Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জন্মহার না কমালে বিস্ফোরণ ঘটবে: সংসদীয় কমিটি

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জন্মহার না কমালে বিস্ফোরণ ঘটবে: সংসদীয় কমিটি

নিউজ ডেক্স : সরকারের নানামুখী প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে জন্মহার কমানো যাচ্ছে না। যে কারণে তিন বছরে লক্ষাধিক শিশুর জন্ম হয়েছে। এতে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি ক্যাম্পে অলস বসে থাকায় তাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতাও বাড়ছে। এই অবস্থায় রোহিঙ্গাদের জন্মহার না কমানো গেলে বিস্ফোরণ ঘটবে বলে আশংকা প্রকাশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা ও এাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সরেজমিন পরিদর্শন প্রতিবেদনে এই আশংকা প্রকাশ করা হয়েছে। গত মাসে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ওই প্রতিবেদনটি নিয়ে আলোচনা শেষে গৃহীত সুপারিশে বলা হয়েছে, যেভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জন্মহার বাড়ছে, তা না কমানো গেলে সেখানে জনসংখ্যার বিস্ফোরণ ঘটবে। তাই পরিবার পরিকল্পনা জোরদার করতে হবে। একইসঙ্গে সেখানে মারামারি, খুন, নেশা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে গোয়েন্দা সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, জেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সমন্বয় ও সর্তকতার সঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৮৫ জন শিশুর জন্ম হচ্ছে। সেই হিসেবে গত তিন বছরে লক্ষাধিক শিশুর জন্ম হয়েছে। ২০১৭ সালের আগস্টে হত্যা ও নিপীড়নের মুখে মায়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকেই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সচেতন করার চেষ্টা করা হয়। এজন্য বিভিন্ন উপকরণও তাদের দেওয়া হয়। কিন্তু সকল চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। তাদেরকে পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে তাদের কোনো সচেতনতা ও আগ্রহ নেই। যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে উচ্চ জন্মহারের জন্য কুসংস্কার ও অসচেতনতাকে দায়ি করেছেন ক্যাম্পের নারী ও শিশুদের নিয়ে কর্মরত সংগঠন সমাজ কল্যাণ ও উন্নয়ন সংস্থা (স্কাস) চেয়ারম্যান জেসমিন প্রেমা। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, জরিপ করে দেখা গেছে, সেখানে বেশীরভাগ মা ও শিশু অপুষ্টিতে ভুগছেন। এতে পরিবারগুলোর মধ্যে অস্থিরতা বাড়ছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সেখানে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে ক্যাম্পগুলোতে পরিবার পরিকল্পনা কার্যকর করার নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কাজে আসেনি।

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এ বি তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে কমিটির সদস্যরা মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের উখিয়া ক্যাম্প-৪ ও এক্স-২ ও কুতুপালং ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। ক্যাম্প ঘুরে নানা ধরনের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা দেখতে পান তারা। সেখানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটছে। স্বচ্ছল রোহিঙ্গাদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ ইয়াবাসহ মাদক ও অস্ত্র চালানে জড়িত। অনেকে অবৈধ পথে মালয়েশিয়াসহ অন্য দেশে যাচ্ছে। দেশে-বিদেশে নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। গৃহপালিত পশু, ফসল, ফলসহ স্থানীয়দের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চুরি-ডাকাতি করছে। বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কারণে জড়িয়ে পড়ায় এ পর্যন্ত এক হাজার ২৭৩ জন রোহিঙ্গা গ্রেপ্তার হয়েছে।

এ বিষয়ে সংসদীয় কমিটির সদস্য মোস্তাক আহমেদ রবি বলেন, কমিটির প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অপরাধ প্রবণতা থেকে নিবৃত্ত রাখতে কাজে ব্যস্ত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। সেখানে রোহিঙ্গাদের নিজেদের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নিজেরা যাতে উৎপাদন করতে পারে, সেজন্য হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য শিক্ষা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, যেকোনোভাবে রোহিঙ্গাদের উচ্চ জন্মহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অপরাধ প্রবণতা থেকে দূরে রাখতে খেলাধূলাসহ সামাজিক বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়াতে হবে। কালের কণ্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!