ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | মিয়ানমারের ‘ঐক্য সরকার’ হঠাৎ রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি দিল কেন?

মিয়ানমারের ‘ঐক্য সরকার’ হঠাৎ রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি দিল কেন?

আন্তর্জাতিক ডেক্স : বছরের পর বছর ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ক্রমাগত চাপ আর অনুরোধ সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দিতে রাজি হননি মিয়ানমারের ‘নির্বাচিত’ জনপ্রতিনিধিরা। বরং রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলায় সামরিক বাহিনীর পক্ষ নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়েছিলেন ‘গণতন্ত্রকামী নেতা’ অং সান সু চি নিজেই। তবে গত ১ ফেব্রুয়ারি সেই সামরিক বাহিনীর হাতে ক্ষমতাচ্যুত হয়েই যেন দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেছে মিয়ানমারের তথাকথিত গণতন্ত্রপন্থী নেতাদের।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাতিল ঘোষিত ২০২১-এর নির্বাচনে বিজয়ী সংসদ সদস্যদের একাংশ গত ১৬ এপ্রিল একটি বিকল্প সরকার হিসেবে জাতীয় ঐক্যের সরকার (এনইউজি) গঠন করে, যার বেশিরভাগই হচ্ছেন সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) সদস্য। জান্তার বদলে এনইউজি’কে মিয়ানমারের বৈধ সরকার হিসেবে ঘোষণার জন্য তারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন। অবশ্য তাতে এখনো কোনো সাড়া মেলেনি।

এ অবস্থায় গত ৩ জুন মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্যের সরকার ‘পলিসি পজিশন অন দ্য রোহিঙ্গা ইন রাখাইন স্টেট’ নামে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশ করেছে, যেখানে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন এনইউজি নেতারা।

Myanmar--4.jpg

ওই ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, সামরিক জান্তাকে উৎখাত করে ক্ষমতায় যেতে পারলে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সসম্মানে ফিরিয়ে নেয়া এবং তাদের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দেবে মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্য সরকার।

তিন পৃষ্ঠার এক বিবৃতিতে এনইউজি বলেছে, ক্ষমতায় যেতে পারলে ১৯৮২ সালের বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে মিয়ানমারে জন্ম নেয়া বা বিশ্বের যেকোনো স্থানে জন্ম নেয়া বার্মিজ নাগরিকদের সন্তানদের পূর্ণ নাগরিকত্ব দেবে তারা।

ছায়া সরকারের নেতারা আরো অঙ্গীকার করেছেন, ইতিহাসজুড়ে রোহিঙ্গাসহ মিয়ানমারের সকল মানুষের ওপর সামরিক বাহিনী যেসব অপরাধ করেছে, আমরা তার ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি চাইব। রোহিঙ্গা ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মিয়ানমারে সংঘটিত অপরাধের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের এখতিয়ার প্রদানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।

এছাড়া, মিয়ানমারে জাতীয় কার্ড ভেরিফিকেশন পদ্ধতিও বিলুপ্ত করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এনইউজি। দেশটির প্রশাসন এর মাধ্যমেই রোহিঙ্গাদের ‘বিদেশি নাগরিক’ বলে উল্লেখ করেছিল। সবশেষ, সামরিক জান্তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে রোহিঙ্গাদের সাহায্যও চেয়েছেন এই ছায়া সরকারের নেতারা।

Myanmar

রোহিঙ্গাদের বিষয়ে এনইউজির ওই ঘোষণাকে ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। রোহিঙ্গাদের অধিকারের পক্ষে সোচ্চার বিভিন্ন সংগঠনও এটিকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে এনইউজি নেতাদের অবস্থান কতটা আন্তরিক এবং রোহিঙ্গাদের অধিকারের পূর্ণাঙ্গ স্বীকৃতি সত্যিই এই ঘোষণায় রয়েছে কি না- তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়ে গেছে।

মিয়ানমারের রাজনীতিবিদদের মধ্যে হঠাৎ কেন এই পরিবর্তন?
মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্যের সরকার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু রোহিঙ্গা ইস্যুতে অবস্থান পরিষ্কার না করলে সেটি মিলবে কিনা তা নিয়ে শুরু থেকেই সংশয় ছিল। গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের (হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস) ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির এক শুনানিতে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে যায়।

সেই শুনানিতে এনইউজির এক দূতকে মার্কিন কংগ্রেসম্যান ব্রাড শেরম্যান প্রশ্ন করেছিলেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তাদের অবস্থান কী? সেসময় এর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি ওই দূত। এরপর এনইউজি রোহিঙ্গা ইস্যুতে যে তাদের অবস্থান বদলেছে, তাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন অনেকে।

মিয়ানমার বিষয়ক বিশ্লেষক ল্যারি জ্যাগান বিবিসি বাংলাকে বলেন, তারা যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি পেতে চায়, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে স্বীকৃতি পেতে হলে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে অবস্থান বদলাতে হবে। নাহলে তারা কারো সহানুভূতি পাবে না।

Myanmar

অবশ্য এ বিশ্লেষকের মতে, শুধু আন্তর্জাতিক চাপেই নয়, সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারের রাজনীতিবিদদের চিন্তা-ভাবনাতেও নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে।

তিনি বলেন, সামরিক অভ্যুত্থান জনগণকে এটি উপলব্ধি করতে বাধ্য করেছে যে, রাখাইনে সামরিক বাহিনী যে নিপীড়ন চালিয়েছিল, সেটিই এখন অন্য জায়গায় ঘটছে। কাজেই দৃষ্টিভঙ্গিতে একটি মৌলিক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।

ল্যারি জ্যাগানের মতে, রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি দেয়ার ক্ষেত্রে আরো একটি বিষয় এখানে কাজ করছে। সেটি হচ্ছে, মিয়ানমারের জেনারেলদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা।

ল্যারির কথায়, মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর সংঘটিত অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক আদালতের মামলায় সাহায্য করতে চায় এনইউজি। কিন্তু রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে নিজস্ব নীতিতে পরিবর্তন না আনলে সেটি সম্ভব নয়। সেজন্যই হয়তো তারা হঠাৎ করে অবস্থান পরিবর্তন করেছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!