ব্রেকিং নিউজ
Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | চসিকের ৯০ জন শিক্ষক কর্মচারী একযোগে বদলি

চসিকের ৯০ জন শিক্ষক কর্মচারী একযোগে বদলি

city

নিউজ ডেক্স : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন স্কুলে কর্মরত ২৫ জন শিক্ষক ও ৪ কর্মচারীকে বদলি করা হয়েছিল সাত মাস আগে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি তাদের বদলিকৃত বিদ্যালয়ে যোগদান করার কথা। অথচ গতকাল পর্যন্ত যোগদান করেছেন মাত্র ৬ জন। বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান না করা নিয়ে আছে নানা সমালোচনা। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল বুধবার নতুন করে স্কুল ও কলেজের ৯০ জন শিক্ষক–কর্মচারিকে একযোগে বদলি করে অফিস আদেশ জারি করেছেন সংস্থাটির প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা নাজিয়া শিরিন। আগামী শনিবারের মধ্যে বদলিকৃত শিক্ষকদের নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়েছে। পূর্বের বদলি আদেশ কার্যকর না করে নতুন করে বদলি আদেশ করায় দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।

গতকালকের বদলি আদেশ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, স্কুল পর্যায়ে ৭০ জন শিক্ষক ও ৫ জন কর্মচারি আছেন। কলেজ পর্যায়ে আছেন ১৪ জন শিক্ষক ও একজন কর্মচারি। স্কুল পর্যায়ের ১৫ জন প্রধান শিক্ষক, ৮ জন সহকারী প্রধান শিক্ষক ও ৩৮ জন সহকারী শিক্ষককে স্বপদে বদলি করা হয়েছে। এছাড়া ভারপ্রাপ্ত ৮ প্রধান শিক্ষককে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ও একজনকে সহকারী প্রধান শিক্ষক থেকে সহকারী শিক্ষক পদে বদলি করা হয়েছে। এছাড়া আরো ৫ জন কর্মচারিকে স্বপদে বদলি করা হয়েছে। পদগুলো হচ্ছে– শিক্ষক কাম করণিক, অফিস সহকারী, দপ্তরী, এম.এল.এস.এস. ও পরিচারিকাকে বদলি করা হয়েছে স্বপদে। কলেজ পর্যায়ে যাদের বদলি করা হয়েছে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন এমন ১১ জন রয়েছেন। এর মধ্যে ৫ জনকে করা হয়েছে সহকারী অধ্যাপক এবং ৬ জনকে প্রভাষক পদে বদলি করা হয়েছে। এছাড়া ৩ জন প্রভাষক ও একজন এম.এল.এস.এস কে বদলি করা হয়েছে স্বপদে।

এদিকে গতকাল যাদের বদলি করা হয়েছে তাদের মধ্যে আছেন চসিকের শিক্ষা কর্মকর্তাও। গত তিন বছর ধরে তিনি পদটিতে কর্মরত আছেন। কিন্তু গতকালকের বদলি আদেশে তাকে আলকরণ নুর আহম্মদ সিটি কর্পোরেশন বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক করা হয়েছে। আগামী সাত মাস পর অবসরে যাওয়ার কথা তার। পদাধিকার বলে এতদিন তিনি চসিকের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এবং প্রধান শিক্ষকদের দাপ্তরিক কার্যক্রম মনিটরিং করতেন। বদলিকৃত পদে যোগ দিলে তাকেই মনিটরিং করবেন ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক। একইভাবে নতুন বদলি আদেশের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্বপালনকারী ৮ জন প্রধান শিক্ষক ও ১১ জন অধ্য ও অন্যের অধীন হলেন। এতে সংশিহ্মষ্ট শিক্ষকদের অনেকেই আত্মমর্যাদা ক্ষুুণ্ন হচ্ছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক আজাদীকে জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার না শর্তে একাধিক শিক্ষক কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেছেন, ‘অতীতে তারা প্রধান শিক্ষক বা অধ্য হতে চাননি। তবুও কর্পোরেশন তাদের সেই পদে দায়িত্ব পালন করার নির্দেশ দিয়েছিল বলেই পালন করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে ওসব পদে কাজ করায় সামাজিকভাবে তাদের অধ্য বা প্রধান শিক্ষক হিসেবেই পরিচিতি গড়ে উঠেছে। এখন বদলির ফলে তারা সেই সামাজিক মর্যাদা হারাচ্ছেন।’

এদিকে গতকাল যে বদলি আদেশ করা হয়েছে তাদের মধ্যে অন্তত ৫ জন শিক্ষক রয়েছেন যাদের বিরুদ্ধে অতীতে ‘আর্থিক’ এবং ‘নারী কেলেংকারী’সহ বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। কোন কোন শিক্ষকের বিরুদ্ধে হয়েছিল বিভাগীয় মামলাও। অতীতে বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকায় ওইসব শিক্ষকদের বদলি করা হয়েছিল সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে। গতকালকের বদলি আদেশে তাদেরকে আবারো পূর্বের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বদলি করা হয়েছে। অর্থাৎ অতীতে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকা অবস্থায় অনিয়মে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ছিল তাদেরকে সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই বদলি করা হয়েছে।

বদলি আদেশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা নাজিয়া শিরিন বলেন, ‘৯০ জন শিক্ষক–কর্মচারিকে বদলি করা হয়েছে। এমপিও’র (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) ভিত্তিতে তাদের বদলি করা হয়েছে। অর্থাৎ তারা পূর্বে যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এমপিওভুক্ত হয়েছিলেন এখন সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই বদলি করা হয়েছে। কারণ, তারা এমপিওভুক্ত এবং কর্মরত পদ অর্থাৎ দুটো পদ একসঙ্গে ধরে রেখেছেন। এখন তাদেরকে বদলি করার ফলে একটি পদ খালি হবে। ওই পদে আমরা নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারব।’

‘কোন কোন শিক্ষক বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্য ও প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। এখন বদলির ফলে তাদের কেউ প্রভাষক বা সহকারী প্রধান শিক্ষক হলেন। অর্থাৎ দৃশ্যত পদাবনিত। এ েতে্র সংশিহ্মষ্ট শিক্ষকদের কেউ কেউ দাবি করছেন, ‘সামাজিকভাবে তাদের মর্যাদা ুণ্ন করেছে সিটি কর্পোরেশন’। এটা কতটুক সত্য? এমন প্রশ্নে নাজিয়া শিরিন বলেন, ‘তাদেরকে তো ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের নিয়োগ কিন্তু ওই পদের না। অর্থাৎ তারা পূর্বে যে পদে ছিলেন এখন সেই পদেই বদলি করা হল। তাছাড়া প্রধান শিক্ষক বা অধ্য হওয়ার জন্য বিভিন্ন কাইটেরিয়া থাকে, তাদেরকে সেই কাইটেরিয়া মেনে নিয়োগ দেয়া হয়নি। তাই বিধি ছাড়া বেশিদিন তাদেরকে এক পদে রাখা যাবে না। এখন আমরা নতুন করে শূন্যপদগুলোতে নিয়োগ দিব। নিয়ম মেনে তারাও আবেদন করতে পারবেন।’

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, গত জানুয়ারি থেকে যে বদলি আদেশ কার্যকর করার কথা ছিল তা চাপা দিতেই গতকাল তড়িগড়ি করে শিক্ষা বিভাগ বদলি আদেশ জারি করেছে। অবশ্য গতকালকের জারিকৃত আদেশে তিনজন শিক্ষক রয়েছেন যাদের নাম সাত মাস আগের বদলি আদেশেও ছিল। প্রসঙ্গত, গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর ২৯ শিক্ষক–কর্মচারিকে বদলি আদেশ দিয়ে অফিস আদেশ জারি করেছিলেন প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা নাজিয়া শিরিন। ওই আদেশে ১৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বদলিকৃত পদে যোগদান করার নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর ১৯ সেপ্টেম্বর আরেকটি অফিস আদেশ জারি পূর্বের বদলি আদেশটি ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছিল। অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে পূর্বের আদেশটি কার্যকর হবে। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত বদলিকৃত পদে যোগ দেন মাত্র ৬ জন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা নাজিয়া শিরিন বলেন, ‘আজ (গতকাল) যে বদলি আদেশ করা হয়েছে সেখানে তাদের (সেপ্টেম্বরের বদলি আদেশে ছিলেন এমন শিক্ষকগণ) অনেকইে আছেন। ওই সময় পরীক্ষা থাকায় কার্যকর হয় নি। সামনে আরেকটি বদলি আদেশ হবে। সেখানেই পূর্বে বদলি হওয়া শিক্ষকরা থাকবেন। তাছাড়া আজকের (২৫ এপ্রিল) বদলি আদেশের জন্যই আগেরটা কার্যকর করা হয়নি।

এদিকে গতকালকের বদলি আদেশ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে যে বদলি আদেশ হয়েছিল সেই তালিকার ৩ জন শিক্ষক গতকালকের বদলি আদেশে অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন।

এদিকে চসিকের শিক্ষা বিভাগ থেকে জানা গেছে, ভর্তুকি কমাতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) পরিচালিত স্কুল–কলেজসমূহে কর্মরত এমপিও (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার)বিহীন শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করার উদ্যোগে নিয়েছেন মেয়র। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ইতোপূর্বে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের নিয়োগকৃত স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে বদলিরও প্রক্রিয়াটি গ্রহণ করা হয়েছিল। এ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে ৫ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করে দেন মেয়র। কমিটির সদস্যরা যাচই–বাছাই শেষেই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলির জন্য তালিকা তৈরি করেছিল।

প্রসঙ্গত, প্রতিবছর শিক্ষাখাতে ৪৩ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার ৬০৪ টাকা টাকা ভর্তুকি দেয় চসিক। নগরীতে সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত ৮৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এরমধ্যে ২১টি কলেজ (২টিতে অনার্স কোর্স এবং ৭টিতে ডিগ্রি পার্স কোর্স চালু আছে), ৪৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি প্রতিষ্ঠানে ডাবল শিফটও চালু আছে। প্রতিটি ক্লাসে একের অধিক শাখা (কোনটিতে ৬টি) রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ৬০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত।

এছাড়া বিদ্যমান ২১টি কলেজের মধ্যে এমপিওভুক্ত কলেজের সংখ্যা মাত্র ৮টি। এসব কলেজে স্থায়ী ২১৪ জন প্রভাষক থাকলেও এমপিওবিহীন আছেন ১১৩ জন। পক্ষান্তরে ৪৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে এমপিওভুক্ত আছে ৩৮টি। এ সব বিদ্যালয়ে স্থায়ী ৫২২ জন শি কের মধ্যে এমপিওবিহীন আছেন ১৯৭ জন।

সূত্র : দৈনিক আজাদী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!