আতাউর রহমান খসরু : আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কিছু সাহাবি তাঁকে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, বিত্তবান লোকেরা পুণ্য ও সওয়াবের কাজে এগিয়ে গেছে। আমরা নামাজ যেভাবে পড়ি তারাও আমাদের মতো নামাজ পড়ে। আমরা রোজা রাখি, তারাও আমাদের মতো রোজা রাখে। তারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাল সদকা করে।’
তিনি বলেন, ‘আল্লাহ কি তোমাদের জন্য এমন জিনিস দান করেননি যে সদকা দিতে পারো? নিশ্চয়ই সব তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ) সদকা, সব তাকবির (আল্লাহু আকবার) সদকা, সব তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ) সদকা, সব তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) সদকা, প্রতিটি ভালো কাজের আদেশ ও উপদেশ দেওয়া এবং মন্দ কাজে নিষেধ করা ও বাধা দেওয়া সদকা। এমনকি তোমাদের শরীরের অংশে অংশে সদকা রয়েছে অর্থাৎ তোমাদের প্রত্যেকের স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করাও সদকা।’ তাঁরা বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমাদের মধ্যে কেউ কাম প্রবৃত্তি চরিতার্থ করবে আর এতেও কি তার সওয়াব হবে?’ তিনি বললেন, ‘তোমরা বলো দেখি, যদি সে হারাম পদ্ধতিতে তা করত, তাহলে কি সে গুনাহগার হতো না? অনুরূপভাবে যখন কেউ বৈধভাবে সে কাজ করবে, সে তার জন্য প্রতিফল ও সওয়াব পাবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৩৭৬)
ভালো কাজে প্রতিযোগিতা কাম্য : সাহাবায়ে কেরামদের (রা.) সৎ কাজের আগ্রহ ছিল অত্যন্ত প্রবল, তাঁদের প্রতিযোগিতা ছিল নেক কাজগুলোয়। যেমন এ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলাও পুণ্যের কাজে প্রতিযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘এ বিষয়ে প্রতিযোগীরা প্রতিযোগিতা করুক।’ (সুরা : মুতাফফিফিন, আয়াত : ২৬)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এরূপ সাফল্যের জন্য সাধকের উচিত সাধনা করা।’ (সুরা : সফফাত, আয়াত : ৬১)
ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, ‘…যেমন রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবিরা নেক কাজে প্রতিযোগিতা করতেন এবং সে কাজে অংশগ্রহণের মাধ্যমে একে অপরের ওপর আনন্দিত হতেন এবং একে অপরকে অনুপ্রাণিত করতেন। এটিও এক প্রকারের প্রতিযোগিতা।’ (আর রুহ : ১/২৫১)
পুণ্যের কাজে প্রতিযোগিতা করে যারা এগিয়ে যাবে, আল্লাহ তাদের পুরস্কারের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘তোমরা অগ্রণী হও তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা ও সে জান্নাত লাভের প্রয়াসে, যা প্রশস্ততায় আকাশ ও জমিনের মতো।’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ২১)
ভালো কাজের প্রতি সাহাবাদের আগ্রহ ও প্রতিযোগিতা :
১। অসামর্থ্যের জন্য ব্যথিত হওয়া : এই হাদিসে যেমন এসেছে, দরিদ্ররা দুঃখিত হলো যে অনেক নেক কাজ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না, অথচ তাদের মধ্যে অন্যরা (ধনীরা) সেগুলো করতে সক্ষম ছিল।
২। দুশ্চিন্তা : অস্ত্র জোগাড়ের সামর্থ্য না হওয়ায় যুদ্ধে যেতে না পারলে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হতো তারা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদেরও কোনো অপরাধ নেই, যারা আপনার কাছে বাহনের জন্য এলে আপনি বলেছিলেন তোমাদের জন্য কোনো বাহন আমি পাচ্ছি না, তারা অর্থ ব্যয়ে অসমর্থজনিত দুঃখে অশ্রুবিগলিত চোখে ফিরে যায়।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৯২)
৩। নেক কাজ ছুটে গেলে দুঃখ প্রকাশ করা : যখন ইবনে ওমর (রা.)-এর কাছে এ হাদিস পৌঁছল যে ‘যে ব্যক্তি জানাজায় উপস্থিত হয়ে নামাজ পড়া পর্যন্ত থাকে, তার জন্য এক কিরাত সওয়াব; যে ব্যক্তি জানাজায় উপস্থিত হলো এবং দাফন করা পর্যন্ত উপস্থিত থাকল, তার জন্য দুই কিরাত সওয়াব। তিনি বলেন, ‘আমরা কয়েক কিরাত পর্যন্ত অগ্রসর হতাম।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২২৩২)
ভালো কাজে অগ্রসর হওয়া ঈমানের দাবি : আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা তোমাদের প্রভুর ক্ষমার দিকে অগ্রসর হও এবং জান্নাতের দিকে, যার প্রশস্ততা আসমান ও জমিনের সমান।’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ২১)
ভালো কাজে প্রতিযোগিতাকারীদের প্রশংসায় কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারাই দ্রুত সম্পাদন করে কল্যাণকর কাজ এবং তারা তাতে অগ্রগামী হয়।’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ২৮)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন কিয়ামত কায়েম হবে তখন তোমাদের কারো হাতে একটি বীজ থাকে এবং যদি তা গজানোর আগে কিয়ামত কায়েম না হয়, তবে সে যেন তা রোপণ করে।’ (আল জামে বাইনাস সহিহাইন, হাদিস : ২৬৮৯)
ভালো কাজে উৎসাহ প্রদান : মুমিন নিজে যেমন ভালো কাজ করবে, তেমনি অন্যকেও উৎসাহিত করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর কথা ও কাজের মাধ্যমে অন্যকে ভালো কাজে উৎসাহিত করতেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা উঁচু ও মহৎ কাজ এবং সৎ মানুষকে পছন্দ করেন এবং নিকৃষ্ট কাজ অপছন্দ করেন।’ (সুনানে তিবরানি, হাদিস : ২৮৯৪)
অন্য হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন প্রার্থনা করবে তখন সে যেন বেশি বেশি প্রার্থনা করে। কেননা সে তার প্রভুর কাছে প্রার্থনা করছে।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ১৭২)
বারিআ ইবনে কাব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে রাত যাপন করেছিলাম। আমি তাঁর জন্য অজু ও প্রয়োজন পূরণের জন্য পানি আনলাম। তিনি আমাকে বললেন, ‘আমার কাছে চাও।’ আমি বললাম, ‘আমি বেহেশতে আপনার সঙ্গ লাভ করতে চাই।’ তিনি বললেন, ‘তাহলে অধিক পরিমাণ সিজদার দ্বারা—তুমি নিজের স্বার্থেই—আমাকে সাহায্য করো।’ (সহিহ মুসলিম, আয়াত : ১১২২)