ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | সম্প্রসারণ হচ্ছে শিশু আইসিইউ

সম্প্রসারণ হচ্ছে শিশু আইসিইউ

নিউজ ডেক্স : এবার সম্প্রসারণ হচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক আইসিইউ (শিশু রোগীদের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট)। হাসপাতালের শিশু স্বাস্থ্য বিভাগে স্থাপন করা পেডিয়াট্রিক আইসিইউতে (পিআইসিইউ) বর্তমানে ১০টি শয্যায় চিকিৎসা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। শিশু রোগীদের (বয়স এক মাসের ঊর্ধ্বে) মধ্যে জটিল ও সংকটাপন্ন শিশুরা এখানে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পেয়ে থাকে। দশটি শয্যায় একই সময় সর্বোচ্চ ১০ জন সংকটাপন্ন শিশুকে এখানে চিকিৎসাসেবা দেয়া সম্ভব।

কিন্তু বৃহত্তর চট্টগ্রামের একমাত্র টার্সিয়ারি লেভেলের হাসপাতাল হওয়ায় দূর-দূরান্তের ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জটিল ও সংকটাপন্ন রোগীদের ঠিকানা হয় এই হাসপাতাল। এর ফলে একই সময়ে জটিল ও সংকটাপন্ন শিশু রোগীর সংখ্যাও স্বাভাবিকভাবে বেশি থাকে এখানে। কিন্তু আইসিইউ সেবা জরুরি হলেও শয্যার অপ্রতুলতায় সংকটাপন্ন সব শিশু রোগীর ঠাঁই হয় না হাসপাতালের পিআইসিইউতে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পের আওতায় এই পিআইসিইউ সম্প্রসারণ হচ্ছে এবার।

সম্প্রসারণের মাধ্যমে এখানে আরো দশটি আইসিইউ শয্যা যুক্ত করা হবে। এর মাধ্যমে পিআইসিইউর শয্যা সংখ্যা দশটি থেকে বেড়ে ২০ শয্যায় উন্নীত হবে। চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। পিআইসিইউ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাড়তি জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জামের চাহিদা ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি। চমেক হাসপাতাল প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দেশের নির্বাচিত কিছু সংখ্যক সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক আইসিইউ স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর আওতায় চমেক হাসপাতালেও পেডিয়াট্রিক আইসিইউ স্থাপনের কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত ১২ জুলাই প্রকল্পটির পরিচালক ডা. শাহ গোলাম নবী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়। হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক আইসিইউ স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, জনবল, যন্ত্রপাতি সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য ছক আকারে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে পাঠাতে বলা হয় চিঠিতে। তবে চমেক হাসপাতালে আগে থেকেই স্থাপন হওয়ায় (বেসরকারি পর্যায়ে স্থাপনকৃত) এখন বিদ্যমান পিআইসিইউকে সম্প্রসারণ করলেই চলবে। নতুন করে স্থাপনের পরিবর্তে বিদ্যমান পিআইসিইউকে সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানালেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক। এর প্রেক্ষিতে পিআইসিইউর প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও জনবলের চাহিদাপত্র প্রস্তুত করে প্রকল্প পরিচালক বরাবর পাঠিয়েছে হাসপাতাল প্রশাসন। হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসানের স্বাক্ষরে ২৩ জুলাই এ চাহিদাপত্র পাঠানো হয়।

হাসপাতালের পাঠানো চাহিদাপত্রে দেখা যায়, পিআইসিইউর প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি হিসেবে ২০টি আইসিইউ বেড (থ্রি ফাংশন), ১০টি ভেন্টিলেটর, সি-পেপ ৫টি, হাই ফ্লু ন্যাজাল ক্যানুলা ৩টি, দশটি পেশেন্ট মনিটর, পেশেন্ট মনিটর সেন্সর ২০টি, পোর্টেবল আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন (উইথ পেডিয়াট্রিক প্রব) ২টি, পোর্টেবল ইকো মেশিন ১টি, ওয়ার্মার ৩টি, ২ টনের ৬টি এসি, ১টি ফ্রিজ, ২০টি অঙিজেন সিলিন্ডারসহ আরো বেশ কিছু চিকিৎসা সরঞ্জামের চাহিদা দেয়া হয়েছে।

চাহিত জনবলের মধ্যে ১ জন অধ্যাপক, ২ জন সহযোগী অধ্যাপক, ৪ জন সহকারী অধ্যাপক, কনসালটেন্ট ৪ জন, রেজিস্ট্রার ১ জন, সহকারী রেজিস্ট্রার ৩ জন, মেডিকেল অফিসার ১০ জন এবং ৩০ জন নার্সের পদ উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যান্য কর্মচারীর মধ্যে ১০ জন ওয়ার্ড বয় এবং ৮ জন করে সুইপার ও দারোয়ানের চাহিদা দেয়া হয়েছে। এ চাহিদাপত্র এরই মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক বরাবর পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান।

প্রসঙ্গত, সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে দেশে প্রথমবারের মতো পেডিয়াট্রিক আইসিইউ স্থাপন করা হয় চমেক হাসপাতালে। শিল্প গ্রুপ পিএইচপি ফ্যামেলির অর্থ সহায়তায় দশ শয্যার এই পিআইসিইউ স্থাপন করা হয়। হাসপাতালের দ্বিতীয়তলায় শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের আরো একটি ইউনিট হিসেবে ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর এর আনুষ্ঠানিক সেবা কার্যক্রম শুরু হয়। তৎকালীন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও পিএইচপি ফ্যামেলির চেয়ারম্যান সুফি মিজানুর রহমান পিআইসিইউর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে গরিব শিশু রোগীদের চিকিৎসায় নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি আইসিইউ বেডের সাথে ভেন্টিলেটর (কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের যন্ত্র), পেশেন্ট মনিটর, ইনফিউশন পাম্পসহ প্রয়োজনীয় সকল চিকিৎসা সরঞ্জাম যুক্ত করা হয়। তাছাড়া পোর্টেবল এঙ-রে ও আল্ট্রাসনোগ্রাফির মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুবিধাও রাখা হয় পিআইসিইউতে।

চিকিৎসকরা বলছেন, অ্যাংকোফ্যালাইটি (মস্তিস্কে সংক্রমণ), শ্বাসকষ্ট, ব্রংকোনিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্তদের মধ্যে সংকটাপন্ন শিশুদের আইসিইউতে রাখা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। কিন্তু নবজাতকদের জন্য নিউনেটাল আইসিইউ (১ থেকে ২৮ দিন বয়সী শিশুর জন্য) থাকলেও এর বেশি বয়সী শিশুদের জন্য ২০১৫ সালের অক্টোবরের আগে আইসিইউ সুবিধা ছিল না চমেক হাসপাতালে। কিন্তু হাসপাতালে আসা সিংহভাগ শিশুই গরিব পরিবারের; যাদের পক্ষে প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিকে আইসিইউ সেবা নিতে গিয়ে সাধ্যাতীত খরচ বহন করা সম্ভব হয় না।

জানা যায়, প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোতে এই আইসিইউ সেবা নিতে একটি শিশুর পরিবারকে দৈনিক ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা ফি গুনতে হয়। ক্ষেত্র বিশেষে আরো বেশি; যা গরিব পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। ফলে আইসিইউ সুবিধার অভাবে সংকটাপন্ন অনেক শিশুকে শত চেষ্টা করেও হাসপাতালের চিকিৎসকরা বাঁচাতে পারেন না। এমন অনেক করুণ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসকরা। দশ শয্যার পিআইসিইউ স্থাপন ও এর সেবা চালুর পর সংকটাপন্ন অনেক শিশুর জীবন রক্ষা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

এ পর্যন্ত মুমূর্ষু অনেক শিশু পিআইসিআইউ থেকে নতুন জীবন নিয়ে ফিরেছে বলে জানান যাত্রালগ্নে পিআইসিইউর কনসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সনত কুমার বড়ুয়া। সম্প্রসারণের মাধ্যমে শয্যা সংখ্যা বাড়লে আরো বেশি সংখ্যক সংকটাপন্ন শিশু রোগী এখানে বিনা খরচে বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবার সুযোগ পাবে বলে মনে করেন তিনি। -আজাদী প্রতিবেদন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!