এলনিউজ২৪ডটকম : লোহাগাড়া থানা পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতে দায়েরকৃত মামলা ২টি মিথ্যা ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বলে দাবী করেছেন লোহাগাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ শাহজাহান পিপিএম (বার)। ২৬ মে শুক্রবার সন্ধ্যায় থানা কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ তথ্য জানান। এ দু’টি মামলার ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ তদন্তও দাবী করেন তিনি।
জানা যায়, লোহাগাড়া উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের সর্দ্দানী পাড়ার মৃত ছিদ্দিক আহমদের পুত্র আনোয়ার হোসেন (১৯) ও দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী মায়মুনা বেগম (২২) বাদী হয়ে লোহাগাড়া থানা পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।
লোহাগাড়া থানার ওসি জানান, আধুনগর সর্দ্দানী পাড়ার ছিদ্দিক আহমদের পুত্র দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে ২টি মামলা রয়েছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ১২ মে দুপুর দেড়টায় তাকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ অভিযান চালায়। এ সময় আসামী দেলোয়ার হোসেন পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালানোর চেষ্টা করে। পুলিশ তাকে আটকের চেষ্টা করলে তিনি পুলিশের ওপর এলোপাতাড়িভাবে কিল ঘুষি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে দেলোয়ারের ভাই হারুনুর রশিদ ওরফে বিল্ডার হারুন ওরফে ক্যাডার হারুন (২৮), আনোয়ার হোসেন (১৯), বেলাল উদ্দিন (৩১), হামিদা বেগম (২২), মায়মুনা বেগম (২২) সহ অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজন পুরুষ-মহিলা ঘটনাস্থলে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ এসে পুলিশের উপর হামলা করে। এ সময় লোহাগাড়া থানার এএসআই ফখরুল ইসলাম পায়ে মারাত্মকভাবে হাড়ভাঙ্গাসহ গুরতর আহত হয়। পরে স্থানীয় জনৈক ইউপি মেম্বারের মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে লোহাগাড়া থানার অন্যান্য ফোর্স দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং পুলিশ ফোর্সদের উদ্ধার করেন।
ঘটনার এক পর্যায়ে পুলিশের ওপর হামলাকারীরা পালানোর সময় দেলোয়ার হোসেনের ভাই আনোয়ার হোসেনকে আটক করা হয়। আসামী দেলোয়ার হোসেনসহ অন্যান্যদেরকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। আহত লোহাগাড়া থানার এএসআই ফখরুল ইসলামকে লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসার পর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
এ ব্যাপারে পুলিশের ওপর হামলাকারীদেরকে আসামী করে লোহাগাড়া থানায় মামলা দায়ের করা হয়। গ্রেফতারকৃত আনোয়ার হোসেনকে সুস্থ অবস্থায় ১৩ মে আদালতে সোপর্দ করা হয়। একজন আসামীকে অসুস্থ অবস্থায় সোপর্দ করলে বিজ্ঞ আদালত ও জেল কর্তৃপক্ষ মেডিকেল সার্টিফিকেট ছাড়া আসামী গ্রহণ করেন না। যদি সে (আনোয়ার) আহত হলে বিজ্ঞ আদাল ও জেল কর্তৃপক্ষ তাকে কিভাবে গ্রহণ করলেন ? তিনি ১৬ মে আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে ৩ জন এসআই ও ৩ জন এএসআই’র বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে আদালতের পর্যালোচনায় রয়েছে।
উক্ত মামলার আসামী মায়মুনা বেগম আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে আদালত জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দেন। পরবর্তীতে মায়মুনা বেগম জামিনে মুক্তি লাভের পর ২৪ মে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইবুনালে লোহাগাড়া থানার ওসি, এসআই মুহাম্মদ সোলাইমান পাটোয়ারী, এএসআই ফখরুল ইসলাম ও জনৈক জসিম উদ্দিনসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় এএসআই ফখরুল ইসলাম কিভাবে শ্লীলতাহানী করার জন্য বাড়িতে যাবে সেটা সচেতন মহলের কাছে প্রশ্ন রাখলেন ওসি।
লোহাগাড়া থানার এসআই মুহাম্মদ সোলাইমান জানান, তিনি গত ২ মে থেকে ১৩ মে পর্যন্ত সাময়িক ছুটিতে ছিলেন। ছুটিতে থাকা অবস্থায় তিনি কিভাবে অপরাধে জড়িত হয় এবং দুটি মামলায় আসামী হয় প্রশ্ন রাখেন। গত ১১ এপ্রিল সাতকানিয়া থানাধীন এলাকায় মামলার অন্যতম আসামী হারুন আমাকে (এসআই সোলাইমান) চাকুরীচ্যুত করার হুমকী দেয়। তারই প্রেক্ষিতে আমি সাতকানিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরীও করি। সেই ক্ষোভে আমাকে আসামী করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিরপেক্ষ তদন্ত দাবী করছেন।
এছাড়াও হারুনের বৈধ কোন আয়ের উৎস নেই। সেই কিভাবে আয়েশী জীবন-যাপন করে এবং কার ইন্ধনে সে এসব বানোয়াট অভিযোগ করেছে তারও তদন্তের দাবী করেছেন এসআই সোলাইমান।