Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | সিনেমা-নাটক বানিয়ে আমার মেয়ের আত্মাকে কষ্ট দেবেন না : নুসরাতের মা

সিনেমা-নাটক বানিয়ে আমার মেয়ের আত্মাকে কষ্ট দেবেন না : নুসরাতের মা

image-178509-1558106386

নিউজ ডেক্স : ‘আমার মেয়ে আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়েছেন। শুনতেছি কেউ কেউ নাকি আমার মেয়েকে নিয়ে নাটক ও সিনেমা বানানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন। দয়া করে আমার মেয়েকে নিয়ে কেউ সিনেমা বা নাটক বানাবেন না।’

তিনি বলেন, ‘নুসরাত শহীদ হয়ে গোটা বিশ্বের মানুষের মনে দাগ কেটেছে। সে কবরে চিরনিন্দ্রায় শায়িত আছে। সিনেমা-নাটক বানিয়ে তাকে দয়া করে দোজখে নেবেন না। তাকে নিয়ে সিনেমা ও নাটক বানালে তার আত্মা কষ্ট পাবে। আমরা আখেরাতে তার কাছে জবাব দিতে পারব না। আমার মেয়ে একটি নিষ্পাপ ফুল। এই ফুলকে কষ্ট দেবেন না।’

শিরিন আক্তার বলেন, ‘আমরা অর্থের দিক দিয়ে গরিব হতে পারি। কিন্তু ধর্মের দিক দিয়ে আমরা গরিব নই। আমার মেয়েকে প্রথমে নূরানী মাদ্রাসায়, পরে মহিলা মাদ্রাসায় এবং সেখান থেকে দাখিল পাস করার পর সোনাগাজী মাদ্রাসায় ভর্তি করাই। এই মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করার পর সে ওই মাদ্রাসায় আর পড়ত না।’

তিনি বলেন, ‘নুসরাতের বাপ, দাদা, চাচা ও ভাই সবাই আলেম। দুনিয়াতে কিছু না পেলেও আখিরাতে আমার মেয়ে শহীদি মর্যাদা পাবে। পবিত্র রমজান মাস যাচ্ছে। আমার কাছে যেন কেয়ামত যাচ্ছে। কারণ সাহরি ও ইফতারের সময় আমার মেয়ে নুসরাত আমার সঙ্গে খেতে বসত। গল্প করত। গরম পানি করত। আজকে আমার মেয়ে নেই। সবই আছে। রোজাও আছে। আমার মেয়েকে নিয়ে অনেকে ওয়াজ ও গজল বানিয়েছেন। আরও বানাতে পারেন। কিন্তু কোনো সিনেমা বা নাটক বানিয়ে আমার মেয়ের আত্মাকে কষ্ট দেবেন না।’

নুসরাতের মা আরও বলেন, ‘আমরা ভালো আছি। আমরা জীবিত অবস্থায় নুসরাতের খুনিদের বিচার দেখে যেতে চাই। তাহলে আমার মেয়েটির আত্মা শান্তি পাবে।’

উল্লেখ্য, নুসরাত সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেন নুসরাত। এ ব্যাপারে তার মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পরে মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেয়া হয়। ৬ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এ সময় তাকে কৌশলে পাশের বহুতল ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। সেখানে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়া হয়।

গত ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাত মারা যান। এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের দায়ের করা মামলাটি তদন্ত করছে পিবিআই।

পিবিআই ২২জন আসামিকে গ্রেফতার করেছে। এরমধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমার জানিয়েছেন, ২৭ মের মধ্যে এই মামলার চার্জশিট প্রদান করা হবে।

নুসরাত হত্যার ঘটনায় ১৬ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পিবিআই। নুসরাতের গায়ে অগ্নিসংযোগের পর দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন, এসআই ইকবাল আহম্মদ ও মোহাম্মদ ইউছুফকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এ ছাড়া ফেনীর পুলিশ সুপার (এসপি) জাহাঙ্গীর আলম সরকারকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত করা হয়েছে। অন্যদিকে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা ও ইংরেজি প্রভাষক আবছার উদ্দিনের এমপিও স্থগিত করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!