কাজী সাহেব বললেন, বাবা বলেন কবুল।

পাত্র বললো, কবুল।

কাজী সাহেব এবার পাত্রীর দিকে ঘুরে বললেন, মা এবার আপনি বলেন কবুল।
পাত্রী কিছু বলার আগেই , পিছন থেকে একজন উচ্চস্বরে বলে উঠলেন, এ বিয়ে বন্ধ করো।
চমকে উঠলাম। এ ধরণের দৃশ্য সাধারণত বাংলা সিনেমায় দেখা যায়। তবে এটা কোনো বাংলা সিনেমার দৃশ্য নয়। একটা সত্যি সত্যি বিয়ে বাড়ির দৃশ্য। আর সেই দৃশ্যে একবারে সামনের সারিতে বসে আছি আমি।
চারিদিকে সাজ সাজ রব। সবার মুখে বিয়ে বাড়ির আনন্দ। সবাই মহা আগ্রহ নিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান দেখছে।
আর সেই অনুষ্ঠানে এক্কেবারে শেষ সময় বিয়ে বন্ধ করতে বলে- কে এই অর্বাচীন?
সবাই পিছন ফিরে তাকালো।
একটা পঁচিশ-ছাব্বিশ বয়সের যুবক দাঁড়িয়ে। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি।
নিশ্চয়ই পাত্রীর কোনো প্রেমিক হবে।
কি কেলেঙ্কারি!
পাত্রীর উকিল বাবা ছেলেটির দিকে তাকিয়ে বললো- কে তুমি ? কী চাও ?
ছেলেটি ঘোষণা দিলো – এ বিয়ে হবে না। এই দেখেন মহামান্য হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ। আমার হাতে।
ছেলেটি একটা কাগজ উঁচু করে ধরলেন।
তার হাত থেকে কাগজটি নিয়ে পরীক্ষা করতে লাগলেন উকিল বাবা।
বিয়ে বন্ধ করতে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ! আমি ছেলেটির দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকালাম।
পাত্রকে দেখা গেলো খুবই বিব্রত। সে একবার তার বাবার দিকে তাকাচ্ছে, আরেকবার কন্যার বাবার দিকে তাকাচ্ছে।
আর বাবারা তাকিয়ে আছে উকিল বাবার দিকে।
উকিল বাবা কাগজপত্র পরীক্ষা করে ঘোষণা দিলেন- স্থগিতাদেশ আসলই মনে হচ্ছে। বিয়ে বন্ধ রাখতেই হবে। কিচ্ছু করার নেই।
উকিল বাবার ঘোষণা শোনামাত্রই বর সেন্সলেস।
আর কনে মুখে একটা দুঃখ দুঃখ ভাব ফোটানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছে না। তার মুখে আসলে খুশির আভা।
আমি ভাবছি- এখন কী হবে? বিয়ের খাওয়াটা কি সার্ভ করা হবে? বিয়ে বাড়ির এই অবস্থায় খেতে বসাটা কি সমীচীন হবে? গিফট যেটা এনেছিলাম সেটা তো অলরেডি জমা দিয়ে দিয়েছি। এতো দেখি পুরাই লস প্রজেক্ট।
রাগ হলো ছেলেটার ওপর। রাগ হলো পাত্রীর ওপর।
তোরা বিয়ে স্থগিতই করবি- আরো আগে করলি না কেন? শেষমুহূর্তে এসে এইসব ফাইজলামির মানে কী?
এভাবে পাবলিকের লস করানোর কোনো মানে আছে?
পাবলিক এখন না পারছে খেতে – না পারছে গিফট ফেরত নিতে।
কী করবো, ভাবছি।
এমন সময় বৌয়ের ধমক।
সোফার ওপর না ঘুমিয়ে টিভিটা বন্ধ করে বিছানায় গিয়ে ঘুমাও না কেন?
বুঝলাম- টক শো দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। গতকাল সবগুলো চ্যানেলের টপিকই ছিলো- গাজীপুর নির্বাচনের স্থগিতাদেশ।
আজকাল স্বপ্নগুলাও যা হচ্ছে না- পুরাই কারেন্ট এফেয়ার্স নির্ভর। এক্কেবারে যা তা।
ফেসবুক থেকে সংগৃহিত