Home | দেশ-বিদেশের সংবাদ | ঈদ যাত্রীদের এবারও ভোগাবে সড়কপথ

ঈদ যাত্রীদের এবারও ভোগাবে সড়কপথ

Untitled-8-14-696x566

নিউজ ডেক্স : আর মাত্র নয়/দশ দিন বাদেই ঈদুল আযহা। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে বাড়ি যাওয়ার তোড়জোর। ট্রেন বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রিও শুরু হয়ে গেছে। লঞ্চ–ট্রেনে কিছুটা স্বস্তিদায়ক যাত্রা হলেও ঈদ যাত্রীদের এবারও ভোগাবে সড়কপথ। কারণ ছোট–বড় গর্তে ভরা সব সড়ক–মহাসড়ক। টানা বৃষ্টিতে ঢাকা–চট্টগাম মহাসড়কসহ জেলা উপজেলার প্রায় সবক’টি সড়কেরই অবস্থা বেহাল। কোনো যানবাহনই এইসব সড়ক–মহাসড়ক দিয়ে স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। বৃষ্টির কারণে সংস্কার কাজেও গতি নেই। তাছাড়া এই ঈদে ঘরমুখো মানুষের পাশাপাশি সড়ক–মহাসড়কে থাকবে কোরবানির পশু বোঝাই ট্রাকের চাপও। ফলে ঈদযাত্রা নিয়ে শঙ্কায় সাধারণ মানুষ।

পরিবারের সঙ্গে ঈদ পালনের জন্য আর দুয়েকদিন বাদেই ঘরে ফিরতে শুরু করবে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করা কর্মজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। সাধারণত এ সময়ে সর্বাধিক যাত্রী পরিবহন হয় সড়কপথে। কিন্তু চলতি বর্ষা মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও মহাসড়কগুলো স্বাচ্ছন্দ্যে যানবাহন চলাচলের জন্য এখনো উপযোগী হয়ে ওঠেনি। তবে সড়কপথ কর্তৃপক্ষের দাবি ঈদ যাত্রা শুরু হওয়ার আগেই ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার মেরামত কাজ সম্পূর্ণরূপে শেষ হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বর্ষা মৌসুমে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার, ঢাকা–চট্টগ্রাম (সীতাকুণ্ড ও মীরসরাই অংশ), চট্টগ্রাম–রাঙামাটি, কাপ্তাই রোডসহ বিভিন্ন মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ছোট–বড় অসংখ্য খানাখন্দে ভরা এসব সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছে যাত্রী সাধারণ। চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়ক অংশে কর্ণফুলী ব্রিজ থেকে শুরু করে চকরিয়া পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিমি. সড়ক অসংখ্য খানাখন্দে ভরা। সাতকানিয়ার কেরানীহাট, চারা বটতল, চন্দনাইশের বিজিসি ট্রাস্ট, বাগিচার হাট, দোহাজারী ও লোহাগাড়ার রাজঘাটা, নোয়াপাড়া, পদুয়া, চুনতি বাজারসহ মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকা ছোট–বড় গর্তে ভরা। এর পাশাপাশি বৃষ্টিতে সেখানে কর্দমাক্ত রাস্তাও তৈরি হয়েছে। ফলে এ সড়ক দিয়ে চলতে গিয়ে প্রতিদিনই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। এছাড়া অন্যতম পর্যটন স্পট কক্সবাজারগামী যাত্রীরাও এ মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করে।

একই মহাসড়ক ব্যবহার করে পার্বত্য জেলা বান্দরবানের বাসিন্দারাও। ঐতিহ্যে ভরপুর এ জেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজার হাজার পর্যটক চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের উপর দিয়ে চলাচল করে। এতে ক’দিন পরে ঈদের ছুটিতে ঘরমুখো লাখ লাখ মানুষ ও পর্যটকের স্রোতের চাপে সবসময়ই ব্যস্ত থাকবে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কটি। যানবাহনের চাপও বেড়ে যাবে এ সড়কে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক দ্রুত মেরামত করা না হলে এ সড়কে মানুষের ভোগান্তির অন্ত থাকবে না।

চট্টগ্রাম–কক্সবাজার মহাসড়কের এ অংশটির মেরামত ও সংস্কার কাজের দায়িত্বে আছে দোহাজারী সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। দপ্তরটির নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল মিয়া গতকাল আজাদীকে বলেন, চলতি বর্ষা মৌসুমে এখানে মোট সড়কের মধ্যে ২৫ কিমি. সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোতে প্রতিনিয়ত সংস্কার কাজ অব্যাহত আছে। তিনি বলেন, প্রতিদিনই আমাদের ৫ থেকে ৬ টি গাড়ি রাস্তা সংস্কারের কাজ করে চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তায় বিটুমিনের কাজ করা হচ্ছে। আশা করছি ঈদের আগেই আমাদের সংস্কার কাজ পুরোপুরি শেষ হবে।

এদিকে ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিটি গেইট এলাকা থেকে দারোগাহাট পর্যন্ত ৩৭ কিমি. জুড়ে অন্তত ৫ থেকে ৬’শ ছোট–বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। তবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর গত শনিবার থেকে এ অংশে সংস্কার কাজ শুরু করেছে। গতকাল সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, এ সড়কটিতে এখনো পুরোপুরি রাস্তা সংস্কারের কাজ শেষ করা যায়নি। মহাসড়কের মীরসরাই অংশেও ছোট–বড় খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে সড়কটির সোনাপাহাড় অংশে এসব খানাখন্দ তৈরি হয়েছে। এছাড়া সেখানে মলিয়ারহাট, টেকেরহাট ও বিজিবি ক্যাম্প সড়কটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গত বছরের ২ জুলাই ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯২ দশমিক ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিলহ্মার দাউদকান্দি টোল প্লাজা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত চারলেন সড়কের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু একবছরের মাথায় মহাসড়কটির বিভিন্ন অংশে ছোট–বড় অনেক গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া কাপ্তাই রোড, অক্সিজেন–হাটহাজারী সড়কের বিভিন্ন স্থানও ক্ষতিগ্রস্ত।

চট্টগ্রাম সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আহমেদ গতকাল আজাদীকে বলেন, ঈদ যাত্রায় সড়কপথে যাতে কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয় সে লক্ষ্যে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোতে প্রতিদিনই আমরা মেরামত কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি আগামী ২৫ তারিখের মধ্যে সমস্ত ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার মেরামত কাজ শেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আজও(গতকাল) সীতাকুণ্ড, মীরসরাইসহ বিভিন্নস্থানে মেরামত কাজ চালানো হয়েছে। এ বিভাগটির অধীনে চট্টগ্রামের অক্সিজেন থেকে রাউজান, অক্সিজেন থেকে হাটহাজারী, কাপ্তাই রোড, সীতাকুণ্ড, মীরসরাই সড়ক ও মহাসড়ক অন্তর্ভুক্ত।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম নগরীর অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়কের অবস্থাও বেহাল। বিশেষ করে জিইসি মোড় থেকে ষোলশহর ২ নম্বর গেইট, মুরাদপুর থেকে বহদ্দারহাট ও নতুন ব্রিজ পর্যন্ত সড়কটির অবস্থা খুবই করুণ। এ সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল কঠিন হয়ে পড়ছে। চট্টগ্রামসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলার বাসিন্দারা নিজেদের গন্তব্যে পৌছতে নগরীর অভ্যন্তরে এ সড়কটি ব্যবহার করে থাকে। নগরের অভ্যন্তরে গুরুত্বপূর্ণ এসব সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবার ঈদ যাত্রায় ভোগান্তিতে পড়তে হবে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা–উপজেলার বাসিন্দাদের। এছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীন বহদ্দারহাট থেকে নতুন ব্রীজ পর্যন্ত সড়কেরও একই অবস্থা।

গত ২৪ জুলাই সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের এক পত্রে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে সকল মহাসড়ক ঈদের এক সপ্তাহ আগেই সম্পন্ন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ঈদ দোরগোড়ায় চলে এসেছে। হাতে আছে আর ৯/১০ দিন। এ সময়ের মধ্যে সকল রাস্তার সংস্কার কাজ একটা চ্যালেঞ্জ। বিরূপ আবহাওয়া থাকলে এ সংস্কার কাজ শেষ করা যাবে না। ফলে সড়কপথে এবার স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদ যাত্রা নিয়ে শংকা দূর হচ্ছে না।

-আজাদী প্রতিবেদন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*

error: Content is protected !!