Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক: পঞ্চাশের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ১৫ স্থানেই বেশি দুর্ঘটনা

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক: পঞ্চাশের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক ১৫ স্থানেই বেশি দুর্ঘটনা

নিউজ ডেক্স : নামে মহাসড়ক হলেও দুই লাইনের সরু একটি সড়ক দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজারের মতো গাড়ি চলাচল করে। গতিতেও বেপরোয়া এসব গাড়ি। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। ঘটছে প্রাণহানি। বাড়ছে পঙ্গুত্ব। আর সেই সাথে মৃত্যুও। এই হচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বাস্তবিক চিত্র। বলতে গেলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক এখন ‘মরণফাঁদে’ পরিণত হয়েছে। মহাসড়কটিতে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল যেন থামছেই না। এটি মহাসড়ক হলেও প্রয়োজনের চেয়ে অনেক সরু। ফলে প্রতিদিনই ঝরছে তাজা প্রাণ।

হাইওয়ে পুলিশ, প্রশাসন ও সড়ক পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে একাধিক কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। গত দুই মাসে মহাসড়কটিতে দুর্ঘটনায় মারা গেছেন শতাধিক মানুষ। সড়কটিতে ত্রুটিপূর্ণ বিপজ্জনক বাঁক এবং লবণবাহী ট্রাকের পানির কারণে এটি পিচ্ছিল হয়ে আরও বেশি বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পরিবহন শ্রমিক ও বাস চালকদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, চট্টগ্রাম থেকে লোহাগাড়া পর্যন্ত মহাসড়কের দূরত্ব ৪৫ কিলোমিটার। চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দূরত্ব ৬০ কিলোমিটার। এর মধ্যে পটিয়া থেকে লোহাগাড়া ও চকরিয়া থেকে নাপিতখালী পর্যন্ত মহাসড়কের অবস্থা খুবই বিপজ্জনক। এ এলাকায় সড়ক যেমন সরু, তেমন রয়েছে শতাধিক বিপজ্জনক বাঁক। যেখানে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রতিবছর কমপক্ষে ৫০০ জনের বেশি মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। নিঃস্ব হচ্ছে শত শত পরিবার। চকরিয়া ও পেকুয়া থেকে লবণবাহী ট্রাকের পানি আর ধুলোয় জমাট বেঁধে সড়ক হয়ে ওঠে তেলতেলে। এতে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে ব্রেক করলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়ি দুর্ঘটনায় পতিত হয়।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলীরা জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতুর দক্ষিণাংশ থেকে চকরিয়ার খুটাখালী পর্যন্ত ১১৫ কিলোমিটার সড়কে ৫০টির বেশি স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক রয়েছে। এ ছাড়া ১৫টির বেশি স্থানে সড়কের ওপর রয়েছে হাটবাজার। হাইওয়ে পুলিশের মতে, একাধিক কারণে মহাসড়কটি মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে- এটি চার লেনে উন্নীত না করা, আঁকাবাঁকা পথ, দিকনিদের্শনাহীন বাঁক, অদক্ষ চালক দিয়ে ও বেপরোয়া গতিতে যান চালানো, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন সড়কে নামানো, চলন্ত অবস্থায় বাসে যাত্রী উঠানামা করা, যানবাহন ক্রস করার সময় গতি না কমানো, সংকেত না দিয়ে ওভারটেকের চেষ্টা, গাড়ি চালনা শুরুর আগে চালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করা। মূলত এসব কারণে ঘটছে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা। এছাড়াও রয়েছে একই চালককে দিয়ে একাধিক ট্রিপ চালনা ও চালকদের মাদক সেবন।

হাইওয়ে পুলিশের মতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটিতে ১৫টি দুর্ঘটনা কবলিত স্পট রয়েছে। এসব স্পটের মধ্যে রয়েছে- চন্দনাইশের বাদামতল, বান্যাপুকুর পাড়, কলঘর, দেওয়ান হাট, পাটানানীপোল, নয়াখালের মুখ, আধারমার মাজার, সাতকানিয়ার কেরানী হাট, লোহাগাড়ার বার আউলিয়া কলেজ মোড়, রাজঘাটা, লোহার দীঘিরপাড়, হাজী রাস্তার মাথা, চিরিঙ্গা, ফাঁসিয়াখালীর মইগ্যারমারছড়া, জাহিল্যার উঠানসহ বেশ কিছু এলাকা।

এ সড়কে নিষিদ্ধ হলেও পুলিশের নাকের ডগায় চলাচল করছে অটোরিকশা। এসব হালকা যানের চালকরা অনেক সময় ভারি যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দেয়। মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে ওভারটেক করে, কখনও বড় যানবাহনকে সাইড না দিয়ে সড়কের মাঝখান দিয়ে চলাচল করে। ফলে এ সড়কে প্রতিনিয়তই ঘটছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।

এই ব্যাপারে দোহাজারী হাইওয়ে থানার ওসি মাকসুদ আহমেদ জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে রাস্তার তুলনায় গাড়ির সংখ্যা বেশি। আর স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে সব বড় বড় প্রতিষ্ঠান রাস্তার পাশে। অনেক আগেই এই মহাসড়কটির প্রশস্ততা বাড়ানো উচিত ছিল। এখন হয়ে যাবে আশা করছি। তিনি বলেন, ইট ভাটার মাটি ও লবণের পানি সড়কে পড়ে পিচ্ছিল হয়ে যাওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটছে বেশি। তবে দুর্ঘটনা আগের তুলনায় কিছুটা কমছে বলে মনে করছেন তিনি।

এদিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই মহাসড়কে প্রতিদিন বৈধ বাস-ট্রাক (এসি-নন এসি লোকাল বাস ৫ শতাধিক, ট্রাকসহ অন্যান্য পিকআপ মিলে আরো ৫শ) চলে প্রায় ১ হাজারের মতো। অবৈধ গাড়ি চলে ২ হাজারের (অনুমোদন বিহীন নছিমন-করিমন, চার চাকার ট্রলি, ইজিবাইক সিএনজি, চার চাকার খোলা পিকআপ) মতো। সবমিলে প্রতিদিন ৩ হাজার গাড়ি চলাচল করে বলে জানান আরকান সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক মো. ইয়াছিন।

তিনি জানান, কক্সবাজার মহাসড়কে প্রতিনিয়ত ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটছে। এই দুর্ঘটনায় প্রতিদিনই প্রাণ ঝরছে সড়কে। এর অন্যতম কারণ হল- খোলা ট্রাকে করে লবণ পরিবহন। লবণের পানিতে রোড পিচ্ছিল হয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। অথচ খোলা লবণ পরিবহন সরকারিভাবে নিষিদ্ধ। প্রশাসনকে ম্যানেজ করে রাত থেকে ভোর পর্যন্ত খোলা ট্রাকে করে লবণ পরিবহনের কারণে কক্সবাজার মহাসড়কে প্রতিদনই দুর্ঘটনা ঘটছে। তা ছাড়াও কক্সবাজার মহাসড়কে সরকারিভাবে সড়ক ও জনপথ এবং হাইওয়ে পুলিশ কর্তৃক নির্ধারিত ৮৪টি বিপজ্জনক বাঁক রয়েছে। রয়েছে সরু ব্রিজ। বিভিন্ন এলাকায় বসছে হাট-বাজার। এগুলোর কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুও।

সর্বশেষ গত সোমবার রাত সোয়া ৮টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া ভাইয়ের দীঘির পাড় এলাকায় দ্রতগতির একটি বাস বিপরীত দিক থেকে আসা একটি সিএনজিকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান চন্দনাইশের মোহাম্মদপুরস্থ সেনবাড়ির বিশ্বজিৎ সেন, তার স্ত্রী রীপ্না সেনসহ ৬ জন। -আজাদী প্রতিবেদন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!