ্যের বিপরীতে দাম বেড়ে যাওয়ার নেপথ্যে ক্রেতা সাধারণ অতিরিক্ত রোহিঙ্গার বোঝাকে দায়ী করছেন। খুচরা ব্যবসায়ীরাও বলছে সরবরাহকৃত পণ্য সামগ্রীর সিংহভাগ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলে যাওয়ার কারনণ স্থানীয় জনসাধারণে জীবনযাত্রায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। শনিবার উখিয়ার ব্যস্ততম সবজি বাজার ঘুরে দেখা যায়, শীতকালীন শাক-সবজিতে বাজার ভরপুর। কিন্তু দাম ক্রয় ক্ষমতার নাগালের বাইরে। খুচরা সবজি ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম জানায়, এখানে উৎপাদিত শাক-সবজি স্থানীয়দের চাহিদা পুরণ হচ্ছে না। দোহাজারী, সাতকানিয়া, আমিরাবাদ, পটিয়ার বিভিন্ন আড়ত থেকে শাক-সবজি আনতে গিয়ে পরিবহন খরচ পড়ছে দ্বিগুণ। যানবাহন শ্রমিকেরা রোহিঙ্গার অজুহাতে ভাড়া বাড়ানোর কারণে সবজির দামও বাড়ছে। স্থানীয় আরেক পাইকারী তরকারি ব্যবসায়ী শামসুল আলম জানায়, সরবরাহকৃত শাক-সবজির সিংহভাগ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন হাটবাজারে চলে যাচ্ছে। যে কারণে স্থানীয় হাটবাজারগুলোতে সবজি সংকটের পাশাপাশি দাম উঠা নামা করছে প্রায় সময়। স্থানীয় ক্রেতা হাজী আব্দুল মান্নান অভিযোগ করে জানান, রোহিঙ্গাসহ বিশাল জনগোষ্ঠীর চাহিদার সুযোগে সবজি ব্যবসায়ীরা ক্রেতা সাধারণের নিকট থেকে অতিরিক্ত দাম আদায় করছে। বাজারে প্রতি কেজি মুলা বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা দরে, বেগুন ৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২৫০ টাকা, টমেটো ১৬০ টাকা, শিম ৮০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭৫ টাকা, শসা ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ এসব শাক-সবজি রোহিঙ্গা আসা পুর্বে কেজি ৩০ টাকার উপরে উঠেনি। ক্রেতা সাধারণের অভিযোগ হাটবাজারের পণ্য মূল্য তদারকির জন্য উপজেলা পর্যায়ের মনিটরিং কমিটি থাকলেও তা কার্যত অচল। যার ফলে ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছামতো দাম আদায় করছে। চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, ২৮ নং চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০/৫২টাকা দরে। অথচ রোহিঙ্গা আসার পুর্বে এ চাল বিক্রি হয়েছে কেজি ৩০/৩২টাকা দরে। খুচরা চাল বিক্রেতা নজু মিয়া জানায়, পাইকারী ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেয়ার পরও চালের বাজার অপরিবর্তিত রয়েছে। পাইকারী ব্যবসায়ী ছয়তারা রাইস মিলের মালিক কবির আহমদ সওদাগর জানান, আমদানীকৃত চালের দাম ২/৩ টাকা কমলেও খুচরা বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। তাই চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মাংস বিক্রেতা মুসলিম মিয়া জানায়, চাহিদা অনুপাতে গরু, মহিষ, ছাগল পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু কিছু গরু, মহিষ পাওয়া গেলেও কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। যে কারণে মাংসের দাম আগের তুলনায় একটু বেড়েছে। বাজারের মাছ ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে ক্রেতা সাধারণ অভিযোগ করে বলেন, সামুদ্রিক মাছে বাজার ভরপুর থাকলেও রোহিঙ্গার অজুহাত দেখিয়ে কেজি প্রতি ৮০/৯০ টাকা বাড়িয়ে দিচ্ছে। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান জানান, কিছু সমস্যার কারণে এ মুহুর্তে হাটবাজার মনিটরিং করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে যতদ্রুত সম্ভব বাজার পরিদর্শন করে দ্রব্যমূল্য নির্ধারণে ব্যবস্থা নেয়া হবে।