Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | দুই এসআইয়ের প্রাণ নিয়ে পালানো আসামি লোহাগাড়ার আলমগীর গ্রেপ্তার

দুই এসআইয়ের প্রাণ নিয়ে পালানো আসামি লোহাগাড়ার আলমগীর গ্রেপ্তার

নিউজ ডেক্স : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের পৌরসভার দত্তপাড়া এলাকায় পুলিশের দুই উপ-পরিদর্শক (এসআই) নিহত হওয়ার ঘটনায় পলাতক সেই আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

বুধবার (২৬ জানুয়ারি) আসামি আলমগীর হোসেনকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থেকে গ্রেফতারের পর আদালতে পাঠান পুলিশ।

নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বদিউজ্জামানের আদালতে মাদক মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত তার ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। বৃহস্পতিবার (২০ জানুয়ারি) সেই আসামি পালানোর ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলম জানান, আসামিকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থেকে গ্রেফতার করে আনা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানান, আসামিকে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়। পরে আদালত আসামির ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।  

এর আগে, এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানকে। আরো দুই সদস্য হলেন- নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখার ‘খ’ জোনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম শাহরিয়ার হাসান, নারায়ণগঞ্জ ডিএসবি শাখার ডিআইও-২ মো. হুমায়ুন কবির খান।

কমিটিকে ৭ কার্যদিবসে অনুসন্ধান করে সুস্পষ্ট মতামতসহ একটি বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলমের কাছে দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন। আসামিকে দিয়ে গাড়ি চালানোয় তিনি কৌশলে গাড়ি খাদে ফেলে নিজে পালিয়ে যায়। এতে দুই এসআইয়ের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।  

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আসামির কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ইয়াবা পানিতে পড়ে যাওয়ায় কিছু গলে গেছে, বাকিগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় সোনারগাঁ থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।

এর আগে, সন্ধ্যায় দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা দুই এসআইকে উদ্ধার করে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়াও আরো এক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আহত হয়েছে। আহত এএসআইকে মুমূর্ষু অবস্থায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে পাঠানো হয়। নিহতরা হলেন- ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানার মুনসুরাবাদ গ্রামের কাজী নুরুল ইসলামের ছেলে কাজী সালেহ আহম্মেদ ও গোপালগঞ্জের চরভাটপাড়া গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে এসএম শরীফুল ইসলাম। তারা সোনসারগাঁ থানায় কর্তরত ছিলেন।

পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, গোপন সূত্রে খবর ছিল টেকনাফ থেকে ৫০ হাজার ইয়াবার একটি চালান আসছে, খবর পেয়ে সোনারগাঁয়ের মেঘনা টোলপ্লাজায় তল্লাশি চৌকি বসায় পুলিশ। এ সময় আসামির গাড়িকে সিগন্যাল দিলে এক কনস্টেবলকে আহত করে দ্রুত সেটি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পরে পুলিশের আরেকটি টিম মোগড়াপাড়া এলাকায় ধাওয়া করে আসামি আলমগীর হোসেনকে গাড়িসহ এবং ৪২ হাজার ইয়াবাসহ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

গ্রেফতারের পর আসামিকে নিয়ে তারা সরাসরি জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে চলে আসে। এ সময় আসামিই গাড়ি চালায়। এসপি অফিসে তাদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের পর এবার থানার ফেরার পথে আসামিকে নিয়ে থানায় রওয়ানা দেন দুই এসআই ও এক এএসআই। তবে, তাদের তিনজনের কেউই গাড়ি চালাতে পারেন না ফলে আসামিকে দিয়েই গাড়ি চালানো হয়। আসামি গাড়ি চালিয়ে সোনারগাঁয়ের দত্তপাড়া এলাকায় এলে তিনি গাড়ি থেকে কৌশলে লাফিয়ে পড়ে গাড়ি খাদে ফেলে দেয়। এতে দুই এসআই মারা যান ও এএসআই গুরুতর আহত হন। এসময় আসামি পালিয়ে যায়।

সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এসএম শফিকুল ইসলাম জানান, নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে একটি প্রেসব্রিফিং শেষে সোমবার সন্ধ্যার দিকে সোনারগাঁ থানায় কর্মরত উপ-পরিদর্শক (এসআই) কাজী সালেহ আহম্মেদ, শরিফুল ইসলাম ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) রফিকুল ইসলাম প্রাইভেটকারযোগে থানায় ফিরছিলেন। পথে সোনারগাঁয়ের দত্তপাড়া এলাকায় তাদের বহনকারী প্রাইভেটকারটি খাদে পড়ে যায়। এ সময় স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কাজী সালেহ আহম্মেদ ও শরিফুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী টমটমচালক মোক্তার হোসেন জানান, সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে দত্তপাড়া বাদশা গ্যারেজের একটু সামনে একটি প্রাইভেটকার দ্রুতগতিতে এসে পুকুরে পড়ে যায়। গাড়িটি মহাসড়ক থেকে সোনারগাঁ থানার দিকে যাচ্ছিল। গাড়িটি পুকুরে মুহূর্তের মধ্যে পানিতে তলিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা ও সোনারগাঁ ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পুকুর থেকে পুলিশের তিন সদস্যকে উদ্ধার করে হাসপাতালে আমার টমটম দিয়েই নিয়ে আসি। হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসক দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন। -বাংলানিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!