Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | বঙ্গোপসাগরে মাছ ছাড়াও পাওয়া যায় যেসব সম্পদ

বঙ্গোপসাগরে মাছ ছাড়াও পাওয়া যায় যেসব সম্পদ

নিউজ ডেক্স : সমুদ্রসীমা নিয়ে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে বিরোধ মীমাংসার পর বঙ্গোপসাগরের বিশাল এলাকার মালিকানা পেয়েছে বাংলাদেশ। তখন সরকার জানিয়েছিল, ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি টেরিটোরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশ অবস্থিত সব ধরনের প্রাণীজ ও অপ্রাণীজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে।

এই এলাকায় মৎস্য আহরণ ও সমুদ্রের তলদেশে প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বাংলাদেশের অধিকার নিশ্চিত হয়েছে বলে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলেছেন। ফলে সমুদ্রে ও তলদেশে থাকা বিপুল পরিমাণ সম্পদ আহরণের নীতি নিয়েছে বাংলাদেশ, যাকে বলা হয় ব্লু ইকোনমি বা সমুদ্র সম্পদ নির্ভর অর্থনীতি। কিন্তু বিশাল এই সমুদ্র এলাকা থেকে বাংলাদেশ কতটা সম্পদ আহরণ করতে পারছে? খবর বিবিসি বাংলার।

সবচেয়ে বেশি আহরণ মাছ ও প্রাণীজ সম্পদ : ২০১৭–২০১৮ সালে বাংলাদেশে উৎপাদিত মোট ৪৩ লাখ ৩৪ হাজার টন মাছের মধ্যে সাড়ে ৬ লাখ টন মাছ এসেছে সমুদ্র থেকে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেভ আওয়ার সি’র তথ্য অনুসারে, প্রতি বছর বঙ্গোপসাগর থেকে আশি লাখ টন মাছ ধরা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের জেলেরা ধরতে পারছেন মাত্র ৭ লাখ টন মাছ।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, এখনো সমুদ্র থেকে মূলত মাছ ও চিংড়ি বেশি ধরা হয়। কারণ খাবার হিসাবে বাংলাদেশিদের ভেতরে এগুলোর চাহিদাই বেশি রয়েছে। তবে ইদানীং অনেক জায়গায় অক্টোপাস, স্কুইড, ক্যাটলফিস, কাঁকড়া বা ঝিনুক খাওয়ার চল তৈরি হয়েছে। অক্টোপাস, ক্যাটলফিস, কাঁকড়া বা স্কুইডের চাহিদা স্থানীয় বাজারে কম থাকলেও এগুলোও প্রচুর পরিমাণে ধরা হয়। কারণ এসব মাছ বিদেশে রপ্তানি হয়।

বঙ্গোপসাগর থেকে খাদ্য হিসাবে দুইশ প্রজাতির মাছ ও চিংড়ি মিলিয়ে ৪০টির মতো মাছ নিয়মিত ধরে বাংলাদেশের জেলেরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু মাছের চাহিদা দেশে না থাকলেও বিদেশে চাহিদা থাকায় ধরা হয়। যেমন হাঙ্গর ধরা নিষিদ্ধ হলেও এটির পাখনার চাহিদা থাকায় গোপনে জেলেরা ধরে বিক্রি করে।

শৈবাল, শামুক ও ঝিনুক : মাছের বাইরে বঙ্গোপসাগরের কিছু উদ্ভিদ এবং শামুক–ঝিনুকের চাহিদা রয়েছে দেশে–বিদেশে। অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে শামুক, ঝিনুকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এছাড়া বিদেশেও এটা রপ্তানি হয়। ফলে বাংলাদেশে এটি প্রচলিত খাবার না হলেও সমুদ্র থেকে এটাও আহরণ করা হয়।

কিছুদিন আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রায় দুই বছর ধরে গবেষণা করে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় বিপুল পরিমাণ গ্যাস হাইড্রেট ছাড়াও ২২০ প্রজাতির সি–উইড, ৩৪৭ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৪৯৮ প্রজাতির ঝিনুক, ৫২ প্রজাতির চিংড়ি, ৫ প্রজাতির লবস্টার, ৬ প্রজাতির কাঁকড়া এবং ৬১ প্রজাতির সি–গ্রাস চিহ্নিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশের কিছু প্রজাতির সি–উইডে প্রচুর প্রোটিন আছে, যা ফিস ফিড হিসেবে আমদানি করা ফিস অয়েলের বিকল্প হতে পারে। আবার কিছু প্রজাতি অ্যানিমেল ফিডের মান বৃদ্ধিতে ব্যবহৃত হতে পারে। হাইড্রোকলয়েড উৎপাদন সাধারণত শিল্প উৎপাদনে জলীয় কাঁচামাল হিসেবে কাজে লাগে।

পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য সমুদ্রবিজ্ঞানী ড. মো. কাউসার আহম্মেদ বলেন, ৪০টির বেশি মাছ বা সামুদ্রিক প্রাণীর বাণিজ্যিক মূল্য নেই। যদিও ধরা হয় প্রায় দুইশ প্রজাতি। বাকিগুলো সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হয়।

লবণ উৎপাদন : উপকূলে সমুদ্রের পানি ধরে, রৌদ্র বা সৌরশক্তি ব্যবহার করে শুকিয়ে অপরিশোধিত লবণ আহরণ করা হয়। বর্তমানে কঙবাজার, চট্টগ্রাম, খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের এক লাখ একরের বেশি জমিতে লবণ চাষ করা হয়। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ১৮ লাখের বেশি মানুষ।

গ্যাস ও খনিজ সম্পদ : কর্মকর্তারা সমুদ্রসীমায় অনুসন্ধান করে সমুদ্রে ও তলদেশে গ্যাস–হাইড্রেট বা মিথেন গ্যাসের জমাট স্তরের উপস্থিতি দেখতে পেয়েছেন। তাদের ধারণা, বাংলাদেশের একান্ত অর্থনৈতিক এলাকায় ০.১১ থেকে ০.৬৩ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট সম্ভাব্য প্রাকৃতিক গ্যাস হাইড্রেট জমার অনুমান পাওয়া গেছে, যা ১৭–১০৩ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট প্রাকৃতিক গ্যাস মজুদের সমান।

বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে গভীর ও অগভীর সমুদ্রসীমায় ২৬টি ব্লক রয়েছে। সেসব ব্লকে তেল ও গ্যাস রযেছে কিনা সেজন্য বাপেঙ ও কয়েকটি বিদেশি কোম্পানি অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাচ্ছে। বর্তমানে চার নম্বর ব্লকে ভারতীয় একটি কোম্পানি অনুসন্ধান চালাচ্ছে। আগামী মাসে আরও তিনটি ব্লক ইজারা দেয়ার জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করবে পেট্রোবাংলা।

অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী বলেন, নতুন গ্যাসক্ষেত্রে আবিষ্কার হলে সেটা দেশের জন্য ব্লু ইকোনমির আরেকটি বড় শক্তি হয়ে উঠবে। তেল গ্যাস ছাড়াও সালফার, মেটালিক মডিউল, কোবাল্ট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!