Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | তফসিল ঘোষণা কিছুটা পেছাতে পারে

তফসিল ঘোষণা কিছুটা পেছাতে পারে

0039202018-24

নিউজ ডেক্স : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিভিন্ন জোট ও দলের সংলাপের কারণে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল বা সময়সূচি ঘোষণা করতে কিছুটা সময় নিতে পারে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন গতকাল শনিবার ইসিকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছেন সংলাপ শেষ হওয়ার আগে তফসিল ঘোষণা না করার জন্য। ঐক্যফ্রন্ট ৮ নভেম্বরের পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আবারও সংলাপে বসার আগ্রহের কথাও জানিয়েছে।

গতকাল ইসি সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে আভাস মিলেছে, আজ রবিবার নির্বাচনী তফসিল নির্ধারণের জন্য নির্বাচন কমিশনের সভার তারিখ নির্দিষ্ট থাকলেও সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নাও হতে পারে। সভা মুলতবি রেখে পরে যেকোনো দিন তা আবার শুরু করা হতে পারে। এ ছাড়া নির্বাচনের তফসিল নির্ধারণের আগে সম্পাদনযোগ্য যেসব কাজের পরিকল্পনা ইসির রয়েছে তাতেও ৪ ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণা না করারই ইঙ্গিত মিলছে। সে ক্ষেত্রে ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ হতে পারে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ২৪ থেকে ২৬ ডিসেম্বর বাদ রেখে যেকোনো দিন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি তথা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাজনৈতিক দল বা জোটের সংলাপ চলবে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল বলেছেন, ‘আমরা ৮ তারিখ পর্যন্ত যেতে পারছি না। সব মিলিয়ে প্রায় ৮৫টি দল প্রধানমন্ত্রীর সাথে সংলাপে বসতে চায়। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে সংলাপ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব না। কারণ নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করবে।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা গত বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘সংলাপের বিষয়টি আমাদের পর্যালোচনায় রয়েছে। আমরা এখনো তফসিলের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্তই নিইনি। ৪ ডিসেম্বর তফসিল নির্ধারণ নিয়ে কমিশনের সভা হবে।’

এ বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ৪ নভেম্বর তফসিল নির্ধারণ নিয়ে সভা করার পর ওই দিনই সিইসির ভাষণ রেকর্ড করা প্রায় অসম্ভব। সে ক্ষেত্রে তফসিল ঘোষণা হতে পারে ৭ অথবা ৮ ডিসেম্বর। এর আগে সিইসি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলকে জানিয়েছিলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করা হবে।

ড. কামাল হোসেনের চিঠি : জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ড. কামাল হোসেন গতকাল ইসিকে যে চিঠি দিয়েছেন তাতে বলা হয়েছে, ‘গত ১ নভেম্বর বঙ্গভবনে মাহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সাথে আপনারা সাক্ষাৎ করেছেন। আমরা খুবই উৎসাহের সঙ্গে লক্ষ করেছি, বঙ্গভবনে মাহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে আলোচনা শেষে আপনারা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন যে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশেষ করে সরকারি জোটের সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক জোটের সংলাপের বিষয়টির প্রতি আপনাদের দৃষ্টি রয়েছে। আপনারা জানেন, গত ১ নভেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে গণভবনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সংলাপ হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ওই সংলাপে বলেছেন, তফসিল ঘোষণার বিষয়টি একান্তভাবেই নির্বাচন কমিশনের। আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংলাপ অব্যাহত আছে। আওয়ামী লীগের সম্মানিত সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন যে ৮ নভেম্বরের পরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সংলাপের বিষয়টি আবারও বিবেচনায় রয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আবারও সংলাপে বসার ব্যাপারে ইচ্ছুক।’

চিঠিতে আরো বলা হয়, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে আপনারা জানিয়েছেন, ৪ নভেম্বর কমিশনের বৈঠকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। আপনারা যেহেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি অবগত আছেন এবং সেদিকে নজর রাখছেন, সে প্রেক্ষাপটে আমরা মনে করি যে তফসিল ঘোষণার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি চলমান রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের অপেক্ষা করাই শ্রেয়।’

ড. কামাল লিখেছেন, “তফসিল ঘোষণা নির্বাচনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তফসিল ঘোষণার পরই রাজনৈতিক দলগুলো এবং প্রার্থীরা নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করেন। যেকোনো ধরনের নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীরা হচ্ছেন অন্যতম ‘স্টেকহোল্ডার’। তাঁদের কর্মকাণ্ড এবং কর্মসূচিকে আমলে নেওয়া নির্বাচন কমিশনের মৌলিক দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি। বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও একটি সম্ভাব্য রাজনৈতিক সমঝোতা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ দেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক গুণগত পরিবর্তন আনতে পারে, যা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য আপনাদের প্রচেষ্টাকেও সহায়তা করবে। এমতাবস্থায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংলাপ শেষ হওয়ার পর তফসিল ঘোষণার তারিখ নির্ধারণের অনুরোধ করছি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে তফসিল ঘোষণার দিনক্ষণ নির্ধারণে আপনাদের এমন অপেক্ষা রাজনৈতিক দল ও জনগণের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা বাড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

এদিকে গত রাত পৌনে ৮টায় নির্বাচনী বিধি-বিধান নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সভা শেষে সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, এ সপ্তাহেই তফসিল এবং ডিসেম্বরেই ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ চলছে। ড. কামাল হোসেনের চিঠি সম্পর্কে তিনি বলেন, চিঠি এখনো দেখা হয়নি। রবিবার বিকেলে কমিশন সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।

বিএনপির গঠনতন্ত্র নিয়ে হাইকোর্টের আদেশ সম্পর্কে সচিব বলেন, এ ব্যাপারে এক মাস সময় রয়েছে। কমিশন সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর ইসিকে জানিয়েছে, ডিসেম্বরের শেষে প্রচণ্ড শীত থাকবে। আর জানুয়ারির প্রথম ১০ দিন প্রচণ্ড শীতের সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা মনে করছেন, ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে শেষ সপ্তাহেই ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ হতে পারে। তবে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বড়দিনের জন্য ২৪ থেকে ২৬ ডিসেম্বর এই তিন দিন বাদ রেখে ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করা হতে পারে।

তফসিলের আগে সম্পদানযোগ্য কাজের পরিকল্পনা : নির্বাচনের তফসিল নির্ধারণের আগে সম্পদানযোগ্য অনেক কাজের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। জানা গেছে, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিধিমালার সংশোধন সম্পর্কে এসআরও জারির সম্ভাব্য তারিখ ৪ নভেম্বর। সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিমালা সংশোধনীর আলোকে বিদ্যমান বিধিমালায় একীভূতকরণ হবে ৫ ও ৬ নভেম্বর। ৫ নভেম্বর মনোনয়ন ফরমসহ বিভিন্ন ধরনের ফরম, প্যাকেট, রেজিস্টার ও নির্দেশনা মাঠপর্যায়ে পাঠানো হবে। ৬ নভেম্বর নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ। বিদেশি/আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের জন্য নীতিমালা চূড়ান্ত করা ও ফেমবোসাভুক্ত নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে আমন্ত্রণ জানানো এবং বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুমতি প্রদানের প্রাসঙ্গিক ব্যবস্থা গ্রহণের সম্ভাব্য সময় ৭ নভেম্বর। নির্বাচন পরিচালনা ও প্রশিক্ষণ ম্যানুয়েল এবং অন্যান্য নির্দেশনা চূড়ান্ত হবে ৭ নভেম্বর। অনলাইনে মনোনয়নপত্র গ্রহণ, দাখিলকারীদের তথ্য সংগ্রহ, ওয়েবসাইটে প্রকাশ ও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন কর্তৃপক্ষকে প্রদানের লক্ষ্যে ইএমসিও সিএমসি বিষয়ক সফটওয়্যার চূড়ান্ত করা এবং ওয়েবসাইটে ইন্টারনেট সংযোজনের দিন ধার্য করা হবে ৭ নভেম্বর। এ ছাড়া ৭ নভেম্বরই নির্বাচনী এলাকায় বিদ্যমান নির্বাচনী প্রচারসামগ্রী সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছে ইসি। ওই দিনই নির্বাচনের সময়সূচি জারি করার পর সারা দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণ, আইন-শৃঙ্খলা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও প্রচার বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হতে পারে। ৭ নভেম্বরেই মনোনয়নপত্র দাখিল, বাছাই, প্রত্যাহার—এসব বিষয়ে তারিখসহ নির্বাচনসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদর্শনের জন্য নির্বাচন কমিশন ভবনে মনিটর স্থাপন এবং প্রাসঙ্গিক অন্য ব্যবস্থা গ্রহণের কাজ সম্পন্ন করারও পরিকল্পনা রয়েছে। এরপর মাঠপর্যায়ে সম্পূরক ভোটার তালিকার সিডি পাঠানো হবে ৮ নভেম্বর। আর ৯ নভেম্বর ইভিএমসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সেই সিদ্ধান্ত অনুসারে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!