Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | বিকল্প ছয়টি রুটে ইয়াবা ব্যবসা সচল

বিকল্প ছয়টি রুটে ইয়াবা ব্যবসা সচল

ceab04c4680df1a21be91acd46cdcc28-yaba-tablets

নিউজ ডেক্স : কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সারাদেশে ইয়াবা ছড়িয়ে দিতে মাদকের গডফাদাররা এখন ব্যবহার করছে বিকল্প ছয়টি রুট। মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানের আগেই ছক কষে তারা এসব রুট তৈরি করে রাখে। স্থল ও রেলপথের পাশাপাশি বিকল্প রুট হিসেবে ব্যবহূত হচ্ছে নৌপথও। এভাবে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার ইয়াবার ব্যবসা চলছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিকল্প ছয় রুটের মধ্যে নৌপথের দুটি রুট এখন সরগরম। টেকনাফ থেকে নৌপথের একটি রুটে কিছু চালান চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জ হয়ে ঢাকায় যায়। আরেকটি রুটে কিছু চালান বরিশাল, খুলনা, পটুয়াখালী ও ভোলা হয়ে যাচ্ছে দেশের অন্য প্রান্তে। বিকল্প স্থল রুটের মধ্যে একটি রুট টেকনাফ হয়ে মিশেছে আরাকান সড়কে। অন্যটি কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়ক হয়ে মিশেছে শাহপরীর দ্বীপে। তবে আরাকান সড়কে তল্লাশি অব্যাহত থাকায় পার্বত্য এলাকায় ইয়াবা নিতে উখিয়ার ঘুমধুম হয়ে পাচারকারীরা যাচ্ছে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে। আর রেল রুটে টেকনাফ থেকে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ হয়ে ইয়াবা যাচ্ছে চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে।

বিকল্প পথে নজরদারি কম থাকায় সারাদেশে ইয়াবা ছড়িয়ে পড়ছে এসব রুট দিয়ে। জাতিসংঘের মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (ইউএনওডিসি) মতে, টেকনাফ থেকে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া এই ইয়াবার বাজার মূল্য প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা।

এ প্রসঙ্গে র‌্যাব-৭ চট্টগ্রামের অধিনায়ক লে. কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সড়কপথে নজরদারি বাড়ায় মাদক পাচারে ব্যবহার করা হচ্ছে নৌপথ। তাই নৌপথেও নজরদারি বাড়িয়েছি আমরা। বিকল্প অন্য পথগুলোতেও বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতা। তার পরও মাদক ব্যবসায়ীরা বসে নেই। আমরাও তাদের নিত্যনতুন কৌশল ভণ্ডুল করতে আঁকছি নতুন ছক।’

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পরিচালক মজিবুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, নজরদারি বাড়ায় বিকল্প রুট তৈরি করে মাদক পাচারের চিন্তা করছে ব্যবসায়ীরা। এরই মধ্যে এসব রুট দিয়ে বড় চালানও পাঠিয়েছে তারা। কিন্তু তাদের সে চেষ্টাও বেশিরভাগ সময় ব্যর্থ হয়েছে। নৌপথে ও তাদের তৈরি শাখা পথেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন নজরদারি বাড়িয়েছে।

কৌশল পাল্টানোয় বাড়ছে ইয়াবার বাজার :২০১৭ সালের জুনে প্রকাশিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৮ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে সারাদেশে ইয়াবার ব্যবহার ৮০ শতাংশ বেড়েছে। আর ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। আবার ২০১২ সালে মোট মাদকসেবীর মধ্যে ইয়াবা আসক্ত ছিল ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ। কিন্তু ২০১৬ সালে তা হয়েছে ৩১ দশমিক ৬১ শতাংশ। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১১ সালে জব্দ হওয়া ইয়াবার পরিমাণ ছিল ১৩ লাখ ৬০ হাজার পিস। ২০১৬ সালে তা হয়েছে ২ কোটি ৯৪ লাখ পিস। আর ২০১৭ সালে ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ ৯১ হাজার। সর্বশেষ বছরে উদ্ধার হওয়া প্রায় ৪ কোটি ইয়াবাকে হিসাবে এনে ইউএনওডিসি জানায়, সাধারণত মোট মাদকের মাত্র ১০ শতাংশ উদ্ধার করতে পারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রতিটি ইয়াবার দাম গড়ে দেড়শ’ টাকা ধরলেও এসব ইয়াবার দাম হয় ৬ হাজার কোটি টাকা।

নৌপথে ছড়িয়ে যাচ্ছে ইয়াবা :দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ইয়াবার চালান ধরা পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায়। ২০১৬ সালের ১৭ জানুয়ারি র?্যাব-৭-এর একটি দল চট্টগ্রামের পতেঙ্গা বহির্নোঙর থেকে ২৮ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করে। এর আগের বছর ৫ ফেব্রুয়ারি মাছ ধরার ট্রলার থেকে ৭৭ কোটি টাকা মূল্যের ১৪ লাখ ইয়াবা উদ্ধার করেন নৌবাহিনীর চোরাচালান প্রতিরোধ সেলের সদস্যরা। একই স্থান থেকে ২০১৫ সালের ১৪ অক্টোবর মাছ ধরার আরেকটি ট্রলার থেকে সাড়ে ২০ কোটি টাকা মূল্যের ৬ লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবাসহ দু’জনকে আটক করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এ ছাড়া ১৬ এপ্রিল ২০ লাখ ইয়াবার আরেকটি চালান নদীপথ থেকে আটক করে র‌্যাব। ২০১৭ সালের ২৩ জুন চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সি বিচ থেকে ১৫ লাখ ইয়াবাসহ আরেকটি ট্রলার আটক করে র‌্যাব। শুধু নৌবাহিনী ও র‌্যাব নয়; নৌপথে ইয়াবা ছড়ানোর প্রমাণ মেলে কোস্ট গার্ডের উদ্ধারকৃত মাদক থেকেও। ২০১৮ সালের প্রথম পাঁচ মাসেই শুধু নৌপথ থেকেই চোরাচালানের ৮০ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে।

সূত্র : দৈনিক সমকাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!