নিউজ ডেক্স : বাঁশখালী থানায় জায়গা-জমির বিরোধের জেরে মারামারিতে নিহতের ঘটনায় সন্দেহজনকভাবে বাবা মো. সিদ্দিককে আটকের ক্ষোভে ছেলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক রাসেল ইকবাল থানায় ঢুকে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।
বুধবার (২০ অক্টোবর) বিকেল ৩টার দিকে বাশঁখালী থানায় এ ঘটনা ঘটে। রাসেল ইকবাল বাঁশখালী উপজেলার শীলকূপ ইউনিয়ন মনছুরিয়া বাজার এলাকার মো. সিদ্দিকের ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম নগরের ওমর গনি এমইএস কলেজের ডিগ্রির শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে। বর্তমানে রাসেল ইকবাল চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
রাসেল ইকবাল বাড়ি থেকে সিএনজি অটোরিকশায় চড়ে থানায় আসেন। গাড়ি থেকে নেমে থানায় ঢুকে বিষপানে আত্মহত্যা চেষ্টার চার মিনিট ১৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। রাসেল ইকবাল নিজের ফেসবুকে লাইভ দিয়েছেন।
তা হুবুহু তুলে ধরা হলো- আমার নাম রাসেল ইকবাল, আমি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক। চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার শীলকূপ ইউনিয়ন মনছুরিয়া বাজারে আমার বাড়ি। আমি এর আগে থেকেও অনেকবার, তিনবার পুলিশের হয়রানির স্বীকার হতে হয়েছে। আমার বাবা নিরপরাধ একজন মানুষ। আমিও কোনো অপরাধ করেনি, আমাদের এলাকায় দুইটা মারামারি হয়েছে। ঐখানে একজন মানুষ নাকি মারা গেছে। ঐ ঘটনায় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কোনো প্রমাণ ছাড়া, কালা শুক্কুর ডাকাত, পাগল শাহ আলমের ছেলে মাহমুদুল ইসলাম ওরা আমাকে বিভিন্ন ভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করে মামলায়। আজকে আমার বাবাকে পুলিশ ধরে নিয়ে এসেছে। এসআই হাবিব সাহেবের উচিত ছিল, এলাকায় ঘটনাস্থলে গিয়ে সবার তথ্য প্রমাণ নেওয়া, কে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল, কে সংশ্লিষ্ট ছিল না, কে জড়িত ছিল ও ছিল না। ওসি কামাল সাহেবের সঙ্গে কালা শুক্কুরের ভালো সম্পর্ক। কালা শুক্কুর বলছে, সেজন্য আমার বাবাকে ধরে নিয়ে এসেছে। আমাকেও নাকি পুলিশ খুজঁতেছে। এখন আমি ভাই ছাত্রলীগের একজন কর্মী হয়ে আমার যদি এ অবস্থা হয়। আমার পরিবারের এ অবস্থা হয়, তাহলে সাধারণ মানুষ কীভাবে ভালো থাকবেন বলেন। এর আগেও আমার বন্ধুর সঙ্গে একটি মেয়ের সর্ম্পক ছিল, বন্ধু ওই মেয়েকে পালিয়ে বিয়ে করেছে, ঐ মামলায় কালা শুক্কুর আমাকে ফাঁসায় দিয়েছে। তারপর বন্ধু একজনের কাছ থেকে টাকা পাচ্ছে, আমি যখন রাজনীতি করি আমাকে ডাকছে, ঐ ছেলেকে ডেকেছি, কথা বলছি। আমি নাকি অপহরণ করছি। ওসি সালাউদ্দীন হিরা ছিল, তারপর এসআই রফিক ছিল, তদন্ত ওসি শরীফ ছিল, উনারা গিয়ে আমার বাবাকে বাড়ি গিয়ে মারতেছে। সেই বাবদ আমার বাবা থেকে ৪০ হাজার টাকা নিয়েছে। আজকে আমি এখানে বেঁচে থাকার কোনো উপায় দেখছি না। আমি এই যে গুলা থানার সামনে খাব। আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে পুলিশ প্রশাসন, যারা আমার বাবাকে ধরে নিয়ে এসেছে এবং এলাকার থানার দালালগুলা। যে আমার জীবনে কখনো দেখিনি আমার বাবা মানুষের সঙ্গে অন্যায় ও খারাপ করতে দেখিনি। আমি আসছি থানায়, থানায় আসছি, থানায় আসছি আমি, থানায় ঢুকছি। আমার বাবাকে অন্যয়ভাবে তারা ধরছে। আজকে আমি মরব না হলে, এই যে আমার বাবাকে। এই কি, কি হয়েছে, এই আকতার স্যার…।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাঁশখালী থানা পুলিশের দালাল কালা শুক্কুর ও মাহমুদুল ইসলাম। থানা পুলিশের সহায়তায় এলাকার নিরীহ মানুষকে হয়রানি, ভূমিদস্যুতা ও এলাকায় যেকোনো ঘটনা ঘটলে মামলায় জড়ানোর ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করে তারা। তাদের এমন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে রাসেল ইকবালকে বিভিন্নভাবে ফাঁসাতে কাজ করে আসছিল দালাল চক্রটি।
বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল উদ্দিন বলেন, আজকে একটি মর্ডার ঘটনায় সিদ্দিক নামে একজনকে লোককে সন্দেহজনক থানায় নিয়ে আসা হয়। উনার ছেলে বাবাকে কেন পুলিশ আটক করল। এটার অপমানে বিষপান করে থানায় ঢুকতে চেয়েছিল। কিন্তু আমার সেন্ট্রি দেখেছে, সেখান থেকে পুলিশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যায়। সেখানে ওয়াশ করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত জেলা পুলিশের এএসআই আলাউদ্দীন তালুকদার বলেন, বিষপান করা রাসেল ইকবাল নামে এক যুবককে বুধবার সন্ধ্যায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি দেন। বর্তমানে তার অবস্থা আশঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। বাংলানিউজ