Home | ব্রেকিং নিউজ | চুনতিতে দূর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শিশু আবিদার জীবন কঠিন বাস্তবতায়

চুনতিতে দূর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শিশু আবিদার জীবন কঠিন বাস্তবতায়

434

মোঃ জামাল উদ্দিন : লোহাগাড়ার চুনতি জাঙ্গালিয়ায় সংঘটিত বাস-মাইক্রো মুখোমুখি সংঘর্ষে বিধাতার ইচ্ছায় বেঁচে গেল ১৮ মাসের শিশু আবিদা। সে বর্তমানে লোহাগাড়ার বড়হাতিয়া লস্কর পাড়ার খালার বাড়িতে কালুর তত্ত্বাবধানে রয়েছে। তার ভবিষ্যৎ কঠিন জীবন কিভাবে কাটবে তা নিয়ে সবাই উদ্বেগ উৎকন্ঠায় রয়েছেন। সে নিজেও জানে না কার কোলে মানুষ হবে। এ প্রতিনিধি ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারেন আবিদা এবং সাদিয়া তারা দু’জন জমজ বোন। তাদের বাড়ি কক্সবাজারের পিএমখালী ছনখোলা নয়াপাড়ায় অবস্থিত। পিতা মোঃ জিসান ওরফে সবুজ ও মাতা তসলিমা আক্তারের অপার øেহে বেড়ে উঠছিল। কক্সবাজার থেকে মা-বাবা ও নানীর সাথে তারা চট্টগ্রাম যাচ্ছিল। পথিমধ্যেই এ দূর্ঘটনা ঘটে। আবিদা ছিল বাবার কোলে আর সাদিয়া ছিল মাকে জড়িয়ে ধরে তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায়। দূর্ঘটনা কবলিত মাইক্রোটি ধুমড়েমুচড়ে যাওয়ার পর সেখানে তার নানী, মা ও জমজ বোন সাদিয়া মারা যায়। বিধাতা তাকে নিয়ে কি খেলায় মেতেছিল তা তিনিই জানেন। আবিদার বাবা আহত হওয়ার পর তাকেও সামান্য আহত অবস্থায় দূর্ঘটনাস্থান সন্নিহিত একটি টং ঘরের মহিলা তাকে উদ্ধার করেন এবং প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। খবর পেয়ে কালু এসে তাকে সনাক্ত করে তাদের তত্ত্বাবধানে নিয়ে যান। বর্তমানে সে লস্কর পাড়ায় রয়েছে। জীবন-মৃত্যু বিধাতার হাতে। মা গেছেন, নানী গেছেন, পিতা রয়েছেন। তিনি আহত অবস্থায় মৃত্যুর মুখোমুখি। আর আবিদা চোখ মেলে তাকিয়ে রয়েছেন আগামী দিনে সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য। ঘটনাস্থল কক্সবাজার জেলার চকরিয়া সীমানা থেকে সামান্য উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত। কিন্তু দোহাজারী হাইওয়ে পুলিশের আওতায় নই বলেই লাশগুলো চকরিয়া হাইওয়ে পুলিশ নিয়ে গেছে। লাশ গেছে কক্সবাজার। আর আবিদা রয়েছেন লোহাগাড়ায়।

এছাড়া লোহাগাড়ার আরো এক ব্যক্তি মারা গেছেন। তার বাড়িতে গিয়েও হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সাথে এ প্রতিনিধি মুখোমুখি হয়েছেন। উভয় পরিবারকে সান্তনা দেয়ার মতো কোন ভাষা এ প্রতিনিধি খুঁজে পাননি। সবাই বলছেন এমন ঘটনা যেন কারো জীবনে না আসে। মৃত্যু কিংবা বেঁচে থাকা যেখানে সমান, সেখানে মরা-বাঁচা কথাটা অমূলক বলে অনেক বলছেন। লোহাগাড়া সদরের পুরান থানা গেইট পেরিয়ে সামান্য কিছুদূর গেলেই সিকদার পাড়া। সেখানেই বিকৃত অবস্থায় সিরাজুল ইসলামের পুত্র আফজাল সোহেল (৩০) এর লাশ রয়েছে। তিনিও আজিজনগর থেকে লোহাগাড়ায় আসছিলেন। তিনি আজিজনগরের বোরকা ফ্যাক্টরীতে কাজ করতেন। অত্যন্ত অসহায় ও গরীব পরিবারের ভরণ পোষণের একমাত্র অভিভাবক ছিলেন তিনি। তার সংসারে ২ ছেলে, ১ মেয়ে ও স্ত্রী রয়েছে। তার অপর এক ভাই অনুরূপভাবে সড়ক দূর্ঘনায় লোহাগাড়া পুরান থানা এলাকায় মারা গিয়েছিলেন। বোনকে বিয়ে দিয়েছেন রাজশাহীতে। চার মাস আগে সেখানে তার ভগ্নিপতিও মারা গেছেন বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তার মা-বাবা বোনকে আনতে রাজশাহী গেছেন। মৃত্যুর মিছিলে সন্তান আফজাল সোহেল ও রাজশাহীতে অসহায় বিধবা কন্যার দূর্বিসহ জীবনের মুখোমুখি অবস্থান। তড়িগড়ি তাকে আনতে গিয়ে লোহাগাড়ায় যথাসময়ে তারা পৌঁছতে পারবেন কিনা সন্দেহ পোষণ করা হচ্ছে। বিকৃত লাশের পচন ধরায় হয়তো মা-বাবা পৌঁছার আগেই তাকে দাফন করা হবে। মানুষ ভাবেন এক, কিন্তু বাস্তবতা হন অন্য রকম। এমনও হতে পারে তারা পৌঁছার আগেই সোহল চলে যাবেন না ফেরার দেশে। কখনও কারো সাথে তার দেখা সাক্ষাত হবে না। শুধু থেকে যাবে স্মৃতি। পৃথিবীতে কোন কিছুই থেমে থাকে না। তবে মানুষ এগিয়ে চলে সামনের দিকে। মানুষ মানুষের জন্য এ দৃষ্টান্ত বহু রয়েছে। কোনদিন যদি এ দূর্ঘটনার বিবরণ মানুষের মুখে অনুরণিত হয় তখন টংঘরের মহিলার নিঃস্বার্থ সেবা দিয়ে আবিদাকে বাঁচানোর গল্প উঠে আসবে। তখন বলা হবে মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। তবে এমন মৃত্যু কিংবা দূর্ঘটনা যেন কারো জীবন না আসে, সেটাই কায়মনো বাক্যে সকলেই প্রার্থনা করবেন। এমনটাই বলছেন ঘটনাস্থলে আসা অগণিত উৎসুক জনতা, বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে কর্মরত কর্মীবৃন্দ ও এলাকাবাসী।

লোহাগাড়ায় বাস-মাইক্রোবাস মুখোমুখি সংঘর্ষে মহিলা-শিশুসহ নিহত ৮

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!