ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | পর্যটন শিল্পে পিছিয়ে পড়ছে চট্টগ্রাম

পর্যটন শিল্পে পিছিয়ে পড়ছে চট্টগ্রাম

IMG_20160122_171103

নিউজ ডেক্স : রাজশাহী থেকে চট্টগ্রাম বেড়াতে এসেছেন কামরুল-সীমা দম্পতি। নগরীর অলংকার মোড়স্থ একটি হোটেল থেকে পতেঙ্গা সী-বিচ দেখার জন্য যাত্রা করেন সিএনজি টেক্সি নিয়ে। অলংকার-পোর্ট কানেক্টিং রোড ধরে যাত্রা করেন তারা। খানাখন্দে ভরা রোড দিয়ে ঘণ্টা তিনেক যানজটে আটকা থেকে অবশেষে পতেঙ্গা বিচে পৌঁছেন। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে আবার ফিরে আসেন। হোটেলে ফিরতেই তাদের সাথে কথা হয় প্রতিবেদকের। ভ্রমণ কেমন হয়েছে জানতে চাইলে ক্ষোভ প্রকাশ করে এ পর্যটক দম্পতি বলেন, ‘জীবনে এত বেহাল রাস্তা আগে কোনোদিন দেখেননি। এত সুন্দর একটি বিচ। অথচ কী অযত্নে পড়ে আছে!’

শুধু কামরুল-সীমা দম্পতিই নন; এভাবে চট্টগ্রামে বেড়াতে আসা অনেকেই হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। চট্টগ্রামে পর্যটন শিল্পের বিকাশে কোনো আয়োজন না থাকায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এখানে পর্যটন সংস্থার শুধু একটি হোটেল (মোটেল সৈকত) ছাড়া তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। অযত্নে-অবহেলায় এই মোটেলও আগের জৌলুস হারাতে বসেছে।

চট্টগ্রামে বেড়াতে আসা পর্যটকরা বলছেন, সাগর নদী আর পাহাড়ের এক মহামিলন চট্টগ্রামকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। পৃথিবীতে এত সুন্দর নগরী খুব বেশি নেই। অথচ দিনে দিনে অযত্ন আর অবহেলায় শ্রীহীন হয়ে পড়ছে এই নগরী। রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে স্থবির হয়ে পড়ছে সবকিছু।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাহাড় পর্বতের নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের মন ছোঁয়া রূপ, সাগর ও নদীর মোহনীয় হাতছানি, পুরাকীর্তি এবং নানা ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে এই অঞ্চলে। পতেঙ্গা সী-বিচ, সীতাকুণ্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়, বাটালি হিল, পারকি সমুদ্র সৈকত, গুলিয়াখালী সী-বিচ, মহামায়া, ফয়’স লেকসহ চট্টগ্রামের পরতে পরতে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। ইতিহাস ঐতিহ্যেও চট্টগ্রামের রয়েছে বিরাট সম্ভার। এখানে চেরাগী পাহাড়, বিভিন্ন অলি আউলিয়ার দরগাহ, মাস্টারদা সূর্যসেনের স্মৃতি বিজড়িত অস্ত্রাগার দখলের স্থান, প্রীতিলত ওয়াদ্দারের স্মৃতি বিজড়িত ইউরোপীয়ান ক্লাব, বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ওয়ার সেমিট্রি, চট্টগ্রামের আদালত ভবন, সিআরবি, রেলওয়ে স্টেশন, পাথরঘাটা গির্জা, বৌদ্ধ মন্দির, চন্দনপুরা মসজিদ, কদম মোবারক মসজিদসহ রয়েছে ঐতিহাসিক নানা স্থাপনা। পৃথিবী জুড়ে পর্যটকরা এতে আকৃষ্ট হলেও এসব স্থান ও স্থাপনার ব্যাপারে পর্যটন মন্ত্রণালয় যেন বারবার উদাসীন।

দেশের পর্যটনের বিকাশে পর্যটন মন্ত্রণালয় ‘টেকসই পর্যটন, উন্নয়নের মাধ্যম’- শীর্ষক বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছিল গত বছর জুড়ে। অথচ চট্টগ্রামে কোনো কিছুই করা হয়নি। শুধুমাত্র পর্যটন খাতকে পুঁজি করে বিশ্বের বহুদেশ যেখানে উন্নতির শিখরে পৌঁছাচ্ছে; সেখানে চট্টগ্রাম কেবলই যেন পেছনের দিকে যাচ্ছে।

ক্ষোভ প্রকাশ করে একজন পর্যটক বলেন, ১৫/২০ বছর আগেও ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসতে সর্বোচ্চ সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা সময় লাগত। অথচ এখন ফোর লেইন প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার পর উল্টো ১০/১২ ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। গড়ে ৭/৮ ঘণ্টার আগে চট্টগ্রামে পৌঁছার কথা কল্পনাও করা যায় না বলে অভিযোগ এই পর্যটকের।

চট্টগ্রামে হোটেল রেডিসন ব্লু চিটাগাং বে ভিউসহ বিভিন্ন নামী দামী হোটেল গড়ে উঠেছে। এসব হোটেলের ব্যবসা বাণিজ্যের বড় একটি অংশ চট্টগ্রামের পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। চট্টগ্রামে পর্যটন কর্পোরেশনের যাবতীয় কর্মকাণ্ড স্টেশন রোডস্থ মোটেল সৈকত কেন্দ্রিক। এই মোটেলের বাইরে পর্যটনের আর তেমন কোনো কর্মকাণ্ড নেই বললেই চলে।

গতকাল কামরুল-সীমা দম্পতি ক্ষোভ প্রকাশ করে এই প্রতিবেদককে বলেন, চট্টগ্রামে অনেক কিছু আছে মনে করে এসেছিলাম। কিন্তু প্রথম দিনেই যে বেহাল অবস্থা দেখলাম তাতে হতাশ হয়েছি।

গতকাল পর্যটন কর্পোরেশনের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আসলে চট্টগ্রামে পর্যটনের তেমন কোনো কার্যক্রম নেই। তিন পার্বত্য জেলা এবং কঙবাজারে আমাদের কার্যক্রম আছে। চট্টগ্রামে কার্যক্রম সমপ্রসারণের জন্য বিভিন্ন সময় নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও শেষ পর্যন্ত খুব বেশি কিছু হয়নি বলে তিনি স্বীকার করেন। এই কর্মকর্তা বলেন, পর্যটন কর্পোরেশনের মোটেল সৈকত একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। এটিকে ঘিরে কিংবা আলাদাভাবে পর্যটনের আরো কিছু উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হলে এই সংস্থা লাভবান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সূত্র : দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!