Home | ব্রেকিং নিউজ | সাক্ষরতা কার্যক্রম প্রসার প্রবাহমান ধারার মত

সাক্ষরতা কার্যক্রম প্রসার প্রবাহমান ধারার মত

মোহাম্মদ ইলিয়াছ : শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। শিক্ষা মানুষকে রুপান্তরিত করছে মানব সম্পদে। বর্তমান প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বের যে কোন দেশে মানব সম্পদ উন্নয়নের জন্য সাক্ষরতার হার অন্যতম মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যার ফলশ্রুতিতে প্রতিবছর ৮ সেপ্টেম্বর পালিত হয় আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস। মানব সম্পদ উন্নয়নের খাতিরে একটি বিশেষ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে প্রতিবছর সাক্ষরতা দিবস পালন করা হয়।

সাক্ষর শব্দের অর্থ হচ্ছে অক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন ব্যাক্তি। আবার অনেকেই মনে করে থাকেন যে, কোনমতে নাম সই করতে পারলেই সাক্ষর বলে গণ্য হয়। দস্তখত দিতে পারে অথচ তার বাইরে কোন লিখিত শব্দ পড়তে পারে না এমন ব্যাক্তিকে সাক্ষর ব্যাক্তি বলা যায় না। ইউনেস্কোর সংজ্ঞানুযায়ী, যে ব্যাক্তি তার দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কিত সহজ বিবরণ পড়ে বুঝতে এবং লিখতে পারে সেই সাক্ষর। ব্যাক্তি নিজ ভাষায় ও ছোট বাক্য পড়তে পারবে, সহজ ও ছোট বাক্য লিখতে পারবে তার উপর ভিত্তি সাক্ষরতার হিসাব-নিকাশ করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের আগ পর্যন্ত সাক্ষরতার মাপকাঠি ছিল ভিন্নতর। ১৯৫১ সালের আদমশুমারীতে সাক্ষরতার সংজ্ঞা ছিল স্পষ্ট ছাপার অক্ষরে লেখা কোন ভাষার বাক্য গঠনের ক্ষমতা। ১৯৬১ সালের আদম শুমারীতে সাক্ষরতার ধারণা কিছুটা পাল্টিয়ে বলা হয়, যে বুঝে পড়তে পারবে সেই সাক্ষর। বিবিএসের মতে, একজন ব্যাক্তি পড়তে ও নিজের নাম লিখতে পারলেই সাক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন ধরে নেয়া হয়। আন্তর্জাতিক সংজ্ঞানুযায়ী, সাক্ষরতা হলো পড়ার পাশাপাশি অনুধাবণ করা, মৌখিকভাবে ও লেখার বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যাখ্যা করা, যোগাযোগ স্থাপন করা এবং গণনা করার দক্ষতা। যে যেভাবে সাক্ষরতার সংজ্ঞা দেয় না কেন সাক্ষরতার হার ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।

একটি দেশের উন্নয়নের সাথে সাক্ষরতা গভীরভাবে সম্পর্কিত। সাক্ষরতার হার মানব সম্পদ উন্নয়নের অন্যতম মাপকাঠি। যার ফলে ১৯৬১ সালের ডিসেম্বর মাসে পৃথিবীর সব দেশ থেকে নিরক্ষতার দূরীকরণের জন্য জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ৮ সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালনের প্রস্তাব হয়। ১৯৬৬ সালে ইউনেস্কো দিবসটি প্রথম উদযাপন করে। ১৯৭২ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে আমাদের দেশে। এদেশে নৈশ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সাক্ষরতা বৃদ্ধির প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ১৯৯১ সালে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়। ফলে দেশে বৃদ্ধি পেতে থাকে সাক্ষরতার হার। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, এদেশে ১৯৯১ সালে সাক্ষরতার হার ছিল ৩৫.৩ শতাংশ। ২০১০ সালে ছিল ৫৯.৮২ শতাংশ। ২০১৯ সালে উন্নীত হয়েংছে ৭৩.৯ শতাংশে। ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ যখন দায়িত্ব নেয় তখন সাক্ষরতার হার ছিল ৫১ শতাংশ। বর্তমানে (২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিসাব) এ হার ৭৪.৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। তাহলে গত এক বছরে সাক্ষরতার হার বেড়েছে ০.৮০ শত্ংশে। বর্তমানে বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার এই যদি হয় তাহলে দেশে এক চতুর্থাংশের বেশি লোক মুক্ত হতে পারেনি নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে। নিরক্ষরতা একদিকে যেমন ব্যাক্তিগত সমস্যা তেমনি অপরদিকে সামাজিক থেকে রাষ্ট্রীয় সমস্যার সৃষ্টি করে। অক্ষরজ্ঞানহীনতার জন্য মানুষ একদিকে যেমন জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলো থেকে নিজেকে বঞ্চিত করছে তেমনি চিন্তা-চেতনার দিক থেকে অন্ধকার যুগের বাসিন্দা হয়ে রয়েছে।

জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজিতে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ২০৩০ সালের মধ্যে সাক্ষরতার হার শতভাগে উন্নীত করা। বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে এবং বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে বদ্ধপরিকর। এ অবস্থায় এই নিরক্ষর জনগোষ্ঠিকে সাক্ষরতার আওতায় আনা খুবই জরুরী। বিশেষ করে এই নিরক্ষর জনগোষ্ঠিকে সাক্ষরতা, জীবন দক্ষতা ও কর্মদক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রদান করতে না পারলে কাঙ্খিত উন্নয়ন সম্ভব নয়। সরকারের রুপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন করতে হলে দেশের সকল নিরক্ষর জনগোষ্ঠিকে সাক্ষরতার আওতায় আনতে হবে। যদিও বাংলাদেশ সরকার এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুারোর আওতায় দেশে মৌলিক স্ক্ষারতা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

তাই দেশকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করে সাক্ষর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আর কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার ততগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বর্তমান সরকার সাক্ষরতার হার শতভাগে উন্নীত করার যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছে তা নি:সন্দেহে সমযোপযোগী। তবে খেয়াল রাখতে হবে সাক্ষরতা কার্যক্রম প্রসারের কাজ একটা প্রবাহমান ধারার মতে। কখনোই তা থেকে দূরে আসা যাবে না।

লেখক: সহ: অধ্যাপক, আলহাজ্ব মোস্তফিজুর রহমান কলেজ, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম। ই-মেইল: milias08@gmail.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!