নিউজ ডেক্স : গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ, শঙ্খ, ডলুনদী ও হাঙর খাল দিয়ে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সাতকানিয়ার নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। কিছু গ্রামীণ অভ্যন্তরীণ সড়ক বন্যার পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে এসব এলাকায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। শঙ্খ ও ডলুনদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাজালিয়া ও কালিয়াইশসহ কয়েকটি এলাকায় শঙ্খনদীর পানি তীর উপচে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে শঙ্খনদীর কয়েকটি এলাকায় ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে চরতি এলাকার বেশ কিছু বসতঘর ও আবাদী জমি।
এদিকে, শঙ্খনদী থেকে বালু উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত তমা কন্সট্রাকশনের ড্রেজার মেশিনবাহী ভল্বগেট নদীর স্রোতের তোড়ে ভেসে গিয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের উপর থাকা দোহাজারী ব্রিজের সাথে ধাক্কা লেগেছে। এতে ব্রিজের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। বন্যার পানি বৃদ্ধি এখনো অব্যাহত রয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ইউনিয়ন গুলোর জন্য ৩১ মেট্রিক টন এবং পৌরসভার জন্য ২২ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সরেজমিন পরিদর্শন ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, কয়েক দিনের অবিরাম বর্ষণ, শঙ্খ, ডলুনদী ও হাঙর খাল দিয়ে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সাতকানিয়ার বাজালিয়া, ছদাহা, কেঁওচিয়া, ধর্মপুর, কালিয়াইশ, নলুয়া, আমিলাইষ, চরতি, এওচিয়া, কাঞ্চনা, ঢেমশা ও পৌরসভার নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার কিছু কিছু অভ্যন্তরীন সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ফলে মানুষের চলাচলে দূর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।
ছদাহা ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোসাদ হোসেন চৌধুরী জানান, পূর্ব ছদাহা ও উত্তর ছদাহা এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। পানি বৃদ্ধি এখনো অব্যাহত রয়েছে। ফলে উত্তর ছদাহা ও পূর্ব ছদাহা এলাকার কিছু বসত ঘরে পানি ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চরতি ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা মুহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, চরতির বেশ কিছু এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। কিছু মানুষ ইতিমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কয়েকটি সড়ক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। শঙ্খনদীর ভাঙনে কয়েকটি বসত ঘরের অংশ বিশেষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় অনেক বসত ঘরে পানি প্রবেশের সম্ভাবনা রয়েছে।
আমিলাইষ ইউপি চেয়ারম্যান এইচ এম হানিফ জানান, আমিলাইষের নিচু এলাকা গুলো বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। সারওয়ার বাজারের পূর্ব পার্শ্বে অপরিকল্পিত ভাবে বালির স্তুপ করায় পানি চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়ে বেশ কিছু পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। নলুয়া ইউপি চেয়ারম্যান তসলিমা আকতার জানান, টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নলুয়ার নিচু এলাকায় বন্যা সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিন মরফলা এলাকায় কিছু মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
কাঞ্চনা ইউপি চেয়ারম্যান রমজান আলী জানান, নিচু এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। ৯নং ওয়ার্ডের কসাই পাড়া এলাকায় বুড়াইছড়ি খালের ভাঙ্গনে ৩টি বসত ঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।এওচিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিক জানান, বন্যায় ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের অন্তত ২ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
সাতকানিয়া পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ জোবায়ের জানান, অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পৌরসভার নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।ডলুনদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে রাতের মধ্যে কিছু কিছু এলাকায় মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে লোকজনকে তাৎক্ষনিক ভাবে প্রযোজনীয় সহায়তার প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে।
এদিকে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক (ক্রস বর্ডার) জুলফিকার আহমেদ জানান, ভল্বগেটের ধাক্কায় দোহাজারী ব্রিজে কিছুটা আঁচড় লেগেছে। তবে মারাত্মক ভাবে কোন ক্ষতি হয়নি।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা-তুজ-জোহরা জানান, কয়েক দিনের একটানা বৃষ্টি এবং পাহাড়ী ঢলের কারণে সাতকানিয়ার নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। আমি এলাকায় সরেজমিন গিয়ে বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছি। জনপ্রতিনিধিরাও এলাকার মানুষের পাশে রয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের ইউনিয়ন গুলোর জন্য ৩১ মেট্রিক টন এবং পৌরসভার জন্য ২২ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত এসব চাউল দ্রুত সময়ের মধ্যে বিতরণ করা হবে। -আজাদী অনলাইন