নিউজ ডেক্স : ‘এই জরিপটা না হলে আমরা বলতাম, অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সব সূচকে চট্টগ্রামের অবস্থান অনেক ভালো। কিন্তু জরিপের রিপোর্ট বলছে– আমরা ভালো অবস্থানে নেই। আমাদের শিশুরা ভালো নেই।’ ‘চাইল্ড ওয়েল বেইং সার্ভে ইন আরবান এরিয়াস অব বাংলাদেশ–২০১৬’ শীর্ষক জরিপের চট্টগ্রাম বিভাগীয় রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেছেন। গতকাল বিকেলে নগরীর হোটেল রেডিসন ব্লু–তে যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিবিএস (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো) ও ইউনিসেফ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার, চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক দীপক চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা ও ইউনিসেফ বাংলাদেশের চীফ (সোসাল পলিসি এভালুয়েশন এনালেটিক্যাল এন্ড রিসার্চ) কার্লোস এ কস্তা। বিবিএস এর মনিটরিং দ্যা সিচুয়েশন অব চিলড্রেন এন্ড উইমেন প্রকল্পের পরিচালক এ কে এম আশরাফুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইউনিসেফ, চট্টগ্রাম ফিল্ড অফিসের প্রধান মাধুরী ব্যানার্জী। চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিসংখ্যান অফিসের যুগ্ম–পরিচালক (অতি. দায়িত্ব) মোহাম্মদ ওয়াহিদুর রহমান ও ইউনিসেফ চট্টগ্রাম ফিল্ড অফিসের প্ল্যানিং এন্ড মনিটরিং অফিসার গাজীউল হাসান মাহমুদ জরিপের প্রজেক্টর প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে শিশুদের পুষ্টি, শিশু স্বাস্থ্য, সুপেয় পানি ও স্যানিটেশন, শিশু উন্নয়ন, স্বাক্ষরতা ও শিক্ষা এবং শিশু সুরক্ষার বিষয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের তথ্য তুলে ধরেন।
পুষ্টির দিক দিয়ে অন্যান্য অঞ্চল ও জাতীয় পর্যায়ের তুলনায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের শিশুদের পিছিয়ে থাকার তথ্য উঠে আসে রিপোর্টে। এছাড়া শিশু স্বাস্থ্য, শিশুশ্রম, শিশুর শিক্ষা ও সুরক্ষার বিষয়েও চট্টগ্রামের চিত্র খুব বেশি আশাব্যঞ্জক নয়।
এ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নান বলেন, জরিপটা না হলে আমরা বলতাম, চট্টগ্রাম সবদিক দিয়ে ভালো আছে। কারণ, আমরা যতটুকু জানি চট্টগ্রামের মানুষ অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক স্বাচ্ছন্দ্য জীবন যাপন করে। প্রবাসীদের বেশির ভাগই কিন্তু চট্টগ্রামের। এজন্য বিদেশি রেমিটেন্সও এই চট্টগ্রামেই বেশি আসে। তাই আমাদের ধারণা ছিল, অনেক সূচকে চট্টগ্রাম ভালো অবস্থানে থাকবে। কিন্তু জরিপের রিপোর্ট বলছে ভিন্ন কথা। বিবিএস এর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিদেশি প্রতিষ্ঠান–সংস্থাগুলো যাতে বিবিএস’র রিপোর্টগুলো গুরুত্বসহকারে নেয়, আপনাদের সেদিকটায় একটু নজর দিতে হবে।
দীপক চক্রবর্তী বলেন, আমরা সত্যিই যদি শিশুদের কল্যাণে কাজ করতে চাই, তবে এই রিপোর্ট খুব ভালো কাজ দেবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এই রিপোর্টে উঠে এসেছে, সিটি কর্পোরেশনের তিন ভাগের এক অংশ বস্তি প্রকৃতির এলাকা। এসব এলাকা সব সূচকে পিছিয়ে আছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে আরো বেশি গুরুত্ব দেয়া দরকার উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার পরিচালক বলেন, তবে সব সরকারি বা এনজিও সংস্থাদের একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তা হলো যাতায়াত সুবিধা সহজ থাকা এলাকায় সবাই যায় কিংবা সেবা দিতে চায়। কিন্তু যোগাযোগে একটু দুর্গম এলাকায় কেউ হয়তো সেভাবে যাচ্ছে না। এসব অঞ্চলে নজর দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা বলেন, আমরা এমডিজি–তে অনেক ভালো অবস্থানে ছিলাম। যার ফল হিসেবে আমাদের প্রধানমন্ত্রী পুরস্কৃত হয়েছেন। এখন এসডিজি’র লক্ষ্য পূরণে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আমরা মনে করেছিলাম, অন্যান্য অঞ্চল থেকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকার শিশুদের স্বাস্থ্য–পুষ্টি নিয়ে অনেক ভালো অবস্থানে থাকবো। কিন্তু জরিপ বলছে, আমরা ভালো নেই। আমরা অনেক দূর পিছিয়ে আছি। এখন এই জরিপের রিপোর্ট নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করায় ইউনিসেফ ও বিবিএসকে ধন্যবাদ দেন তিনি।
ইউনিসেফ কর্মকর্তা কার্লোস এ কস্তা বলেন, ২০১৬ সালে পরিচালনা করা এ জরিপটি এসডিজি যুগে প্রথম কাজ। অনেক বিষয়ে চট্টগ্রাম পিছিয়ে থাকলেও এসডিজির লক্ষ্য পূরণের পথে চট্টগ্রাম বিভাগই নের্তৃত্ব দিবে বলে আমরা আশা রাখতে পারি।
অনুষ্ঠানে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর, চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক মো. সুলতান মিয়া, ইউনিসেফ চট্টগ্রাম ফিল্ড অফিসের শিক্ষা কর্মকর্তা আফরোজা ইয়াসমিনসহ ইউনিসেফ ও বিবিএস–এর অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র : দৈনিক আজাদী